সময় গতিশীল। সময়ের এই গতিময়তার সাথে সাথে পরিবর্তিত হয় সমাজ, পরিবর্তিত হয় আমাদের চারপাশ, কাজের পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট। আমাদের দেশের কর্মক্ষেত্রেও এসেছে অনেক পরিবর্তন।
বাংলাদেশে বিদ্যমান কর্মক্ষেত্রসমূহ
আজ থেকে চল্লিশ–পঞ্চাশ বছর আগেও আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের পেশা ছিল কৃষিকাজ কিংবা কৃষিভিত্তিক শিল্পে শ্রম দেওয়া। আজ বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। বিশ্বায়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে কর্মক্ষেত্রে এসেছে ব্যাপক বৈচিত্র্য।
আজকের দিনে আমাদের দেশে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে কী কী ধরনের কাজের সুযোগ আছে, কোন কোন পেশা গ্রহণ করা সম্ভব তা এই পাঠ থেকে আমরা জেনে নেব। পাশাপাশি, আমাদের জন্য ভবিষ্যতে কী ধরনের কাজের সুযোগ তৈরি হতে পারে, সে বিষয়েও জানার চেষ্টা করব।
কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে গভীরভাবে জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। তবেই আমরা স্বপ্ন ও আগ্রহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পেশা গ্রহণ করতে পারব।
১. স্থানীয় পর্যায়ের কর্মক্ষেত্র
বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতি এদেশের প্রকৃতির মতোই বৈচিত্র্যময়। বাংলাদেশ সম্পর্কে ভাবতে গিয়ে অনেকেই বলে থাকেন যে আমাদের দেশে স্থানীয় পর্যায়ে কাজের সুযোগ কম। কথাটা মোটেও সত্য নয়।
বহুকাল থেকেই বাংলাদেশের সমাজ স্থানীয় পর্যায়ে অনেক পরিশীলিত ও বৈচিত্র্যময় কর্মক্ষেত্রের সমাবেশে ঐশ্বর্যশালী।
প্রত্যেক গ্রামেই ছিল কুমার, চাষি, কামার, জেলে, ব্যবসায়ী শিক্ষকসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ। তারা বংশপরম্পরায় ও নিজের আগ্রহের ভিত্তিতে পেশা নির্বাচন করতেন।
নিজের মেধা, শ্রম ও ক্ষমতার সবটুকু উজাড় করে তারা গতিময় করেছিলেন দেশের অর্থনীতি।
আমাদের চারপাশে এখনো ছড়িয়ে আছে সেসব পেশা। এসব পেশায় গিয়ে সুনাম অর্জনের সাথে সাথে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের সুযোগ রযেছে।
প্রয়োজন শুধু একটু চোখ মেলে দেখা, খানিকটা মেধা ও সৃজনশীলতা খাটিয়ে নতুন রূপে নিজের ভবিষ্যতকে সাজিয়ে নেওয়া।
এবার আমরা স্থানীয় পর্যায়ে যে সকল পেশা গ্রহণের সুযোগ আছে, সেগুলো সম্পর্কে জেনে নিই।
২. কৃষিকাজ
কৃষিকাজ পৃথিবীর আদিম পেশাগুলোর একটি। মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য বিশ্বের সকল দেশের মতো এদেশেরও কোটি কোটি কৃষক রাত–দিন শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।
অনেকেই কৃষিকাজকে হেয় করে দেখে, ভাবে এটা গুরুত্বহীন কাজ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কৃষিকাজ একটি দারুণ লাভজনক পেশা।
আমেরিকা ও ইউরোপের অনেক দেশে, কৃষি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে ওইসব দেশের
মানুষ নিজের গ্রামে ফিরে কৃষিকাজ করেন। তারা অবশ্য আমাদের মতো অসচেতনভাবে কৃষিকাজ করেন না।
তারা চাষ করে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে, ফলে তাদের ফলনও হয় অনেক বেশি। ফলে সেসব দেশ, তাদের অভ্যন্তরীণ খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে খাদ্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে। বাংলাদেশকে উন্নতির স্বর্ণশিখরে নিয়ে যেতে পারেন এদেশের সম্মানিত কৃষকগণ।
বাংলাদেশের মতো এমন উর্বর ভূমি পৃথিবীর খুব কম দেশেই আছে। কাজেই দেশের এখন প্রয়োজন আধুনিক কৃষক। আমরা কি হতে পারব আধুনিক কৃষক? আধুনিক কৃষক হতে হলে কী কী দক্ষতা প্র্রয়োজন, তা কি আমরা জানি? আধুনিক কৃষক হতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন শিক্ষা।
শিক্ষিত না হলে কখন কোন ফসল চাষ করলে বেশি লাভ হবে, কীভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফসল চাষ করা সম্ভব, কী কী সার ব্যবহার করলে ফসল ভালো হবে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়।
যারা শিক্ষিত নন, তারা বেশিরভাগ সময়ই সঠিক তথ্য সঠিক সময়ে জানতে পারেন না। শিক্ষিত না হলে, বীজ ও সার–এর প্যাকেটের গায়ে যে নিয়মাবলি লেখা থাকে তা পড়া সম্ভব হয় না। যথাযথভাবে সেগুলো জমিতে ব্যবহার করাও যায় না।
কোনো শিক্ষিত মানুষ যখন কৃষিকাজ করেন, তখন তিনি চাষ সংক্রান্ত সকল বিষয় খতিয়ে দেখেন; লাভ–ক্ষতি ও তার সামর্থ্য বুঝে চাষের কাজে হাত দেন। মাধ্যমিক পর্যায়ের কৃষি শিক্ষা বিষয় অধ্যয়নের সময় আধুনিক কৃষিকাজ সম্পর্কিত অনেক কিছু জানা যায়; পড়াশোনা জানলে অন্যান্য বই পড়েও শেখা যায়।
শিক্ষিত চাষি জৈব সার তৈরি করে চাষের খরচ অনেক কমিয়ে আনতে পারেন। একই সাথে পারেন সঠিক পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অধিক ফলন।
নিত্য–নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে কাজ যেমন সহজ হয়ে যায়, তেমনি দ্র্রুত অনেক কাজ সম্পন্ন করা যায়।
আধুনিক কৃষকগণ এ থেকে বিস্তর মুনাফা করতে পারেন। সবজি চাষ করে অনেকেই আজ আর্থিক স্বচ্ছলতার সাথে জীবনধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। আমরা কি তেমন কেউ হতে চাই?
