সত্যবাদিতা হলো সত্য কথা বলার অভ্যাস । সত্যবাদিতা একটি মহৎ গুণ । অসত্য, অবাস্তব, মিথ্যাচার এবং অপ্রকৃত ঘটনার বিপরীত শব্দ সত্যবাদিতা ।
সত্যবাদিতা
সত্যবাদিতার পরিচয়
সত্যবাদিতার আরবি প্রতিশব্দ আস-সিদ্ক। সাধারণভাবে সত্য কথা বলার অভ্যাসকে সত্যবাদিতা বলা হয়।
অন্যকথায় বাস্তব ও প্রকৃত ঘটনা বা বিষয় প্রকাশ করাকে সিদ্ক বলা হয়। অর্থাৎ কোনো ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কে কোনোরূপ পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা বিকৃতি ব্যতিরেকে হুবহু বা অবিকল বর্ণনা করাই হলো সিদ্ক।
যে ব্যক্তি সত্যবাদী তাকে বলা হয় সাদিক (আরবি)। আর মহাসত্যবাদীকে সিদ্দিক (আরবি) বলে।
সত্যবাদিতার বিপরীত শব্দ কী ?
সত্যবাদিতার বিপরীত হলো মিথ্যাচার। কোনো ঘটনা বা বিষয়কে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হলো মিথ্যাচার। মিথ্যাচারকে আরবিতে আল কাযিব বলে। যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে তাকে বলা হয় কাযিব । আর চরম মিথ্যাবাদী হলো কায্যাব।
আরও পড়ুন… কোরআনের আলোকে জ্বিনের সৃষ্টি এবং জ্বিনের অস্তিত্ব
সত্যবাদিতার গুরুত্ব
সত্যবাদিতা একটি মহৎ গুণ। মানবজীবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম। কথা-বার্তা কাজ-কর্ম ও আচার আচরণে সত্যবাদিতা ও সততা অবলম্বন করলে মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করতে পারে।
সদা সর্বদা সত্য, সুন্দর ও সঠিক কথা বলা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ। তিনি বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا
অর্থ: “হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও সঠিক কথা বলো।” (সূরা আল–আহযাব, আয়াত ৭০)
মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী মুমিনগণের একটি অন্যতম নিদর্শন হলো তাঁরা সত্যবাদী। জীবনের সর্বাবস্থায় তাঁরা সততা ও সত্যবাদিতার চর্চা করেন।
শুধু নিজে নিজে সত্য বলার চর্চা করলেই হবে না বরং সত্যবাদীদের সাথে সুসম্পর্ক থাকতে হবে। এতে সমাজে সার্বিকভাবে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ
“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও সত্যবাদীদের সাথি হও।” (সূরা আত-তওবা, আয়াত ১১৯)
প্রকৃত মুমিন অবশ্যই সত্যবাদী হবেন। আমাদের প্রিয়নবি (স.) ছিলেন সত্যবাদিতার মূর্ত প্রতীক। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তিনি সততা ও সত্যবাদিতার চর্চা করেছেন।
তাঁর সাথি হযরত আবু বকর (রা.) ও ছিলেন অত্যন্ত সত্যবাদী। তাই হযরত আবু বকর (রা.) কে বলা হয় সিদ্দিক। যে ব্যক্তি সত্য কথা বলে তাকে সবাই ভালোবাসে, বিশ্বাস করে।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি মিথ্যাবাদী তাকে কেউ ভালোবাসে না, সম্মান করে না। বরং সকলেই তাকে ঘৃণা করে। কেননা মিথ্যা বলা মহাপাপ। এটি সকল পাপের মূল। মিথ্যাবাদীর উপর আল্লাহ তায়ালা চরম অসন্তুষ্ট।
সত্যবাদিতার প্রভাব ও পরিণতি
মানবজীবনে সত্যবাদিতার প্রভাব সীমাহীন। সত্যবাদিতা মানুষকে নৈতিক চরিত্র গঠনে সাহায্য করে। পাপ ও অশালীন কাজ থেকে রক্ষা করে।
সত্যবাদী ব্যক্তি কোনোরূপ অন্যায় ও অত্যাচার করতে পারে না। একটি হাদিসে আমরা এর প্রমাণ পাই।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, একদা জনৈক ব্যক্তি মহানবি (স.) এর নিকট এসে বলল, ‘আমি চুরি করি’ মিথ্যা বলি এবং আরও অনেক খারাপ কাজ করি। সবগুলো খারাপ কাজ একসঙ্গে ত্যাগ করা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। আপনি আমাকে যেকোনো একটি খারাপ কাজ ত্যাগ করতে নির্দেশ দিন।’
মহানবি (স.) বললেন “তুমি মিথ্যা বলা ছেড়ে দাও।” লোকটি বলল এ তো খুব সহজ কাজ। মহানবি (স.)- এর কথামতো লোকটি মিথ্যা বলা ছেড়ে দিল।
পরে দেখা গেল যে, মিথ্যা বলা ত্যাগ করায় তার পক্ষে আর কোনো খারাপ কাজ করা সম্ভব হলো না। সে সবগুলো খারাপ কাজ ছেড়ে দিল।
কেননা সে ভাবল, কেউ তাকে অপরাধের কথা জিজ্ঞেস করলে সে মিথ্যা বলতে পারবে না। বরং স্বীকার করতে হবে। এতে সে লজ্জিত হবে ও শাস্তি ভোগ করবে।
এভাবে শুধু মিথ্যা ত্যাগ করায় লোকটি সকল খারাপ কাজ থেকে মুক্তি পেল। সত্যবাদিতা এভাবেই মানুষকে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে সাহায্য করে।
সত্যবাদীতার পরিণতি হলো সফলতা ও মুক্তি। যেমন বলা হয়, “সত্যবাদিতা মুক্তি দেয়, আর মিথ্যা ধ্বংসে ডেকে আনে।”
সত্যবাদিতার ফলে মানুষ দুনিয়াতে সম্মানিত হয়, মর্যাদা লাভ করে। আর আখিরাতে সত্যবাদিতার প্রতিদান হলো জান্নাত। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
قَالَ اللّهُ هَذَا يَوْمُ يَنفَعُ الصَّادِقِينَ صِدْقُهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
অর্থ : “এ তো সেই দিন, যে দিন সত্যবাদীদের তাদের সত্যবাদিতা বিশেষ উপকার দান করবে। তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত।” (সূরা আল –মায়িদা আয়াত ১১৯)
মহানবি (স.) বলেন “তোমরা সত্যবাদী হও। কেননা সত্য পুণ্যের পথ দেখায়। আর পুণ্য জান্নাতের পথে পরিচালিত করে।” (বুখারি ও মুসলিম)
অন্য একটি হাদিসে আছে, একবার মহানবি (স.)- কে জিজ্ঞেস করা হলো, কী আমল করলে জান্নাতবাসী হওয়া যায়? তিনি উত্তরে বললেন “সত্য কথা বলা।” (মুসনাদে আহমাদ)
শেষ কথা
সত্যবাদিতা নৈতিক গুণাবলির অন্যতম প্রধান গুণ। এটি মানুষকে প্রভূত কল্যাণ ও সফলতা দান করে। সুতরাং আমাদের সকলেরই সত্যবাদী ও সত্যাশ্রায়ী হওয়া একান্ত কর্তব্য।