সাইক্লোন সৃষ্টির কারণ ও করণীয়
যেহেতু সাইক্লোন সৃষ্টি হয় গভীর সমুদ্রে, তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সহজসাধ্য নয়। তবে যে দুটি কারণ মূলত সাইক্লোন সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা হলো নিম্নচাপ এবং উচ্চ তাপমাত্রা।
সাইক্লোন সৃষ্টির কারণ
সাধারণত সাইক্লোন তৈরি হতে সাগরের তাপমাত্রা ২৭° সেলসিয়াসের বেশি হতে হয়। দুর্ভাগ্যবশত বঙ্গোপসাগরে প্রায় সারা বছরই এই তাপমাত্রা বিদ্যমান থাকে।
সমুদ্রের উত্তপ্ত পানি বাষ্পীভবনের ফলে উপরে উঠে যখন জল কণায় পরিণত হয় তখন বাষ্পীভবনের সুপ্ত তাপটি বাতাসে ছেড়ে দেয়। সে কারণে বাতাস উত্তপ্ত হয় এবং বাষ্পীভবন আরো বেড়ে যায়, ফলে বায়ুমণ্ডল অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি করে।
Advertisements
নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে আশেপাশের বাতাস সেখানে ছুটে আসে, যা বাড়তি তাপমাত্রার কারণে ঘুরতে ঘুরতে উপরে উঠতে থাকে এবং সাইক্লোন সৃষ্টি করে। এ প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের বেগ অনেক বেশি হয়।
তবে বাতাসের বেগ ঘণ্টায় ৬৩ কিলোমিটার বা তার চাইতে বেশি হলে সেটাকে সাইক্লোন হিসেবে গণ্য করা হয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সবচেয়ে শক্তিশালী সাইক্লোন হয়েছিল ১৯৯১ সালে। তখন বাতাসের বেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার।
সাইক্লোন এর সময় করণীয়
এখন প্রশ্ন হলো, সাইক্লোনের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার কি কোনো উপায় আছে? আর সাইক্লোন হলে আমাদের করণীয়ই বা কী? সাইক্লোন অত্যন্ত শক্তিশালী। একটি দুর্বল সাইক্লোনও শক্তিতে মেগাটন শক্তির কয়েক হাজার পারমাণবিক বোমার সমান।
তাছাড়া যেহেতু সাইক্লোন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তাই এটি প্রতিরোধ করা প্রায় অসাধ্য। সম্প্রতি আমেরিকাতে ঝড়ের সময় সিলভার আয়োডাইড (AgI) নামক রাসায়নিক দ্রব্য বাতাসে ছড়িয়ে পানিকে শীতল করে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ কমানোর চেষ্টা করা হলেও নানা ধরনের সীমাবদ্ধতার কারণে এটি ঠিকভাবে কাজ করেনি।
এছাড়া সাগরে তেল বা অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য ছিটিয়ে বাষ্পীভবন কমিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার চিন্তাভাবনা করা হয়। তবে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করা কখনোই বাস্তবভিত্তিক নয়। তাহলে কী করা যেতে পারে?
আমাদের ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস প্রক্রিয়া জোরদার করে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর এবং সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের আরেকটি মারাত্মক দিক হলো জলোচ্ছ্বাস। তাই ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকায় উঁচু করে মজবুত আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করতে হবে।
ঘূর্ণিঝড়েরর সময় নিচু এলাকায় বসবাস করা মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। জলোচ্ছ্বাস ঠেকানোর জন্য উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ তৈরি করা যেতে পারে। সাথে সাথে সেখানে প্রচুর গাছপালা লাগিয়েও ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব।
Conclusion:
ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার জন্য যথাযথ পূর্বপ্রস্তুতি নিতে হবে। বাংলাদেশে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের যৌথ উদ্যোগে ইতোমধ্যেই সাইক্লোন প্রস্তুতি কার্যক্রম চালু আছে।
এর আওতায় প্রায় ৩২০০০ স্বেচ্ছাসেবী উপকূলীয় এলাকায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৭ সালে সাইক্লোন ‘মোরা’ বাংলাদেশকে আঘাত করেছিল, সময়মতো যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ায় তখন মাত্র ৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল।
সাইক্লোন সৃষ্টির কারণ ও করণীয়
Advertisements