৩. পশু–পাখি
পালন
পশুপালন কৃষিকাজের মতোই পুরনো একাটি পেশা। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পশুপালন খুবই লাভজনক। বাংলাদেশের জমি খুব উর্বর। এখানে জমি পতিত রাখেলও তাতে প্রচুর ঘাস জন্মায়।
এছাড়াও অতি সহজেই এসব জমিতে পশু–পাখির খাদ্য উৎপাদন করা যায়, যা বিশ্বের অনেক দেশেই সম্ভব নয়। বিশ্বের অনেক দেশের জলবায়ু খুবই ঠাণ্ডা– প্রায়ই বরফ পড়ে। সেসব দেশে পশু–পাখি পালন করা খুবই কঠিন।
অথচ বাংলাদেশে যেমন বরফও পড়ে না, তেমনি মরুভূমির মতো খুব গরমও নেই। নাতিশীতোষ্ণ এই জলবায়ু পশু–পাখি পালনের জন্য অতি উত্তম।
প্রয়োজন শুধু সচেতনভাবে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পশু–পাখি পালন করা।
তোমরা চাইলে অনেকেই আধুনিকভাবে পশুপাখি পালন করতে পার। মাত্র সাড়ে চার থেকে পাঁচলাখ টাকা খরচ করে ১০ টি উন্নতজাতের দুগ্ধবতী গাভি বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পালন করে প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা অর্থাৎ বছরে একুশ থেকে বাইশ লক্ষ টাকা উপার্জন করা সম্ভব।
খুব অবাক লাগছে তাই না? এসো হিসাব করে দেখিঃ
উন্নত জাতের একটি গাভি প্রতিদিন ১০–১৫ লিটার দুধ দেয়। মনে কর, তোমাদের গরু দৈনিক গড়ে ১২ লিটার দুধ দেয়। তোমার এমন ১০ টি গরু রয়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতিলিটার দুধের দাম ৫০ টাকা।
তাহলে ১০ টি গরুর দৈনিক দুধের পরিমাণ ১২০ লিটার। সুতরাং দৈনিক আয় হবে ৬,০০০ টাকা। এভাবে মাসে অর্থাৎ ৩০ দিনে আয় হবে ১,৮০,০০০ টাকা।
আবার এই গাভিগুলো নিয়মিত বাচ্চা প্রসব করবে। সেগুলো বিক্রি করেও অনেক টাকা পাওয়া সম্ভব। একই রকম লাভ করা যায় পাখি (যেমন– হাঁস, মুরগি, কবুতর, কোয়েল ইত্যাদি) লালন পালন করে।
তবে সব ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে লালন পালন করত হবে; অন্যথায় এমন লাভ করা সম্ভব হবে না। আর বিজ্ঞানসম্মতভাবে পালন করতে হলে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে হবে।
৪. স্থানীয় উন্নয়ন
সহযোগী প্রতিষ্ঠানে
চাকরি
বাংলাদেশে
অনেক এনজিও রয়েছে যেগুলো স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এ সকল এনজিওতে চাকরি করলে একদিকে যেমন নিজের নিয়মিত উপার্জন হয়, তেমনি দেশের ও সমাজের মানুষের উন্নয়নের জন্যও ভূমিকা রাখা যায়।
এ সকল উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান সমাজের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি পশুপালন, মাছচাষ, শিশু ও নারী অধিকার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, শিশুদের সুরক্ষা ইত্যাদি নানা বিষয়ে কাজ করে থাকে।
এ সকল প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে হলে একদিকে যেমন ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হতে হয়, তেমনি পেশাগত যোগাযোগ ও দক্ষতা অর্জন করতে হয়।
৫. স্থানীয় কারখানায়
চাকরি
প্রত্যেক
এলাকায় বিশেষ ধরনের কিছু কলকারখানা থাকে। যেমন–চট্টগ্রামে জাহাজ ভাঙা শিল্প, নারায়ণগঞ্জে লঞ্চ তৈরি ইত্যাদি। আমরা এ সকল কারখানায় চাকরি করেও জীবিকা নির্বাহ করতে পারি।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, এ সকল কারাখানায় বেতন কম। ভালো করে খোঁজ নিলে দেখবে, এ সকল কারখানায় শুধু অদক্ষ শ্রমিকদের বেতন কম।
যারা ওই সকল কারখানার বিভিন্ন কাজে দক্ষ, তারা কিন্তু বেশ ভালো উপার্জন করে থাকে।
ভিন্ন ভিন্ন কারখানার জন্য ভিন্ন ভিন্ন রকম দক্ষতার প্রয়োজন। আমাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা সম্পর্কে জানতে হবে এবং চাকরির আবেদন করার আগেই সে বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে সরকার অনেক ধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে।
এছাড়াও টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটসমূহেও নানা রকম দক্ষতা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
যথাযথ পরিকল্পনা করে আমাদের সামনে অগ্রসর হতে হবে। দক্ষ ও পরিশ্রমী হলেই অনেক ছোট পরিসরে ক্যারিয়ার শুরু করেও অনেক বড় হওয়া যায়, অনেক সুনাম অর্জন করা যায়।
৬. স্থানীয় পরিসরে
ব্যবসা
পৃথিবীর সেই আদিকাল থেকেই ব্যবসায় একটি সম্মানজনক পেশা। ব্যবসায় ছোট–বড় বিভিন্ন পরিসরে করা যায়, বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ব্যবসায় করা যায়।
