ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রেশনের পরের কাজ হলো ওয়েবসাইটটিকে হোস্টিং করা । অর্থাৎ, ওয়েবসাইটটিকে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত কোন ওয়েব সার্ভারে আপলোড করা বা সংরক্ষণ করা।
হোস্টিং প্রযুক্তি কি ? (What is hosting technology)
বিশ্বজুড়ে বহুসংখ্যক প্রতিষ্ঠান আছে যারা টাকার বিনিময়ে তাদের ওয়েব সার্ভারে কোন ওয়েবসাইটের জন্য প্রয়োজনীয় স্পেস বা জায়গা ভাড়া দেয়। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার সাইটের কনটেন্ট এর উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনানুযায়ী-বিভিন্ন ডিস্ক-স্পেসের হোস্টিং-সেবা নিয়ে-থাকে।
এক্ষেত্রে মাসিক ট্রাফিক-ভলিউম, সংযোগ গতি, ২৪ ঘণ্টার সেবা, প্রতিদিন ডেটা ব্যাকআপ, ব্যান্ডউইথ বা কনটেন্ট বিধি-নিষেধ, ডেটাবেজ অ্যাকসেস ইত্যাদি বিষয়গুলো যাচাই করে নেয়া প্রয়োজন।
সাধারণত যেসব কোম্পানি ডোমেইন নেম নিবন্ধন করে থাকে তাদের প্রায় সকলেই হোস্টিং সেবাও প্রদান করে। এদের অনেকেই বিশেষ হোস্টিং প্যাকেজ সেবাও প্রদান করে যা অনেক সময় অর্থসাশ্রয়ী হয়ে থাকে।
সাইটটি কী ল্যাংগুয়েজ বা কী ধরনের প্রযুক্তি দ্বারা তৈরি হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে সার্ভারের ধরন নির্ধারণ করতে হয়। ওয়েব হোস্ট কোম্পানির কাছ থেকে হোস্টিং প্যাকেজ কিনলে তারা ক্রেতাকে পাসওয়ার্ডসহ একটি কন্ট্রোল প্যানেল প্রদান করে।
অনেক কোম্পানি রয়েছে যারা গ্রাহকের হয়ে নিজেরাই সাইটের তদারকি করে থাকে। অর্থের বিনিময়ের পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানি আছে যারা ফ্রি হোস্টিং সার্ভিস প্রদান করে।
হোস্টিং প্রযুক্তি কত প্রকার ? (How many types of hosting technology)
হোস্টিং প্রযুক্তি দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা-
- উইন্ডোজহোস্টিং (Windows Hosting)
- লিনাক্সহোস্টিং (Linux Hosting)
উইন্ডোজহোস্টিং (Windows Hosting)
যদি ওয়েবসাইটটি ASP (Active Server Page) Programming Language এবং Microsoft SQL Server ডেটাবেজ ব্যবহার করে তৈরি হয়ে থাকে তবে windows server এ হোস্টিং করতে হবে।
লিনাক্সহোস্টিং (Linux Hosting)
যদি ওয়েবসাইটটি PHP এবং MySQL Server ডেটাবেজ ব্যবহার করে তৈরি হয়ে থাকে তবে Linux server এ হোস্টিং করতে হবে। বাংলাদেশে PHP developer এর সংখ্যা বেশি হওয়ায় লিনাক্স হোস্টিং বেশি সুপ্রিয়।
হোস্টিং এর প্রকারভেদ (Types of hosting)
হোস্টিং তিন প্রকারের হয়ে থাকে। যথা-
- শেয়ার্ড হোস্টিং
- ডেডিকেটেট সার্ভার।
- ভিপিএস (ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার)
শেয়ার্ড হোস্টিং (Shared Hosting)
এ হোস্টিং সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রচলিত। সাধারণত হোস্টিং কোম্পানিগুলো যে হোস্টিং এর অফার করে থাকে তাই হচ্ছে শেয়ার্ড হোস্টিং। এতে ব্যবহারকারী তার ইচ্ছেমত কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারে না।
