ভূমিকম্প : দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা কতটা প্রস্তুত ?

ভূমিকম্প

সিলেটের মাটি এক ঘণ্টার ব্যবধানে পাঁচবার কেঁপে উঠেছে গত শনিবার। গতকাল রবিবারও ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেছে।

ভূমিকম্প : দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা কতটা প্রস্তুত ? Earthquakes: How prepared are we to deal with disasters?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অল্প সময়ের মধ্যে পরপর
দুবার ভূমিকম্প হওয়ার ঘটনা এর আগে কখনোই হয়নি। এই ভূমিকম্প মৃদু অনুভূত হলেও
তেমন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে এই ভূমিকম্প আমাদের জন্য অশনি সংকেত।

বাংলাদেশের দুদিকের ভূ-গঠনে শক্তিশালী
ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়েছে। এর একটা হচ্ছে উত্তরপূর্ব কোণে সিলেট অঞ্চলে ডাউকি
ফল্টে, আরেকটা হচ্ছে পূর্বে চিটাগং ত্রিপুরা বেল্টে পাহাড়ি অঞ্চলে।

এখানে দুটি বড় ধরনের ভূমিকম্প বাংলাদেশের
দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। উত্তর প্রান্তে যেটা ডাউকি ফল্ট, এখানে সঙ্কোচনের হার
হচ্ছে প্রতি একশ বছরে এক মিটার।

গত ৫,০০,৬০০ বছরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের কোনো
রেকর্ড নেই। তারমানে পাঁচ-ছয় মিটার চ্যুতি ঘটানোর মতো শক্তি অর্জন করেছে।

এটা যদি রিখটার স্কেলে প্রকাশ করা হয় তাহলে
এটা হচ্ছে ৭.৫ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে। আর এখান থেকে ঢাকা শহর
হচ্ছে দেড়শ কিলোমিটার। যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানবে।

রাজধানী ঢাকার আশপাশে বড় মাত্রার ভূমিকম্পে
ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে ঢাকা মহানগরীর। ঢাকার মধ্যে বড় ভূমিকম্প সৃষ্টির মতো
ভূতাত্ত্বিক অবস্থা না থাকলেও সিলেট ও চট্টগ্রামে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে
মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাজধানী ঢাকাও

ঢাকা শহরে সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে চার
লাখের বেশি ভবন। রাজউক এলাকায় যে সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি, যার অধিকাংশই ভূমিকম্প
সহনীয় নয়।

বুয়েটের সঙ্গে যৌথভাবে সরকারের সমন্বিত
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি সিডিএমপির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাড়ে সাত
মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কতটা
প্রস্তুত বাংলাদেশ ?? প্রশ্ন সামনে আসছে।

ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যাকে
প্রতিরোধ করার কোনো উপায় মানুষের আয়ত্তে নেই। এমনকি এর পূর্বাভাস দেয়াও সম্ভব
হয় না।

তাই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখার
পূর্বপ্রস্তুতিই আসল। কিন্তু গরিব দেশগুলোতে সে ধরনের প্রস্তুতি থাকে না, ফলে এসব
দেশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হয়।

জাতিসংঘ দুর্যোগ ঝুঁকি সূচকের তথ্যানুযায়ী,
ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানেই
রয়েছে ঢাকার নাম। যে কোনো সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা
অমূলক নয়।

কাজেই এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের
সরকার বা জনগণ কতটা প্রস্তুত সেটা বিবেচনায় আনা খুবই জরুরি। উদ্বেগের কথা হলো, এ
ব্যাপারে সরকারের তরফে তেমন কোনো প্রস্তুতি বা সাধারণের মধ্যেও খুব একটা সচেতনতা
দেখা যাচ্ছে না।

বুঝতে হবে, অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো
ভূমিকম্পের কোনো আগাম পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। তাই জনগণকে সম্পৃক্ত করে
জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে।

Conclusion:

সীমিত সম্পদ ও ক্ষমতার আওতার মধ্যেই এ দুর্যোগ
মোকাবিলার ত্বরিত প্রস্তুতি নেয়া ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।

 Last line: ভূমিকম্প : দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা কতটা প্রস্তুত ?  Earthquakes: How prepared are we to deal with disasters?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top