আগ্রহ, দক্ষতা ও পুঁজির উপর নির্ভর করে নানা রকম ব্যবসায় করা সম্ভব। আমাদের দেশে অধিক প্রচলিত স্থানীয় পর্যায়ের ব্যবসায়সমূহের মধ্যে রয়েছে কাঁচামালের ব্যবসায়, ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়, পোশাক ও কাপড়ের ব্যবসায়, ফলমূল ও শাক–সবজির ব্যবসায়, মাছের ব্যবসায়, মুদি পণ্যের ব্যবসায়, যানবহন ও পরিবহণের ব্যবসায় ইত্যাদি।
যে ব্যবসায়ই করা হোক না কেন, যদি তা সততা, নিষ্ঠা পরিশ্রমের সাথে করা যায় তবে তাতে উন্নতি হবেই।
৭. জাতীয়
পর্যায়ে কর্মক্ষেত্র
বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন রকম চাকরির সুযোগ রয়েছে। সরকারি, বেসরকারি, বিদেশি, বহুজাতিক বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রচুর সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশে। সাথে সাথে রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যবসা করার সুযোগ।
এজন্য শিক্ষাজীবনের শুরুতেই লক্ষ্য স্থির করে নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
যারা নিজেদের পেশাগত কাজে খুবই দক্ষ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের ভালো সুযোগ–সুবিধাসহ চাকরি দেয়।
এসো, বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে কী ধরনের চাকরি ও ব্যবসার সুযোগ আছে, তার কয়েকটি আমরা জেনে নিই।
জাতীয় পর্যায়ে আমাদের দেশে চাকরি করার অনেক সুযোগ রয়েছে। যেমন সরকারি, আধা সরকারি, স্বয়াত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ।
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে আবার রয়েছে সামরিক ও বেসামরিক ক্ষেত্রে চাকরি।
৮. ক্যাডার সার্ভিস
বাংলাদেশে সরকারি চাকরির কথা বললে প্রথমেই যে চাকরিটির নাম আসে তা হলো ক্যাডার সার্ভিস। বাংলাদেশে ২৯ টি ক্যাডার রয়েছে।
এর প্রতিটিতে চাকরি করার সুযোগ কেবল বাংলাদেশের শিক্ষিত নাগরিকদের।
বাংলাদেশের সরকারি কর্ম কমিশন স্নাতক বা স্নাতকোত্তর (ক্যাডারের
বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী) অনূর্ধ্ব ৩৫ বছর বয়সের নাগরিকদের মধ্য হতে বিভিন্ন
প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করে চাকরির জন্য সুপারিশ করে।
মাহমান্য রাষ্ট্রপতি ক্যাডার কর্মকর্তাগণকে নিয়োগ প্রদান করেন। ক্যাডার কর্মকর্তাগণ দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে চাকরি করার পাশাপাশি অনেক সুযোগ–সুবিধা পেয়ে থাকেন।
তাই এটি আমাদের দেশের শিক্ষিত নাগরিকদের প্রথম পছন্দের পেশা। এ চাকরিগুলো পেতে হলে আমাদের শিক্ষাস্তরে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে হবে।
৯. শিক্ষকতা
শিক্ষক
শিক্ষার্থীদের
ভবিষ্যৎ উপযোগী করে গড়ে তোলেন। দেশ–কাল জাতিভেদে শিক্ষকের মর্যাদা সবার উপরে। তাই শিক্ষকতার জ্ঞান বিতরণের এই মহান পেশায় তোমরা ক্যারিয়ার শুরু করতে পার।
পেশা হিসেবে শিক্ষকতা বেছে নিলে একদিকে যেমন পাবে সম্মান–মর্যাদা, অন্যদিকে সুন্দর ও নিশ্চিত জীবন।
শিক্ষাস্তরের
গুরুত্বপূর্ণ
হচ্ছে প্রাকপ্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রায় প্রতিবছরই শিক্ষক নিয়োগ করা হয়।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হতে চাইলে মেয়েদের জন্য ন্যূনতম এইচএসসি পাস এবং ছেলেদের জন্য স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে।
প্রধান শিক্ষক হতে চাইলে তাকে স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি বিএড ডিগ্রি সম্পন্ন করতে হবে।
এছাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন ও ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষকতার ক্যারিয়ার শুরু করা যেতে পারে।
মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও প্রতিবছর নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যদি শিক্ষাজীবনে ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ থাকে আর স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকে, তাহলে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার ক্যারিয়ার শুরু করা যায়।
এক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা নিয়োগ পেয়ে থাকেন। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার জন্য বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
বর্তমানে
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন
ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এন টি আর সি এ) বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদে
শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকে।
