মিলুর ইচ্ছেপূরণ (ছোটগল্প )
![]() |
দৃষ্টি তার দিগন্তে অথবা মুক্ত প্রান্তরে |
মিলু…মিলু….এই মিলু কোথায় তুই। মিলু….ওমা! তুই এখানে বসে, আর আমি সারাবাড়ি খুঁজে মরছি। আমাকে ডাকছো মা? চটপটা কান্না মুছে স্বাভাবিক হয়ে উত্তর দেয় সে।
শুধু ডাকছি! আমি যে হণ্যে হয়ে খুঁজে মরছি তা কি তুই জানিস?
ওহ্, কিছু হয়েছে মা, ডাকছো কেন?
তোর ছোটমামা এসেছে। মিষ্টি হেসে মাকে জড়িয়ে ধরে সে। খুশিতে নাকি কান্না ঢাকতে সে জানেনা। শুধু জানে মার বুকে শান্তি আছে। যা তার ভীষণ প্রয়োজন ছিল সে সময়।
মামার কোলে বসে নির্ভরতা পায় মিলু। ঠিক মায়ের কোলের মতোই প্রায়। শুধু মায়ের কোলে মায়া বেশি মনে হয় আর এই কোলে জড়িয়ে রেখেছে ভরসার দুটো হাত। যা ঢালের মতো।
বাবার কোলটা খুব কমই পেয়েছে মিলু। অভাবী বাবার আঁধারে বাড়তে দেখা কন্যা সে। মা আর মামার সান্নিধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই বেড়ে উঠে। শুধু চাহিদাগুলোই বড্ড বেহায়া। মিটতেই চায় না। সুপ্ত থাকে অনেক ইচ্ছে।
” জানিস মিলু তুই যেদিন দুনিয়ায় আসিস, তোর মা খুব অসুস্থ। সবাই তোর মাকে নিয়ে ছুটোছুটি করছে। কে যেন তোয়ালে দিয়ে মুড়ে তোকে আমার কোলে দিয়েছিল। কেমন কাঁপুনি আসছিল আমার। একদিকে বুবুর চিন্তা আরেকদিকে তোর। কি করব আমি! তোর দিকে এক ধ্যানে চেয়ে আছি। মনে হলো তুই দেখতে তোর বাবার মতো, পরে মনে হলো না তুই দেখতে বুবুর মতো।
মামার বুকের সাথে লেপ্টে থেকে মনোযোগ দিয়ে শুনছে সব। ভাবছে তাকে জন্ম হতেই যুদ্ধ করে বাঁচতে হয়েছে। ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। “মনের ভালো ইচ্ছেগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে তাইনা মামা। বাধা আসলেও থামা যাবেনা।”
মিলুর কথায় হেসে উঠে মুরাদ। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘ হ্যাঁ রে পাকাবুড়ি ‘। তবে তুই আজ হতে আবার ছড়া লেখবি, বই পড়বি এবং বড়ো হওয়ার স্বপ্ন দেখবি কেমন? মিলু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মামাকে।
আজ হতে তোর কোন ইচ্ছে অপূর্ণ থাকবেনা। তবে তোর মধ্যও যেন তীব্র ইচ্ছেশক্তিটা সক্রিয় দেখি আমি।
আকাশে আজ অনেক তারা তাইনা বুবু, আর সব কেমন উজ্জ্বল? হুম তোর মনের মতোই পরিপূর্ণ। হুম বুবু চাকরিটা পেয়ে কত শান্তি পেয়েছিলাম জানো? তা আর আমার চেয়ে বেশি কে জানে বল! তবে মিলুকে এত লাই দিসনা।
হুম, আরও কি কি ইচ্ছে আছে তোর? নিজের জন্যও ভাবিস কিছু। রাখোতো ওসব ভাইজান ফিরবে কখন? এড়িয়ে যাসনা। আমরা টাকার অভাবে উচ্চশিক্ষিত হতে পারিনি। তাই বলে মূর্খ তো নয়। ভাইজান চলে আসছে চলো ভাত দাও।
মামার আঙ্গুলটাকে ভরসা করে এত মানুষের ভিড়েও স্বাচ্ছন্দ্যে আছে মিলু। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতী মেয়ে মনে হচ্ছে। একটা বইয়ের স্টলের সামনে গিয়ে দাড়ায় তারা।
“মিলু এইযে এখানে এত বই সব তোর পড়ার উপযোগী। তোর মন যতটা চায় ততটাই নিবি তুই”।
দৌড়ে পা বাড়ায় মিলু। ঠোঁট জুড়ে তার আনন্দের জোয়ার।
দাড়িয়ে হাসে মুরাদ। যেন পৃথিবীটা জয় করে ফেলেছে সে। চটপটে মিলুকে দেখে তাকে নিয়ে ভাবে। মেয়েটা সবে পঞ্চম শ্রেণীতে। বইয়ের প্রতি ভীষণ আগ্রহ। কিছুদিন আগেও একটা “ছড়ার খাতা” হারিয়ে যাওয়াই উঠানে গড়াগড়ি দিয়েছিল। নতুন সব পেয়ে একদম পরিপূর্ণ সে। ছুটে বেড়াচ্ছে বইয়ের রাজ্যে। নতুন উদ্যমে নতুনত্বের পথে।