৫টি জটিল রোগ | জেনে নিন এবং সাবধান হোন আজই

আমরা যখন কোন রোগে আক্রান্ত হই তার অনেক আগে থেকেই শরীর আমাদের সংকেত দিতে থাকে। কিন্তু তা আমরা অগ্রাহ্য করি। 


এই অসাবধানতার কারণে আমরা বিপদের সম্মুখীন হই। হয়তো কখনো মুক্তি পাই, আবার কখনো মূল্যবান প্রাণটাই হারিয়ে ফেলি। খুব সামান্য সমস্যা বড় আকার ধারণ করতে পারে যদি আমরা শীঘ্রই ব্যাবস্থা গ্রহণ না করি।

Advertisements

সুপ্ত রোগ হতে সাবধান 

জটিল রোগ
প্রেসার পরিক্ষণ


সূচনা

জীবদ্দশায় আমরা যে শারীরিক সমস্যাগুলো অনুভব করি তা হলো মাথাব্যথা, পেটব্যথা, বুকব্যাথা ইত্যাদি।

তখন আমরা নিজেরাই ব্যাবস্থা নিই। বাসায় রাখা কোন ট্যাবলেট বা ফার্মেসী হতে কোন ট্যাবলেট কিনে খেয়েই মনে করি সমস্যার সমাধান করে ফেলেছি। 

কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি সেই সমস্যাগুলোর পেছনেও কোন কারণ থাকতে পারে কি না! কিছু কিছু রোগের আকার চূড়ান্ত পর্যায়ে না পৌঁছা পর্যন্ত সহজে ধরা পড়েনা।

এমন কিছু রোগের লক্ষণ ও কারণ নিয়ে আলোচনা করা হলো:

ওভারিয়ান ক্যান্সার (Ovarian cancer)

এটি এমন একটি রোগ যা চূড়ান্ত পর্যায়ে না পৌঁছা পর্যন্ত ধরা যায় না। শরীরের ভেতর বাস করে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। 


যখন বোঝা যায় তখন আর করার কিছুই থাকেনা। ৪০-৬০ বছরের মহিলারা সাধারণত এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয় এবং মারাও যায়। ()

ওভারিয়ান ক্যান্সারের লক্ষণ

  1. তলপেটে অস্বস্তি বোধ করা।
  2. পেট ফুলে যাওয়া।
  3. গ্যাস জমে বায়ু নির্গমন হওয়া।
  4. পিঠে ব্যাথা।
  5. ওজন হ্রাস।
  6. ক্ষুধামন্দা।
  7. প্রসাব কমে-বেশি হওয়া।
এসব ওভারিয়ান ক্যন্সার এর সাধারণ লক্ষণ। পেট ফুলে যাওয়ায় রোগীকে ৫-৬ মাসের গর্ভবতী মনে হয়। রোগের কারণে ডিম্বাশয় বড় হয়ে যায়। আর রোগী যদি সতর্ক হন তবে সহজেই বিপদ বুঝে নিয়ে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেন।

ওভারিয়ান ক্যন্সার এর কারণ:

  1. চর্বিযুক্ত খাদ্যাভ্যাস।
  2. বন্ধ্যাত্ব।
  3. অকালে মাসিক শুরু হওয়া।
  4. বিলম্বে সন্তান প্রসব।
  5. বিলম্বে মেনোপজ।
  6. বংশীয় জরায়ু রোগ।
  7. স্তন ক্যান্সার।
  8. বৃহদান্রের রোগ। ইত্যাদি

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল গ্রহণের মাধ্যমেই এসব ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।


ওভারিয়ান ক্যন্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা :

MRI, Laparoscopy এবং রক্ত পরীক্ষা করে এই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। ডিম্বাশয়ের সার্জারি করে ডিম্বাকোষ অপসারণ করার মাধ্যমে ক্যান্সার নিরাময় করা যায়। 


সেই সাথে প্রসাব নালীর Cervix এবং চারপাশের আক্রান্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা হয়। এরপর ক্যামোথেরাপি ব্যবহার করার মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করা যায়।

থাইরয়েড ক্যান্সার

এই রোগটি হলে নিতম্বের হাড়ে ব্যাথা হয়। এটাকে কেউ Arthratis বলে ধারণা করতে পারে। কিন্তু এটি থাইরয়েড ক্যান্সার যা ক্ষুদ্র রোগজীবাণু হতে কোষের বৃদ্ধি করে। যার ফলে প্রাথমিক আক্রান্ত অঙ্গ হতে অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে।


বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি নির্নয় করা হয়।

থাইরয়েড অপসারিত করে “

Advertisements

Radioactive Iodine (Radioiodine) Therapy

” প্রয়োগ করা হয় যে ম্যালিগন্যান্সিটা ছড়িয়ে যেতে না পারে। নিতম্বের হাড়ের ব্যাথা সাধারণ করে চুপ করে থাকা একদম অনুচিত।


Bowel Cancer


দিনে চার-পাঁচবার পায়খানা হওয়াটা অস্বাভাবিক। কিন্তু এটা অনেকদিন ধরে চলতে থাকা বা ভালো না হওয়া ভয়ানক। কারণ এটি Bowel cancer বা পেটের ক্যান্সার এর লক্ষণ। ()

এই রোগ মহিলাদের চেয়েও পুরুষদের বেশি দেখা যায়। ৭০-৭৫ বয়সী পুরুষদের এই রোগটি ভীষণ আকারে পৌঁছে। তবে ৪০-৪৫ বছর বয়সে এই রোগের শুরু হতে পারে।

পেটের ক্যান্সার এর লক্ষণ

  1. ঘনঘন পায়খানার চাপ।
  2. পেট পরিষ্কার না হওয়া।
  3. মানসিক চাপ।
  4. মলের সাথে রক্ত যাওয়া।
  5. তলপেটে ব্যাথা।

পেটের ক্যান্সার এর কারণ:

  1. বেশি বেশি চর্বিযুক্ত খাবার খেলে।
  2. আঁশযুক্ত খাবার না খাওয়া।
  3. বংশে এ রোগ থাকলে।

পেটের ক্যান্সার এর চিকিৎসা :

এ রোগের চিকিৎসা হলো সার্জারি ও ক্যামোথেরাপি। তবে লক্ষণ দেখা দেওয়ার প্রাথমিক পর্যায়েই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।


পাকস্থলীতে ক্যান্সার

অধিকাংশ মানুষের এ রোগ হয় বলে শোনা যায়। অতিরিক্ত এসিডিটিতে ভুগলে বুঝতে হবে পেপটিক আলসার বেড়ে গেছে অর্থাৎ পাকস্থলীতে ক্যান্সার হয়েছে। ()

এই রোগে আক্রান্ত হলে শরীর ভিটামিন বি-১২ শোষণ করেনা এবং অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়। এতে করে রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


পাকস্থলী ক্যান্তার এর লক্ষণ

  1. অতিরিক্ত এসিডিটি সমস্যা।
  2. দূর্বলতা, অবসাদ, মস্তিষ্কে হালকাবোধ।
  3. লিভার বেড়ে যাওয়া।
  4. জন্ডিস।
  5. শরীরে ছোট ছোট দানা বের হওয়া।
  6. জটিল পর্যায়ে গেলে হাড় ভাঙ্গা শুরু হওয়া।

পাকস্থলী ক্যান্তার এর চিকিৎসা 


ক্যামোথেরাপি, সার্জারি ও রেডিয়েশন এর মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসা না হলে রোগ নিরাময়ের বা রোগীর জীবনের কোন নিশ্চয়তা থাকেনা।

প্যানক্রিয়াটাইটিস

বলা হয়ে থাকে মদ্যপানে আসক্ত তারা সাধারণত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। কেননা অধিক মদ্যপান প্যানক্রিয়াসে জ্বালা-যন্ত্রণার কারণ হয়। ()

Panereas এর রসে Digestive enzyme থাকে সেটা Deodenum এ চলে যায়। কিন্তু সেটা ডিওডেনাম এ না গিয়ে প্যানক্রিয়াসেই কাজ করা শুরু করে। এ একারণেই প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগ হয় । 

প্যানক্রিয়াটাইটিস এর লক্ষণ

  1. তলপেটে ব্যথা করা।
  2. স্তনের নিচে ব্যাথা করা।
  3. বমি বমি ভাব।

প্যানক্রিয়াটাইটিস চিকিৎসা 


প্যানক্রিয়াটাইটিস আক্রান্ত রোগীকে প্রথমত “Mild analgestic fluid and IV fluid” দেয়া হয়। এবং বিশুদ্ধ পানি পান করানো হয়। ()

কিন্তু অবস্থা জটিল হলে ICU- তে নেওয়ার ব্যাবস্থা করতে হয়।


শেষ কথা

শরীরে যত বড়ো মাপের রোগই বাসা বাধুক না কেন শরীর আমাদের বিপদ সংকেত ঠিকই দেয়। শরীরের প্রতি একটু যত্নশীল হলেই বিপদ এড়িয়ে চলা সম্ভব। তাই আমাদের সুপ্ত রোগগুলো হতে সচেতন থাকা উচিৎ । লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ মতো পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ।
Advertisements

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top