স্তন ক্যান্সার | সচেতনতাই প্রতিরোধ সম্ভব

২৫ বছর বয়সী হাজেরা বেগম পোশাককর্মী। একদিন নিজের বাম স্তনে একটি ছোট চাকা অনুভব করেন। বয়স কম, এক শিশুসন্তানের মা, এ বয়সে কি আর খারাপ কিছু হবে? 


Advertisements

তাই একজনের পরামর্শে তিনি হোমিওপ্যাথি ওষুধ খান ছয় মাস। এর মধ্যে স্তনের ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে, অকালেই মারা যেতে হয় তাঁকে।


স্তন ক্যান্সার | সচেতনতাই প্রতিরোধ সম্ভব

স্তন ক্যান্সার | সচেতনতাই প্রতিরোধ সম্ভব

৭০ বছর বয়স্ক কমলা বেগম স্তনের চাকার কথা লজ্জায় কাউকে বলেননি। কয়েক দিন পর বগলেও ঢাকা দেখা দেয়। 


তাঁদের রক্ষণশীল পরিবার। অনেক দেরিতে চিকিৎসকের কাছে যখন তিনি গেলেন, তখন ক্যানসার শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে অনেকখানি। মৃত্যুর আগে অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিল তাঁকে।

Advertisements


এদিকে ৪৫ বছর বয়স্ক আরিফ রহমান সচেতন ব্যাংক কর্মকর্তা। স্তনের একটি অংশ ফুলে গেলে তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি পুরুষদেরও স্তন ক্যানসার হতে পারে! সেটিই ধরা পড়ল। 


এবার স্কুলশিক্ষক সীমার কাহিনি বলা যাক। স্তনের ত্বকের পরিবর্তন ও কুঁচকে যাওয়া দেখে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছিলেন তিনি। 


একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁর রোগ ধরা পড়েছিল। সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপির পর এখন হরমোন থেরাপি নিচ্ছেন। 


প্রায় ১০ বছর ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েও স্বাভাবিক জীবনযাপন করে যাচ্ছেন তিনি, চাকরিও করছেন। এখন তিনি অন্যদের সাহস দিয়ে বেড়ান।


আরো পড়ুন…  যেসব ক্যান্সারে নারীরা বেশি আক্রান্ত হন

সতর্কবার্তা

২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমাদের দেশে নারীদের ক্যানসারের ১৯ শতাংশই হলো স্তন ক্যানসার, মানে ১ নম্বরে ।


নারী-পুরুষ মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে ৩ নম্বরে, মানে মোট ক্যানসারের ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। 


দেশে ১৩ থেকে ১৫ হাজার রোগী নতুন করে বছরে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। আরও ভয়াবহ বিষয় হলো, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগের বয়স ১৫ থেকে ৪৫ বছর। 


মানে কর্মক্ষম নারীগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশ এই রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। আরেকটি পরিসংখ্যান বলছে, দেশে ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়স্ক নারীর অকালমৃত্যুর ২১ শতাংশ হচ্ছে স্তন ক্যানসারের কারণে।


২০১৭ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি গবেষণায় দেখা যায়, অধিকাংশ শনাক্ত রোগীর বয়স ২৫ থেকে ৫০ বছর। এক-তৃতীয়াংশ রোগী রোগের চতুর্থ পর্যায়ে এসে শনাক্ত হয়েছেন। 


আর স্তন ক্যানসারের সবচেয়ে খারাপ ধরন টিএনবিসি মোট ক্যানসারের প্রায় ২০ শতাংশের বেশি, যা আন্তর্জাতিক পরিমাপের তুলনায় বেশি। 


তার মানে আমাদের দেশে অপেক্ষাকৃত কম বয়সে বেশি জটিল ধরনের স্তন ক্যানসার রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে, যা এভাবে বাড়তে থাকলে সামাল দেওয়া মুশকিল হবে।


কতটুকু জানেন স্তন ক্যান্সার বিষয়ে?

বাংলাদেশে পরিচালিত জরিপ বলছে, মাত্র এক তৃতীয়াংশ নারী স্তন ক্যানসার বিষয়ে আগে থেকে কিছুটা জানেন। 


২০ শতাংশ নারীর এই ক্যানসার সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। ৭০ শতাংশ নারী জানেন না স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিগুলো কী। 


১০ শতাংশ নারীর ধারণা তাদের স্তন ক্যানসার হয়েছে আগের কোনো পাপের কারণে। মাত্র ৬ শতাংশ নারী ম্যামোগ্রাফির নাম জানেন। 


৩০ শতাংশ নারী স্তন ক্যানসার নিরীক্ষণ (স্ক্রিনিং) সম্পর্কে শুনেছেন; কিন্তু কীভাবে করাতে হয় তা জানেন না।


এখনই সময় স্তন ক্যান্সার নীতিমালা

একটি গণমুখী জাতীয় স্তন ক্যানসার নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। এর লক্ষ্য হবে—

  1. স্তন ক্যানসারকে একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ হিসেবে আখ্যায়িত করে সচেতনতা বাড়ানো;
  2. ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করা;
  3. ঝুঁকিপূর্ণ রোগীকে ব্যাপক গণ-স্ক্রিনিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা; 
  4. সামাজিক ও পারিবারিক কুসংস্কারের মোকবিলায় গণসচেতনতা বাড়ানো;
  5. চিকিৎসা ও মানসম্মত প্যাথলজি পরীক্ষার সুযোগ সহজলভ্য করা। 


আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। এ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে স্তন ক্যানসারের রোগীর সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব হবে।


ডা. আলী আসগর চৌধুরী

সহকারী অধ্যাপক, 

অনকোলজি ও রেডিওথেরাপি বিভাগ, 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল


Source 


  1. https://amp.cancer.org/cancer/breast-cancer.html
  2. https://www.cdc.gov/cancer/breast/basic_info/what-is-breast-cancer.htm
  3. https://www.cancerresearchuk.org/about-cancer/breast-cancer

স্তন ক্যান্সার | সচেতনতাই প্রতিরোধ সম্ভব

Advertisements

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top