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকতার জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া ভিন্ন। সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করতে চাইলে বিসিএস পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হতে হবে।
আর বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতার জন্য নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে এবং বেসরকারি
শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ শূন্য পদে নিয়োগ দিয়ে থাকে।
কলেজে শিক্ষকতার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে।
শিক্ষকতার সর্ব্বোচ্চ পর্যায় বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার। এ জন্য শিক্ষার সকল পর্যায়ে ভালো ফলাফল থাকতে হবে।
১০. আইনসংক্রান্ত পেশা
সম্মান এবং সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য বর্তমান সময়ে আইন পেশার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। আইন পেশায় এখন নতুন নতুন মাত্রা ও সম্ভাবনা যোগ হয়েছে।
মর্যাদাপূর্ণ এ পেশায় পূর্বে সাধারণত পুরষরাই আসতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীরাও এ পেশায় আসছেন।
নিম্ন আদালতে বিচারক ও আইনজীবী হিসেবে কাজের সুযোগ তো আছেই, আছে সর্ব্বোচ্চ আদালতের একজন আইনজীবী কিংবা বিচারপতি হওয়ার সম্ভাবনা।
এ ছাড়া নিম্ন ও উচ্চ আদালতে সরকার–নিয়োজিত আইনজীবী হিসেবেও পেশা গড়ার সুযোগের পাশাপাশি রয়েছে নোটারি আইনজীবী হওয়ার সুযোগ।
বিচার বিভাগ ছাড়াও নির্বাহী আদালতগুলোতে আইনজীবীরা মামলা পরিচালনা করার অধিকার রাখেন।
এমনকি আইনজীবীরা আদালতে ও বাইরে বিভিন্ন চেম্বার ও ফার্মে ইন হাউস আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে পারেন।
আইনজীবী হতে হলে আইনের উপর স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর বার কাউন্সিল থেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইন পেশায় নিয়োজিত হতে হয়। এ প্রক্রিয়া অবশ্য নিম্ন আদালতের জন্য।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হওয়ার পদ্ধতি হচ্ছে, নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত নিম্ন আদালতে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া।
কেউ যদি বিচারক হতে চান, সে ক্ষেত্রে তাকে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
আইনজীবী হিসেবে কারও যদি কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে তিনি পাবেন বিচারপতি হওয়ার সুযোগ।
একজন আইনজীবীর রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠার সুযোগ। যেমন পারিবারিক, জমিজমা, ফৌজদারি, রিট, কোম্পানি, শ্রম আইন কিংবা আয়কর ইত্যাদি। এসব ছাড়াও বর্তমানে আইন পেশায় আরও নতুন কয়েকটি ক্ষেত্র্র তৈরি হয়েছে।
যেমন বুদ্ধিবৃত্তিক ও মেধাস্বত্ব, ট্রেডমার্কস, পেটেন্ট ও ডিজাইনবিষয়ক আইনি কাজ। পরিবেশ আইন নিয়েও সারা দেশে কাজের পরিধি বিস্তৃত হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে সাংবাদিকদের মামলা পরিচালনা, কাস্টমস ও ভ্যাট–সংক্রান্ত মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রও বাড়ছে।
মানবাধিকারকর্মী হিসেবে সরকারি ও বেসরকারি
মানবাধিকার সংস্থায় কাজের ব্যাপক সুযোগ তৈরি হয়েছে।
আমাদের দেশে বিভিন্ন
সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক-বিমা প্রতিষ্ঠানগুলো ইদানীং আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দিচ্ছে। দেশে আইন সাংবাদিকতার সুযোগ বেড়েছে আগের তুলনায়।
১১. ব্যাংক ও
বিমা
ব্যাংক
ও বিমা খাতেও রয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষিত নাগরিকদের চাকরি করার সুযোগ। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের ব্যাংক ও বিমা কোম্পানি রয়েছে। এ পেশাতেও নানা ধরনের সুযোগ রয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি ছাড়াও শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের কর্মচারী হিসেবে চাকরি করার সুযোগও আছে।
১২. পোশাকশিল্প
বাংলাদেশের পোশাকশিল্প বিশ্বখ্যাত। এদেশের তৈরি পোশাকের যেমন বিশ্বব্যাপী কদর আছে, তেমনি আছে পোশাক তৈরির বিভিন্ন উপকরণ প্রস্তুতকারী শিল্পের।
আমাদের দেশে আশির দশক থেকে রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে তৈরি পোশাকশিল্পের উন্নয়ন ঘটতে শুরু করে।
