আমরা সবাই সৌরজগতের কথা জানি। আমরা জানি যে সূর্য আর গ্রহদের নিয়ে যেন একটা পরিবারের মতো রয়েছে সৌরজগৎ। আর সেই সৌরজগতের কেন্দ্রে রয়েছে সূর্য। পৃথিবী আর অন্য গ্রহগুলো তাকে ঘিরেই ঘুরছে। এই কথাটা এখন সবার জানা হলেও পাঁচশো-ছয়শো বছর আগে মানুষের অন্যরকম ধারণা ছিল।
নিকোলাস কোপার্নিকাস (Nicholas Copernicus)
আজ থেকে প্রায় পাঁচশো বছর আগে নিকোলাস কোপার্নিকাস (Nicholas Copernicus) নামে এক বিজ্ঞানী এই ভুল ধারণা দূর করেন। তাঁর কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। আর গোড়ার দিকে লোকে তাঁর কথা মেনেও নেয়নি। তাঁর মৃত্যুর অনেক পরে লোকে বুঝেছিল যে তিনি ঠিক কথাই বলে গেছেন।
জার্মানির থর্ন শহরে ১৪৭৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জন্ম হয় কোপারনিকাসের। থর্ন তখন পোল্যান্ডের অধীনে। জন্মের দশ বছর পরে বাবার মৃত্যু হওয়ায় তিনি মানুষ হন মামা লুকাসের কাছে। নিকোলাস তখন ওদেশের একজন যাজক।
সতেরো বছর বয়সে কোপারনিকাস ক্রাকাউ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করেন। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন গির্জায় কাজ নেবেন। কিন্তু পরে মনে হল, না লেখাপড়াই করতে হবে। তাঁর ভালো লাগত আইন আর জ্যোতির্বিদ্যা।
এর কয়েক বছর পরই মামা লুকাসের মৃত্যু হয়। এবার তিনি গির্জার যাজক হন। সেখানে কাজের চাপ ছিল খুব। তবু তারই ফাঁকে ফাঁকে তিনি জ্যোতির্বিদ্যা আর গণিত চর্চা করতেন।
সেকালের ধর্মভীরু মানুষ ভাবত যে, এই পৃথিবী আল্লাহর সৃষ্টি। আর যা আল্লাহর সৃষ্টি তা নিশ্চয় সূর্যের চারদিকে ঘুরতে পারে না ।
তাকে কেন্দ্র করেই সূর্য ঘোরে। এ কথাও তখন বলা হতো যে, পৃথিবী সম্পূর্ণ গোল, একটা বলের মতো । আরও বলা হতো পৃথিবী স্থির, পৃথিবী নড়ে না।
এর প্রত্যেকটি কথাই যে ভুল সে কথা কোপারনিকাস অঙ্ক কষে প্রমাণ করেছিলেন । পৃথিবী যে পুরো গোল নয়, উত্তর-দক্ষিণে একটু চাপা সে কথা তিনিই প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন।
তাঁর বিখ্যাত বই ‘আবর্তন‘ বেরোবার পরেই ১৫৪৩ সালের ২১ মে কোপারনিকাসের মৃত্যু হয়। যুক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে আর বিজ্ঞানের শক্তি দিয়ে তিনি মানুষের অন্ধ বিশ্বাস দূর করে অমর হয়ে আছেন। এ কারণে কোপারনিকাসকে বলা হয় জোতির্বিজ্ঞানের জনক।
Source:
- https://mathshistory.st-andrews.ac.uk/Biographies/Copernicus/
- https://mathshistory.st-andrews.ac.uk/Biographies/Copernicus/
- https://www.encyclopedia.com/people/science-and-technology/astronomy-biographies/nicholas-copernicus
- https://www.britannica.com/biography/Nicolaus-Copernicus
- https://www.esa.int/Applications/Observing_the_Earth/Copernicus