মিলুর ইচ্ছেপূরণ (ছোটগল্প )

মিলুর ইচ্ছেপূরণ (ছোটগল্প )

সুমাইয়া মীম

Advertisements
ছোটগল্প
দৃষ্টি তার দিগন্তে অথবা মুক্ত প্রান্তরে

উঠানের আম গাছটার তলায় ভাবলেশহীন বসে আছে সে। দৃষ্টি তার দিগন্তে অথবা মুক্ত প্রান্তরে। দূর হতে বোঝার উপায় নেই। মাঘের শেষ সপ্তাহ । বসন্ত আসতে চলেছে। মাঠে মাঠে এখুনি পৌঁছে গেছে তার আগমনী বার্তা। 

সদ্য সবুজ অলংকৃত মাঠে দখিনা সমীর দোল দিতে শুরু করেছে। যা দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। মাঘের মৃদুমন্দ বাতাস আর রৌদ্রময় পরিবেশ বোধহয় কবি স্বত্তাকে সচেতন করার জন্য যথেষ্ট। আর ছড়াপ্রেমীদের মনের পরতে পরতে হয়তো শব্দের ফোয়ারা তৈরি করে। 

তারও আজ খুব ইচ্ছে করে শব্দের বুনন দিতে, বসন্ত কে আহ্বান করে একটা ছড়া বাঁধতে। কিন্তু কবি মনের চারপাশে যে অভিমান বলয় সৃষ্টি হয়েছে তা ভেদ করা খুব শক্ত। নাহ্, সে আর ছড়া বাঁধবে না, কখনোই না। প্রকৃতি যতই তাকে জ্বালাতন করুক তবুও না। মুখ ঢেকে কাঁদতে থাকে সে।

মিলু…মিলু….এই মিলু কোথায় তুই। মিলু….ওমা! তুই এখানে বসে, আর আমি সারাবাড়ি খুঁজে মরছি। আমাকে ডাকছো মা? চটপটা কান্না মুছে স্বাভাবিক হয়ে উত্তর দেয় সে।

শুধু ডাকছি! আমি যে হণ্যে হয়ে খুঁজে মরছি তা কি তুই জানিস?

ওহ্, কিছু হয়েছে মা, ডাকছো কেন?

Advertisements

তোর ছোটমামা এসেছে। মিষ্টি হেসে মাকে জড়িয়ে ধরে সে। খুশিতে নাকি কান্না ঢাকতে সে জানেনা। শুধু জানে মার বুকে শান্তি আছে। যা তার ভীষণ প্রয়োজন ছিল সে সময়। 


মেয়ের এমন ব্যবহারে হকচকিয়ে যান মেহনাজ বেগম। যদিও এমন সব মূহুর্তগুলো তার চেনা। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন মেয়েটাকে তার বড্ড অচেনা মনে হচ্ছে। বুকের ভেতরটা কেমন হুহু করে উঠে। দূরে কোন নাম না জানা পাখির একঘেয়ে ডাকে ভীষণ বিরক্ত হন তিনি।

মামার কোলে বসে নির্ভরতা পায় মিলু। ঠিক মায়ের কোলের মতোই প্রায়। শুধু মায়ের কোলে মায়া বেশি মনে হয় আর এই কোলে জড়িয়ে রেখেছে ভরসার দুটো হাত। যা ঢালের মতো।

বাবার কোলটা খুব কমই পেয়েছে মিলু। অভাবী বাবার আঁধারে বাড়তে দেখা কন্যা সে। মা আর মামার সান্নিধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই বেড়ে উঠে। শুধু চাহিদাগুলোই বড্ড বেহায়া। মিটতেই চায় না। সুপ্ত থাকে অনেক ইচ্ছে। 


নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর হাহাকার এর গল্প গুলোও সুপ্ত। তবে সামান্য সফলতার গল্পও তারা ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে হেসে উঠতে পারে।

” জানিস মিলু তুই যেদিন দুনিয়ায় আসিস, তোর মা খুব অসুস্থ। সবাই তোর মাকে নিয়ে ছুটোছুটি করছে। কে যেন তোয়ালে দিয়ে মুড়ে তোকে আমার কোলে দিয়েছিল। কেমন কাঁপুনি আসছিল আমার। একদিকে বুবুর চিন্তা আরেকদিকে তোর। কি করব আমি! তোর দিকে এক ধ্যানে চেয়ে আছি। মনে হলো তুই দেখতে তোর বাবার মতো, পরে মনে হলো না তুই দেখতে বুবুর মতো। 


ফোলা ফোলা চোখে পিটপিট করে চাইতে চাইতে এক সময় ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে দিলি। সেদিনও তোর বাবা কাজের পিছনে। ওইযে অর্থের তাড়না, পেটের তাড়না। তোর কান্না দেখে ঘাবড়ে গেলাম। দিশেহারা হয়ে কাকে যেন গিয়ে বলেছিলাম। ‘ আমার মাকে তোমরা একটু দুধ খাওয়াও আল্লাহর দোহায় লাগে।’ 