ধীরে ধীরে এ শিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজারও দ্রুত সম্প্রসারিত হতে থাকে। এ শিল্পের মাধ্যমে দক্ষ–অদক্ষ ব্যক্তির কর্মসংস্থানের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
একটা সময় ছিল যখন শিক্ষিত
ছেলেমেয়েরা
এ শিল্পে আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু বর্তমানে সুযোগ–সুবিধা এবং বেতন উপযুক্ত হওয়ার কারণে অনেক শিক্ষিত তরুণ পোশাকশিল্পে তাদের ক্যারিয়ার শুরু করছেন।
দেশের ক্রমবিকাশমান এ শিল্পে শুধু যে শিক্ষিত ব্যক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে তা নয়; এবং দেশের পিছিয়ে পড়া অনেক বেকার যুবক–যুবতী তাদের শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
গার্মেন্টস শিল্পে মার্চেন্ডাইজার, ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, ফ্যাশন ডিজাইনার, প্রোডাকশন কর্মকর্তা, বাণিজ্য বিষয়ক কর্মকর্তা ইত্যাদি পদে চাকরি করার সুযোগ রয়েছে।
এ পদগুলো ছাড়াও আরও কিছু পদ রয়েছে সেখানেও কাজ করার প্রচুর সুযোগ আছে যেমন ফিনিশিং ইনচার্জ, কাটিং মাস্টার, কোয়লিটি কন্ট্রোলার, ডাইং মেশিন অপারেটর, প্যাটার্ন মেকার ইত্যাদি। এসব পদে কাজ করে ক্যারিয়ারে সাফল্য অর্জন সম্ভব।
পোশাকশিল্পের জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি। প্রশিক্ষণ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই এ সেক্টরে সাফল্য অর্জন করা যায় না। গার্মেন্টস সেক্টরে যেহেতু অনেক ভাগ আছে তাই কোন বিষয়ে ক্যারিয়ার শুরু করবে সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণ নেওয়া প্রয়োজন।
১৩. নৌযান ও
নৌপরিবহণ শিল্প
সমুদ্রগ্রামী
জাহাজ তৈরির কারিগর হওয়ার সুযোগ এখন আমাদের দ্বারপ্রান্তে। কারণ জাহাজশিল্পকে ঘিরে দেশে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত তৈরি হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বিদেশেও আন্তর্জাতিক মানের জাহাজ রপ্তানি করছে।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়ে বাজার বাড়ায় দেশের জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিনিয়ত দক্ষ জনবল খুঁজতে হচ্ছে।
ফলে এ খাতে দিন দিন কাজের সুযোগ বাড়ছে। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী একজন নেভাল আর্কিটেক্ট জাহাজের নকশা প্রণয়ন করেন।
পুরো জাহাজের নকশাকে আবার কয়েকটি অংশে ভাগ করা হয়। এরপর শিপ বিল্ডিং প্রকৌশলী ডিজাইন অনুযায়ী জাহাজের ওয়েলডিং, ফিটারিং, প্রিন্টিং ও গুণগত যন্ত্রাংশের ব্যবহার নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করেন। পুরো কাজটি করতে হয় নিখুঁত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে।
কারণ, গ্রাহকেরা জাহাজ নির্মাণের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে গুণগতমান নিশ্চিত করে থাকেন।
জাহাজশিল্পে শিপ বিল্ডিং প্রকৌশলীর পাশাপাশি সহকারী প্রকৌশলী, সুপারভাইজার ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা হিসেবেও কাজ করার সুযোগ আছে।
বিদেশেও ভালো বেতনে এ পেশার ব্যাপক চাহিদা ও কাজের সুযোগ আছে। বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সরকারিভাবে পরিচালিত নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইন শিপ বিল্ডিং টেকনোলজি ও দুই বছর মেয়াদি শিপ বিল্ডিং, শিপ ফেব্রিকেশন ও শিপ বিল্ডিং অ্যান্ড মেকানিক্যাল ড্রাফটসম্যানশিপ কোর্স চালু রয়েছে।
১৪. অটোমোবাইল শিল্প
মানুষের চলাচলের প্রধান বাহন হচ্ছে গাড়ি। বিগত বছরগুলোতে রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরে গাড়ির ব্যবহার বহুলাংশে বেড়েছে। আগের তুলনায় বর্তমানে দেশে অনেক বেশি গাড়ি আমদানি করা হচ্ছে।
তোমরা জেনে আনন্দিত হবে যে বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক বাস, ট্রাক, অটোরিকশার শুধু চেসিস আমদানি করে, এগুলো তৈরির কাজ এখানে সম্পন্ন হচ্ছে।
আমদানিকৃত এসব গাড়ি পরবর্তী সময়ে সার্ভিসিং বা মেরামতের জন্যই অটোমোবাইল কারিগরি শিল্পের বিকাশ লাভ করছে দ্রুতগতিতে।
আর এ শিল্পের নানা ধরনের কাজে দক্ষ অটোমোবাইল প্রকৌশলী প্রয়োজন। তাই অটোমোবাইল শিল্পে যারা আগ্রহী তাদের দৃষ্টি এখন এদিকেই।
অটোমোবাইল শিল্পের প্রধান কাজ হচ্ছে নতুন গাড়ি তৈরি এবং তা বিক্রয় ও পরবর্তীতে সার্ভিসিং এবং মেরামতসহ যাবতীয় কারিগরি কাজ।
সাধারণত এই শিল্পে কাজের ধরন বিবেচনায় তিনটি ভাগ রয়েছে। এগুলো হলো: উৎপাদন, সেলস, এবং সার্ভিসিং।