হোস্টিং কোম্পানি যে সফটওয়্যার ব্যবহার করতে দেয় তাই ব্যবহার করতে হয়। একটি নরমাল সাইট চালানোর জন্য শেয়ার্ড হোস্টিং-ই যথেষ্ট। শেয়ারড হোস্টিং এ ডেটবেজ, ই–মেইল, ব্যান্ডউইডথ সব কিছুই সীমিত।
শেয়ার্ড হোস্টিং এর ভিজিটর ধারণক্ষমতা প্রায় চল্লিশ হাজার। তবে যদি সাইট খুব লোড হয় এবং ট্রাফিক বেশি হয় তখন শেয়ার্ড হোস্টিং দিয়ে আর কাজ হয় না। এক্ষেত্রে সাইটটিকে ভিপিএস অথবা ডেডিকেটেড হোস্টিং এ সরিয়ে নিতে হয় ।
হোস্টিং প্রযুক্তি : ডেডিকেটেড সার্ভার (Dedicated Server)
সাইটটি নরমাল স্ট্যাটিক এর বদলে ডায়নামিক হয়, ডেটাবেজ ব্যবহার করা হয়, ভিজিটরের সংখ্যা বেশি হয় এবং অধিক নিরাপত্তার প্রয়োজন হয় তাহলে নিজস্ব একটা ডেডিকেটেড সার্ভারের প্রয়োজন হয়।
ডেডিকেটেড সার্ভার অন্য কেউ শেয়ার করবে না। সব রিসোর্স নিজস্ব। নিজের পছন্দমত হার্ডওয়ার, নেটওয়ার্ক স্পিড, ব্যান্ডউইথের উপর নির্ভর করে একটা ডেডিকেটেড সার্ভারের জন্য প্রতি মাসে কয়েক শত থেকে কয়েক হাজার ডলার খরচ হতে পারে।
এর পরে আবার অপারেটিং সিস্টেম ও অন্যান্য সফটওয়ার ইনস্টল, নিয়মিত সেগুলো ম্যানেজমেন্ট করার ব্যাপারও আছে। ম্যানেজমেন্টের উপর ভিত্তি করে ডেডিকেটেড সার্ভার দুই ধরনের হয়। যথা-
- ম্যানেজড হোস্টিং এবং
- আনম্যানেজড হোস্টিং
হোস্টিং প্রযুক্তি : ম্যানেজড হোস্টিং (Managed Hosting)
হোস্টিং কোম্পানি নিজেই যদি সব অপারেটিং সিস্টেম/সফটওয়্যার ইনস্টল করা এবং দেখাশোনার কাজ করে তবে সেটাকে বলে ম্যানেজড হোস্টিং। তবে এই ম্যানেজ করার জন্য হোস্টিং কোম্পানীকে নির্দিষ্ট ফি দিতে হতে পারে।
হোস্টিং প্রযুক্তি : আনম্যানেজড হোস্টিং (Unmanaged Hosting)
সফটওয়্যার ইনস্টল এবং দেখাশোনার কাজ যদি নিজেকেই সব করতে হয় তাকে বলা হয় আনম্যানেজড হোস্টিং।
ভিপিএস (ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার) : VPS (Virtual Private Server)
ডেডিকেটেড সার্ভার অনেক ব্যয়বহুল। শেয়ার্ড হোস্টিং হলো সবচেয়ে নিচু স্তরের । ডেডিকেটেড সার্ভার সবচেয়ে উঁচুমানের। এর মাঝামাঝি আছে ভিপিএস।
VPS এর পূর্ণরূপ হলো Virtual Private Server। একটা ফিজিক্যাল সার্ভারকে ভার্চুয়ালাইজেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে কয়েকটা ভাগে ভাগ করে ভার্চুয়াল কন্টেইনার স্লাইস বা নোড তৈরি করা হয়।
একেকটা স্লাইস/নোড একেকটা ইন্ডিপেনডেন্ট ডেডিকেটেড সার্ভারের মত কাজ করে। এসব স্লাইসে/নোড সব ধরনের কাজ করা যাবে সিস্টেম বুঝবে না সত্যিকারের ফিজিক্যাল হার্ডওয়্যার নাকি ভার্চুয়াল মেশিন-এ চলছে।
এভাবেই কোম্পানিগুলো কম্পিউটারে উচ্চগতিসম্পন্ন প্রসেসর এবং অনেক মেমরি এবং ডিস্ক যোগ করে একটা মেশিনকে ১৫-২০ টা ভিপিএস হিসেবে ভাড়া দেয়। একটা ভিপিএস এর মাসিক ভাড়া ৫ ডলার থেকে শুরু করে ১০০ ডলার-পর্যন্ত হতে-পারে। মাঝে-মাঝে ১ ডলারেও-ভিপিএস ভাড়া-পাওয়া যায়।