জানিনা কার বিবেক জাগ্রত হয়েছিল, কার দয়া হয়েছিল,তোকে কে খাইয়েছিল তাও জানিনা তবে খাইয়েছিল। জীবনে চলার পথে যখনই দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাবে। দয়াময় আল্লাহ নিশ্চয় কাউকে না কাউকে তোর সাহায্যকারী হিসেবে পাঠাবেনই। 

‘মনে রাখবি খারাপ সময় সামলানোর প্রস্তুতি যেন আগে থেকেই থাকে।’ তবেই জীবন নামক যুদ্ধক্ষেত্রে টিকে থাকতে পারবি।”

মামার বুকের সাথে লেপ্টে থেকে মনোযোগ দিয়ে শুনছে সব। ভাবছে তাকে জন্ম হতেই যুদ্ধ করে বাঁচতে হয়েছে। ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। “মনের ভালো ইচ্ছেগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে তাইনা মামা। বাধা আসলেও থামা যাবেনা।”

মিলুর কথায় হেসে উঠে মুরাদ। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘ হ্যাঁ রে পাকাবুড়ি ‘। তবে তুই আজ হতে আবার ছড়া লেখবি, বই পড়বি এবং বড়ো হওয়ার স্বপ্ন দেখবি কেমন? মিলু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মামাকে।

আজ হতে তোর কোন ইচ্ছে অপূর্ণ থাকবেনা। তবে তোর মধ্যও যেন তীব্র ইচ্ছেশক্তিটা সক্রিয় দেখি আমি।

আকাশে আজ অনেক তারা তাইনা বুবু, আর সব কেমন উজ্জ্বল? হুম তোর মনের মতোই পরিপূর্ণ। হুম বুবু চাকরিটা পেয়ে কত শান্তি পেয়েছিলাম জানো? তা আর আমার চেয়ে বেশি কে জানে বল! তবে মিলুকে এত লাই দিসনা। 


সব চাহিদা মিটতে নেই, কিছু চাহিদা অপূর্ণ থাকা ভালো। তা নয় বুবু, শুধু জরুরি চাহিদাটুকুই আমি মেটাবো। প্রতিকূলতা বুঝতে হবে ওকে।

হুম, আরও কি কি ইচ্ছে আছে তোর? নিজের জন্যও ভাবিস কিছু। রাখোতো ওসব ভাইজান ফিরবে কখন? এড়িয়ে যাসনা। আমরা টাকার অভাবে উচ্চশিক্ষিত হতে পারিনি। তাই বলে মূর্খ তো নয়। ভাইজান চলে আসছে চলো ভাত দাও।

মামার আঙ্গুলটাকে ভরসা করে এত মানুষের ভিড়েও স্বাচ্ছন্দ্যে আছে মিলু। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতী মেয়ে মনে হচ্ছে। একটা বইয়ের স্টলের সামনে গিয়ে দাড়ায় তারা।

“মিলু এইযে এখানে এত বই সব তোর পড়ার উপযোগী। তোর মন যতটা চায় ততটাই নিবি তুই”।

দৌড়ে পা বাড়ায় মিলু। ঠোঁট জুড়ে তার আনন্দের জোয়ার।

দাড়িয়ে হাসে মুরাদ। যেন পৃথিবীটা জয় করে ফেলেছে সে। চটপটে মিলুকে দেখে তাকে নিয়ে ভাবে। মেয়েটা সবে পঞ্চম শ্রেণীতে। বইয়ের প্রতি ভীষণ আগ্রহ। কিছুদিন আগেও একটা “ছড়ার খাতা” হারিয়ে যাওয়াই উঠানে গড়াগড়ি দিয়েছিল। নতুন সব পেয়ে একদম পরিপূর্ণ সে। ছুটে বেড়াচ্ছে বইয়ের রাজ্যে। নতুন উদ্যমে নতুনত্বের পথে।


যখন নামিবে আঁধার - মিসির আলিহুমায়ুন আহমেদ

যখন নামিবে আঁধার – মিসির আলি

Tushar ShuvroSeptember 05, 2021

যখন নামিবে আঁধার – মিসির আলি বাংলাদেশের প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ সৃষ্ট একট…

হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরীহুমায়ুন আহমেদ

হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী

Tushar ShuvroSeptember 04, 2021

হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী বইটি জনপ্রিয় হিমু সিরিজের একটি উপন্যাস ।  হিমু এবং একটি রা…

অঁহকহুমায়ুন আহমেদ

অঁহক

Tushar ShuvroSeptember 03, 2021

অঁহক বাংলাদেশী এবং বিজ্ঞান কল্পকাহীনি ভিত্তিক  ছোটগল্প সংকলন। যার রচয়িতা বাংলাদেশের বি…

Advertisements

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top