উৎপাদন ক্ষেত্রে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন প্রকৌশলীরা এক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা দেখানোর ব্যাপক সুযোগ পান। সেলস বিভাগে গাড়ি বিপণন, বিক্রয় ও বিতরণের কাজ করা হয়ে থাকে।
গ্রাহকের কাছে গাড়ি সম্পর্কে ভালো ধারণা প্রদান ও ইঞ্জিন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা এই বিভাগের মূল দায়িত্ব।
বিক্রয়–পরবর্তী সার্ভিসিং বলতে ওয়ারেন্টিযুক্ত বা সার্ভিস ফি দিয়ে গাড়ি মেরামত ও সার্ভিসিং করাই হলো সার্ভিসিং বিভাগের প্রধান কাজ।
এই শিল্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে গাড়ি মেরামতের গ্যারেজ দিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
১৫. সম্ভাবনাময় পেশা:
ফ্রিল্যান্সিং
ফ্রিল্যান্সিং
শব্দের মূল অর্থ হলো মুক্ত পেশা। অর্থাৎ মুক্তভাবে কাজ করে আয় করার পেশা। আর একটু সহজভাবে বললে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের কাজ করিয়ে নেয়।
নিজ প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য কাউকে দিয়ে এসব কাজ করানোকে আউটসোর্সিং বলে। যারা আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে দেন, তাদের ফ্রিল্যান্সার বলে।
আউটসোর্সিং সাইট বা অনলাইন মার্কেট প্লেসে কাজগুলো বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা থাকে।
যেমন: ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, নেটওয়ার্কিং ও তথ্যব্যবস্থা (ইনফরমেশন সিস্টেম), লেখা ও অনুবাদ, প্রশাসনিক সহায়তা, ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়া, গ্রাহকসেবা, বিক্রয় ও বিপণন, ব্যবসায় সেবা ইত্যাদি।
কাজগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে করে দিতে পারলেই অনলাইনে আয় করা সম্ভব। দক্ষতা থাকলেই কেবল ফ্রিলেন্সিংকে পেশা হিসেবে নেওয়া সম্ভব।
তাই ফ্রিলেন্সিংকে পেশা হিসেবে নির্ধারণ করার পূর্বে নিজেকে তৈরি করে নিতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং
যেহেতু মুক্ত পেশা, সেখানে ব্যক্তিগত জবাবদিহিতার চেয়ে কাজের জবাবদিহিতা বেশি। কাজ যদি সঠিক না হয় এবং কাজে যদি স্বচ্ছতা না থাকে তাহলে এই সেক্টরে সফল হওয়া যায় না।
ফ্রিল্যান্সিং–এর কাজ পাওয়া যায় এমন অনেক ওয়েবসাইট আছে। আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত এবং নির্ভরযোগ্য এমন কয়েকটি সাইটের ঠিকানা দেওয়া হলো:
ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটের তালিকা
- www.upwork.com,
- www.freelancer.com,
- www.elance.com,
- www.getacoder.com,
- www.guru.com,
- www.vworker.com,
- www.scriptlance.com
- https://www.truelancer.com ইত্যাদি।
১৬. উন্নয়ন প্রকল্প
বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দ্রুততার সাথে শেষ করার জন্য প্রতিবছরই বিভিন্ন খাতে নানা ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করে থাকে।
প্রকল্পগুলোতে প্রকল্প মেয়াদের জন্য দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকল্পের চাকরি স্বল্প মেয়াদের হলেও এখানে দক্ষতা অর্জন করলে ভবিষ্যতে অন্য চাকরি বা আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। প্রকল্পেও কর্মকর্তা ও কর্মচারী উভয় ধরনের চাকরির সুযোগ রয়েছে।
১৭. সামরিক ও
নিরাপত্তা সংস্থা
সরকারি পর্যায়ে সামরিক ক্ষেত্রে রয়েছে বিভিন্ন চাকরির সুযোগ। সুস্থ, শারীরিক সামর্থ্য ও শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীতে চাকরিতে যোগ দেওয়া যায়।
সামরিক বাহিনীর চাকরির মাধ্যমে যেমন দেশের সেবা করা যায়, তেমনি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজ করে বিশ্বশান্তিতেও ভূমিকা রাখা যায়। তাই এটিও অনেকের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় চাকরি।
এছাড়াও পুলিশ, আনসার, বর্ডারগার্ড বাহিনীতেও প্রতিবছর প্রচুর জনবল নিয়োগ দেয়া হয়। বর্তমানে অনেক বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা গড়ে উঠেছে। এ সংস্থাগুলোতেও চাকরির সুযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া আরও অসংখ্য পেশা আমরা গ্রহণ করতে পারি। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো প্রতি বছর অনেক চাকরির বাজার সৃষ্টি করে।
প্রকৌশল ও চিকিৎসা খাতে বাংলাদেশে দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে। প্রসারিত হচ্ছে কৃষি প্রকৌশল ও গবেষণা খাতসমূহ। দেশের আনাচে–কানাচে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে আরও অসংখ্য চাকরির সুযোগ।
অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রচুর দক্ষ ও শিক্ষিত কর্মীর প্রয়োজন।
১৮. আন্তর্জাতিক পর্যায়ে
কাজের সুযোগ
আমাদের অনেকেরই আত্মীয়–স্বজনের মধ্যে কেউ না কেউ আছেন যিনি দেশের বাইরে চাকরি করেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা দেশে পরিবারের জন্য অর্থ পাঠান।
এতে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষ করে ডলারের রিজার্ভ বৃদ্ধি পায়, যা আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাই বিদেশে চাকরির মাধ্যমে শুধু নিজের পরিবারের স্বচ্ছলতা আসে তা নয়, এতে দেশের অর্থনীতিও অনেক সমৃদ্ধ হয়। আমরা একটু চিন্তা করলেই অনেকগুলো দেশের নাম মনে করতে পারি যেখানে অনেক বাংলাদেশি কায়িক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বা মেধাশ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।
দেশের বাইরে রয়েছে কাজের অনেক সুযোগ। বিদেশে কর্মরত বহু বাংলাদেশি প্রতি বছর বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশে পাঠান। এর মাধ্যমে আমাদের দেশের অর্থনীতি সচল থাকে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিরা নানা ধরনের পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে অনেক বেশি বাংলাদেশি কাজ করছেন মধ্যপ্রাচ্যে।
ইউরোপ, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়াতে বহু সংখ্যক বাংলাদেশি কাজ করছেন শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী কিংবা শ্রমিক হিসেবে।
কোনো কাজকেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। যিনি কায়িক শ্রম করেন তাকে আমরা শ্রমিক বলি। তার সম্মান কোনোভাবেই একজন শিক্ষক, চিকিৎসক বা প্রকৌশলীর চেয়ে কম নয়।
কেননা কেউ না কেউ এই কায়িক শ্রম না করলে আজ আমাদের সভ্যতা, সমাজ, রাষ্ট্র গড়ে উঠত না। তাই আমাদের যেকোনো পেশার মানুষকে সম্মান দেওয়া উচিত।
১৯. এশিয়ায় কাজের সন্ধান
চীন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনামসহ এশিয়ার অনেক দেশে প্রযুক্তিবিদ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় স্নাতকগণ সরাসরি চাকরি নিয়ে যেতে পারেন।
মালয়েশিয়াতে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করেও উচ্চবেতনে কাজ পাওয়া সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা করে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করে মালয়েশিয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে চাকরি লাভের সুযোগ রয়েছে।
বহু বাংলাদেশি সেখানে শিক্ষক হিসেবে পারদর্শিতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। বহুজাতিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে পদোন্নতি নিয়ে এশিয়ার এ দেশগুলোতে উচ্চবেতনে কাজ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে, বিশেষ করে ব্যবসায় প্রশাসন ও প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের জন্য।
যে কাজ করতে যাওয়া হবে সে কাজে অবশ্যই দক্ষতা থাকতে হবে। অন্যথায় বিদেশের মাটিতে অনেক সমস্যা হতে পারে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান ভুয়া চাকরি দেখিয়ে বিদেশে লোক পাঠাচ্ছে কি না তা নিশ্চিত হয়ে যাওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরোর সাথে যোগাযোগ করলে উপকৃত হওয়া যাবে।
আরব দেশসমূহে কাজ
- সিরিয়া
- লেবানন
- ইসরাইল
- প্যালেস্টাইন
- ইরাক
- জর্দান
- কুয়েত
- সৌদি আরব
- বাহারাইন
- কাতার
- সংযুক্ত আরব আমিরাত
- ওমান
- ইয়ামেন
বিদেশে কাজের সবচেয়ে বেশি সুযোগ রয়েছে আরব দেশ তথা সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহারাইন প্রভৃতি দেশে।
এ সকল দেশে বিভিন্ন কলকারখানা, রাস্তাঘাট নির্মাণে, ব্যবসায়–বাণিজ্য এমনকি সরকারি কাজে বিদেশ থেকে প্রচুর কর্মী প্রতি বছর নেওয়া হয়ে থাকে।
আর তাদের মাঝে সর্বাধিক হলো বাংলাদেশি। সুউচ্চ ভবন, সড়ক ও সেতু নির্মাণ থেকে শুরু করে সরকারি প্রতিষ্ঠান তথা হাসপাতাল, বিমান–বন্দর, বিদ্যালয়, অফিস–আদালত ও শিল্প কারখানায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন।
যে সকল বাংলাদেশি কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত তারা উচ্চবেতনে রেফ্রিজারেশন, ওয়েল্ডিং, গ্লাস ও সিরামিক কারখানা, বিমান রক্ষণাবেক্ষণ, পোশাক তৈরি, অটোমোবাইল তৈরি, মেশিন চালনা, কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণ, গাড়ি চালনাসহ বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছেন। এসকল কাজে দক্ষ ও ভাষাজ্ঞান জানা কর্মীর চাহিদা বেশি।