ওয়েবসাইট পাবলিশিং এর জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়াবলি বর্তমানে বিভিন্ন হোস্ট কোম্পানি বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ সার্ভিস দিয়ে থাকে। একটি সিম্পল প্যাকেজের বিভিন্ন বিষয় অর্থাৎ ওয়েবসাইট পাবলিশিং এর জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়াবলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
হোস্টিং প্রযুক্তি : ওয়েব স্পেস (Web Space)
ব্যবহারকারীর জন্য অনলাইন সার্ভারে বরাদ্দকৃত স্টোরেজের পরিমাণ। যদি ওয়েব স্পেস এরপরিমাণ ২০০ মেগা হয় তাহলে এই ২০০ মেগার মাঝেই সব ফাইল রাখতে হবে এর বেশি রাখা যাবে না।
অ্যান্ড্রোয়েডের জন্য সেরা ৫টি ভিপিএন : Top 5 VPNs for Android
হোস্টিং প্রযুক্তি : ব্যান্ডউডথ (Bandwidth)
ব্যান্ডউইডথ হচ্ছে এক মাসে সর্বমোট ডাটা ট্রান্সফারের পরিমাণ। যদি সাইটে রাখা ফাইলের সাইজ ১ মেগাবাইট হয় এবং এই ফাইলটি ১০০ জন ব্যবহারকারী যদি একবার করে ডাউনলোড করে তবে ব্যান্ডউইডথ খরচ হবে 100*1=100 মেগাবাইট। 100-জন ব্যবহারকারী-যদি 2 বার-করে ডাউনলোড করে-তবে-খরচ হবে 100*2=200-মেগাবাইট।
সাইটটি কী পরিমাণ ডাউনলোড করা হবে তার উপর নির্ভর করে ব্যান্ডউইডথ নেয়া উচিত।
হোস্টিং প্রযুক্তি : ইমেইল অ্যাকাউন্ট (E-mail Accounts)
ইয়াহু, জিমেইল, হটমেইল ইত্যাদি থার্ট পার্টি ব্যবহার না করে নিজস্ব ডোমেইন এর আন্ডারে ইমেইল ঠিকানা। সংখ্যা দ্বারা নির্দেশ করে এরকম একাউন্ট কয়টি খোলা যাবে। যেমন উপরের উদাহরণ অনুসারে ইমেইল ঠিকানা খোলা যাবে ১০ টি।
হোস্টিং প্রযুক্তি : মাইএসকিউএল ডাটাবেজ (MySQL Databases)
ডাইনামিক সাইট তৈরি করার জন্য ডেটাবেজ ব্যবহার হয়। সংখ্যা দ্বারা নির্দেশ করে কয়টি ডাটাবেজ ব্যবহার করা যাবে।
হোস্টিং প্রযুক্তি : এফটিপি অ্যাকাউন্টস (FTP Accounts)
FTP হলো একটি টিসিপি/আইপি প্রটোকল যা দুটো কম্পিউটার সিস্টেমের মধ্যে ডেটা স্থানান্তরের সুযোগ করে দেয়। একটি এফটিপি অ্যাকাউন্ট সাধারণত প্রতিটি ব্যবহারকারীর জন্য আলাদা অ্যাকাউন্ট বরাদ্দ করার জন্য সার্ভার বা নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন দ্বারা তৈরি করা হয়।
এটি একটি FTP সার্ভারে ইউজার ম্যানেজমেন্ট, শনাক্তকরণ এবং অনুমোদন পরিসেবা সরবরাহ করে।
হোস্টিং প্রযুক্তি : সাব ডোমেইন (sub-Domains)
একটি ডোমেইন এর আন্ডারে অনেকগুলো সাইট থাকতে পারে। যেমন https://developer.google.com, https//map.google.com ইত্যাদি। এগুলোকে বলে সাব-ডোমেইন। সর্বোচ্চ কয়টি সাব-ডোমেন ব্যবহার করা যাবে তা হোস্টিং কোম্পানি নির্ধারণ করে দেয়।
বাংলাদেশে সেরা হোস্টিং+ডোমেইন কোম্পানি
লাইটস্পিড গতি এবং ২৪/৭ ঘন্টা কাস্টমার সাপোর্ট, স্বল্পমুল্লে হোস্টিং প্রভাইডকারী কোম্পনি হোস্টারপ্ল্যান । বিকাশ দ্বারা পেমেন্ট সাপোর্টেড ।
বিস্তারিত দেখুন এখানে ।
Conclusion:
প্রযুক্তির প্রতিনিয়ত লাগামহীন উন্নতির জন্য দিন দিন ওয়েবসাইট, হোস্টিং, ডোমেইন রেজিস্ট্রি সব কিছুই বৃদ্ধি পাচ্ছে । যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমাদের সবার উচিত প্রযুক্তি সম্পর্কে অবহিত থাকা।
Last line: হোস্টিং প্রযুক্তি কি ? (What is hosting technology)