স্যার আইজাক নিউটন এর জীবনী

স্যার আইজাক নিউটন এর ইতিহাস

আজ থেকে সাড়ে তিনশো বছর আগে ইংল্যান্ডের উথ্থর্প নামে এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মহাবিজ্ঞানী আইজাক নিউটন। দিনটা ছিল ১৬৪২ সালের বড়দিন, ২৫ ডিসেম্বর । নিউটনের বাবা এক গরিব কৃষক। আইজাকের জন্মের কিছুদিন আগে তিনি মারা যান। পয়সাকড়িও বিশেষ রেখে যাননি। তাই বাড়ির সবার ইচ্ছে ছিল অল্পস্বল্প লেখাপড়া করুক তাঁদের ছেলে, আর একটু বড় হলেই চাষের কাজ 

দেখুক। কিন্তু ছেলের তেমন ইচ্ছে নয়। প্রথমে নিউটন গ্রামের স্কুলেই ভরতি হলেন। কিছুদিন সেখানে লেখাপড়া করে চলে গেলেন কাছাকাছি একটা গ্রামের স্কুল। তখনকার স্কুলে অন্য সব বিষয়ের মধ্যে লাতিন ভাষার উপর জোর দেওয়া হতো বেশি। ওখানকার পড়া শেষ হলে উনিশ বছর বয়সে নিউটন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। ভরতি হন কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে।

Advertisements

কিশোর বয়সে লেখাপড়ায় বিরাট প্রতিভার কোনো পরিচয় নিউটন দেননি। বরং ছোটখানো যন্ত্রপাতি নিয়ে নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষা করতেই তিনি বেশি ভালবাসতেন। ছোটবেলাতেই নানা জিনিস তৈরি করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলেন। এই সবের মধ্যে ছিল একটা সূর্যঘড়ি, একটা জলঘড়ি আর একটা হাওয়াকল। এ ছাড়া আকাশ দেখতে দেখতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতেন তিনি। অনেক কিছুই তাঁকে অবাক করত। অনেক কিছুরই উত্তর খুঁজে পেতেন না। পাবার চেষ্টা করতেন।

ট্রিনিটি কলেজে পড়তে পড়তে বিজ্ঞান আর অঙ্কশাস্ত্র তাঁর খুব ভালো লেগে যায়। জ্যোতির্বিদ্যা সম্বন্ধে তাঁর কৌতূহল আগে থেকেই ছিল। এবার সঠিক পথে সেই বিষয়ের চর্চা শুরু হল। সেই সঙ্গে গণিতশাস্ত্র ও ভালোভাবে শিখতে লাগলেন। গ্রহ নক্ষত্র সম্বন্ধে, তাদের গতি সম্বন্ধে, তাদের প্রকৃতি সম্বন্ধে প্রচুর পড়াশুনা করতে লাগলেন নিউটন। আর এই সময় আগেকার বড় বড় বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের কথা আর তাঁদের রচনাও পড়তে লাগলেন তিনি।

১৬৬৫ সালে নিউটন গ্রাজুয়েট হন—তার মানে বি.এ পাশ করেন। ওই বছরই প্লেগ মহামারীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে নিউটন গ্রামের বাড়িতে চলে যান। দুবছর

সেখানে থেকেই নিজের খেয়ালে পড়াশুনা করতে থাকেন। শুধু পড়াশুনাই নয়, এই সময় তিনি প্রায়ই গভীর চিন্তায় ডুবে যেতেন। নিউটন নিজেই পরে বলেছেন যে, এ দু বছরেই তাঁর ক্ষমতা সবচাইতে বেশি প্রকাশ পেয়েছিল।

এই সময়ই একদিন তিনি যখন বাগানে বসে নানা কথা ভাবছেন, তখন হঠাৎ লক্ষ্য করলেন একটা আপেল টুপ করে গাছ থেকে মাটিতে এসে পড়ল। অমন তো কতই পড়ে, রোজই পড়ে। কিন্তু সেদিন নিউটনের মাথায় ঢুকল এক চিন্তা। কেন আপেলটা নিচে পড়ল?

Advertisements

কেন সব জিনিস অমন করে নিচেই পড়ে সবসময়? ভাবতে ভাবতে বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র নিউটনের মনে হল নিশ্চয় এমন কোনো শক্তি কোথাও আছে যা সব বস্তুকে নিচের দিকে টানে। এ থেকেই তিনি আবিষ্কার করলেন অভিকর্ষ নামের নিয়ম বা সূত্র। নিউটনই প্রথম জানালেন, সমস্ত বস্তুই একে অপরকে সবসময়ই আকর্ষণ করছে।

তিনি আরও বললেন যে, পৃথিবীর একটা নিজস্ব স্বাভাবিক আকর্ষণ আছে। তাছাড়া সব বস্তুকে পৃথিবী তার কেন্দ্রের দিকে টানছে। নিউটন আরও একটা নিয়ম আবিষ্কার করলেন যার নাম মহাকর্ষ। সবাই এটা জানত যে, সৌরজগতের গ্রহগুলো সূর্যের চারদিকে ঘুরছে, আবার উপগ্রহ ঘোরে গ্রহের চারদিকে। কিন্তু কেউ জানত না কেন ঘোরে গ্রহ উপগ্রহগুলো। নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র বলল যে, নক্ষত্র ও গ্রহ-উপগ্রহগুলোর মধ্যে একটা অদৃশ্য শক্তি আছে। সেই শক্তির জন্যেই এরা এ ওর চারদিকে ঘোরে, ছিটকে দূরে চলে

যায় না ওই অদৃশ্য শক্তির জন্যেই। ক্রমে ক্রমে নিউটনের খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। কেমব্রিজে গণিতশাস্ত্রের অধ্যাপক তিনি আগেই হয়েছিলেন।

জাতীয় পরিচয়পত্র

পরে রয়াল সোসাইটির সদস্য করা হয় তাঁকে। এ এক মস্তবড় সম্মান। ১৭০৫ সালে ইংল্যান্ডের রানি অ্যান তাঁকে ‘নাইট’ উপাধি দেন। সেই থেকে তাঁর নাম হয়ে গেল স্যার আইজাক নিউটন।

নিউটনের অভিকর্ষ আর মহাকর্ষ আবিষ্কার একটা বিরাট ঘটনা। এই আবিষ্কার বিজ্ঞানকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছিল। সেজন্য অনেকে তাঁকে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক বলেন। তবে নিউটন ওখানেই থেমে থাকেননি। তারপরে তিনি আলোকবিদ্যা ও বলবিদ্যা নিয়ে অনেক গবেষণা করেন, অনেক নতুন তথ্য জানতে পারেন। তাঁর সারা জীবনের আবিষ্কার আর গবেষণার কথা তিনি লিখে গেছেন ‘প্রিন্সিপিয়া’ নামে একখানা বইয়ে।

বিজ্ঞানীরা এই বইটিকে খুব শ্রদ্ধা করেন। আলোবিদ্যা সম্বন্ধে তিনি যা-কিছু জানতে পেরেছিলেন তা লেখা আছে ‘অপটিকস’ নামে তাঁর আর একখানি বইয়ে।

এই মহাবিজ্ঞানী মারা যান পঁচাশি বছর বয়সে ১৭২৭ সালের ২০ মার্চ লন্ডন শহরে। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের একজন তিনি।

Advertisements

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top