আরব দেশে অন্যতম চাহিদা রয়েছে খনি শ্রমিকের। কেননা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক জ্বালানি পাওয়া যায় এ অঞ্চলের ভূ–অভ্যন্তরে।
তাই তেল–গ্যাস উত্তোলন কাজে কারিগরি দক্ষতা থাকলে আরবদেশের যে কোনো দেশে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সব সময় চেষ্টা করে দেশ থেকে দক্ষ শ্রমিকদের আরব দেশে কাজে পাঠানোর। সরকারের জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরো প্রত্যক্ষভাবে এ সেক্টরে কাজ করে।
আর সরকার অনুমোদিত বেসরকারি কিছু এজেন্সি আরবদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি সংগ্রহ করে বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিদেশে চাকরির ব্যবস্থা করে থাকে।
সেজন্য তারা নির্দিষ্ট হারে ফি গ্রহণ করে। তবে পুরো প্রক্রিয়া বাংলাদেশ সরকার তত্ত্বাবধান করে থাকে।
জাতীয় দৈনিক, বিভিন্ন বৈদেশিক কর্মসংস্থান কাজে নিয়োজিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট এবং অনলাইন চাকরির ওয়েবসাইটে বিদেশে চাকরির বিজ্ঞাপন প্রায়ই প্রকাশ করা হয়।
এছাড়া জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরো এবং বেসরকারিভাবে বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বায়রার অফিসে চাকরির খবর সরাসরি গিয়ে সংগ্রহ করা সম্ভব।
আরবদেশে পেশাজীবী তথা চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষকগণের জন্য প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আরব রাষ্ট্রগুলো মূলত বিদেশি পেশাজীবীদের দিয়েই তাদের কাজ চালিয়ে থাকে।
সে কারণে প্রতি বছর সম্মানজনক আয়ের আশায় বহু বাংলাদেশি চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি আরবদেশে যান।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা শেষ করে এ সকল দেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করলে চাকরির সন্ধান পাওয়া যায়।
আরবদেশের দেশগুলোর বিভিন্ন কোম্পানির ওয়েবসাইটে বিদেশি পেশাজীবী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি থাকে। অনলাইনে সার্চ করে তা পাওয়া সম্ভব।
২০. যুক্তরাষ্ট্র ও
ইউরোপে কাজ
যুক্তরাষ্ট্রে
প্রচুর কম্পিউটার প্রকৌশলী চাকরি নিয়ে যান। এক্ষেত্রে পাশের দেশ ভারত অনেক এগিয়ে।
তবে দিন দিন বাংলাদেশি তরুণ কম্পিউটার প্রকৌশলীগণ তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখে যুক্তরাষ্ট্রে সরাসরি চাকরি নিয়ে যাচ্ছেন।
কম্পিউটার প্রকৌশলীদের পাশাপাশি চিকিৎসকগণ যুক্তরাষ্ট্রের মেডিকেল লাইসেন্স পরীক্ষা দিয়ে সরাসরি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার্থে যাওয়া বহু বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চাকরি নিয়ে স্থায়ীভাবে বাস করছেন।
বৃটেন, সাইপ্রাস, ইটালি, ফ্রান্স ইত্যাদি ইউরোপীয় দেশে রাঁধুনি অর্থাৎ শেফদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
দক্ষতা অর্জন করে ইউরোপের এসব দেশে অনেক অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। তোমাদের মধ্যে অনেকে নিশ্চয়ই উচ্চশিক্ষার্থে এসব দেশে যেতে চাও।
এসব দেশে কাজ করে অনেকে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিকে সমৃদ্ধ করছে।
২১. অস্ট্রেলিয়া ও
নিউজিল্যান্ডে কাজ
ব্যবসা শিক্ষা শাখার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের অস্ট্রেলিয়াতে বিশেষ চাহিদা রয়েছে।
তাই হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা স্কিল মাইগ্রেশনের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি গ্রহণ করছেন।
আইটি বিষয়ে পড়াশোনা করছেন এমন বাংলাদেশিদের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় কাজের জন্য আবেদন করার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।
এছাড়া অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে রন্ধনশিল্পীদের উচ্চবেতনে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
দক্ষ শেফরা বড় বড় হোটেল–রেস্টুরেন্টে কাজ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় যেতে পারেন।
Conclusion:
পৃথিবীতে নামক ছোট্ট এই গ্রহে যেমন বেড়েছে মানুষের সংখ্যা, তেমনি বেড়েছে কর্মক্ষেত্রও । সঠিক জ্ঞান এবং দক্ষতার মাধ্যমে, মানসিক ইচ্ছায় কাজ খুঁজে পাওয়া কঠিন নয়।
Last Line: বাংলাদেশে বিদ্যমান কর্মক্ষেত্রসমূহ (Existing workplaces in Bangladesh)