ধূমপান ছাড়ার সহজ উপায় । The easiest way to quit smoking !
ধুমপান ছাড়তে চান, কিন্তু পারছেন না তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য ।
ধূমপান ছাড়তে গিয়ে অনেকেই মাঝপথে মনোবল হারিয়ে ফেলেন । তাই প্রথমেই বুঝিয়ে বলছি ধূমপান করলে আপনার শরীরের ভেতরে কি কি ঘটে । এতে আপনার ইচ্ছাশক্তি মজবুত হবে ।
আপনারা জানেন অক্সিজেন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না । আমাদের নিঃশ্বাসের সাথে অক্সিজেন প্রথমে ফুসফুসে যায়, সেখান থেকে ঢুকে যায় রক্তে ।
ফুসফুসে আছে কোটি কোটি বায়ু থলি । এই বায়ুথলি দিয়েই ফুসফুস থেকে অক্সিজেন রক্তে প্রবেশ করে । ধূমপান আপনার ফুসফুসের বায়ুথলিগুলোকে ধ্বংস করতে থাকে ।
একবার ধ্বংস হলে বায়ুথলি আবার নতুন করে তৈরি হয় না । কোটি কোটি বায়ু থলি থাকার কারণে কিছু নষ্ট হলে আমরা বুঝতে পারি না । তবে নীরবে ফুসফুসের ক্ষতি হতে থাকে।
দিনে দিনে অনেক পরিমান বায়ুথলি ধ্বংস হলে শ্বাসকষ্টের রোগ । এই শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তা থেকে আর পুরোপুরি সেরে ওঠার উপায় নেই । শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি ধুমপান ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় অন্তত 25 গুণ ।
শুধু ফুসফুস নয় শরীরের প্রায় সবখানে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে ধূমপান । মুখ, গলা, পাকস্থলী, লীভার, কীডনি, মুত্রথলী, জরায়ু এমন লম্বা একটি লিস্ট ।
কিছু ধুমপানকরীকে বলতে শুনেছি, ধুমপান তো মাত্র ঝুঁকি বাড়ায়, তার মানে হতেও পারে, নাও পারে । আমার হয়তো হবে না । এই চিন্তা যারা করেন তাদের জন্য দুইটা সংখ্যা তুলে ধরছি ।
-
১) যারা ধূমপান করে তাদের প্রতি দুজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু ঘটায় ধূমপান । অর্থাৎ জগতে যত মৃত্যুর কারণ আছে সে সবগুলো কারণ মিলে 50 জন ধুমপায়ীর মৃত্যু ঘটালে বাকি 50 জনের মৃত্যু ধূমপান একাই ঘটায় ।
-
২) ধূমপানকারীরা গড়ে 8 থেকে 10 বছর কম বাঁচে । অর্থাৎ আপনার অধূমপায়ী বন্ধু 70 বছর বাঁচলে আপনার বাঁচার সম্ভাবনা 60 থেকে ৬২ বছর ।
আবার কিছু ধূমপানকারী আছেন তারা বলেন, মৃত্যু যখন আসবে আসবেই । ক্যান্সারের ভয় করি না । যতদিন বেঁচে আছি ততদিন আনন্দে বাঁচতে চাই ।
এখানে সমস্যা হলো ধূমপান মৃত্যুর আগেও আপনার আনন্দ সহ্য করতে পারে না । অনেক ভাবে বাধ সাধতে পারে । কয়েকটা বলি !
-
প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়া । অর্থাৎ বাচ্চা হতে সমস্যা হওয়া ।
-
বাচ্চা হলে বাচ্চার শরীরে জন্মগত ত্রুটি থাকা ।
-
অল্প বয়সে চামড়ায় ভাঁজ পড়া ।
-
হাড় নরম হয়ে যাওয়া । যে কারণে সহজেই হাড় ভেঙে যেতে পারে ।
-
দাঁত, মাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়া, দাঁত পড়ে যাওয়া, চোখে ছানি পড়া ।
-
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া । যে কারণে করোনা হলে ঝুঁকি বেশি ।
ধুমপান হার্ট এ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় । এটা শুনলে অনেকেই বলেন, যারা ধূমপান করেনা তাদেরও তো হার্ট অ্যাটাক হয়, স্ট্রোক হয় ।
কথা ঠিক কিন্তু যুক্তি ভুল । ওই মানুষগুলোর যে ঝুঁকির কারণে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়, যেমন
-
হাই ব্লাড প্রেসার,
-
অতিরিক্ত ওজন,
আপনারও সেই একই কারণে হতে পারে । উপরন্তু ধূমপান করে আরও নতুন একটা ঝুঁকি যোগ করছেন ।
এই কথাগুলো শোনার পর কেউ কেউ বলেন, ধূমপানে আমার শরীরে যা ক্ষতি হওয়ার তাতো হয়েই গেছে, এখন আর ধূমপান ছেড়ে কোন লাভ হবে না ।
এটা সম্পূর্ণ ভুল একটা কথা । আপনি যতদিন ধরে ধূমপান করেন না কেন যেই মুহূর্ত থেকে আপনি ধূমপান ছাড়বেন তখন থেকেই আপনার শরীর নিজেকে মেরামতের কাজ শুরু করে দিবে ।
কি মেরামত করে ? শেষ সিগারেট খাওয়ার 20 মিনিটের মধ্যেই হার্টবিট আর ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকে । আটঘণ্টার মধ্যে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ স্বাভাবিক হতে শুরু করে ।
48 ঘণ্টার মধ্যে শরীর থেকে সব ক্ষতিকর কার্বন মনোক্সাইড দূর হয়ে যায় । নাকের ঘ্রাণ আর মুখের স্বাদ ফিরে আসে । ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শ্বাসতন্ত্র প্রসারিত হওয়া শুরু করে । ফলে শ্বাস নেয়া সহজতর হয়।
কখন সহবাস করলে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে !?? দেখুন বিস্তারিত
3 থেকে 9 মাসের মধ্যে ফুসফুসের ক্ষমতা দশ পার্সেন্ট পর্যন্ত বাড়তে পারে । এক বছর পর আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অর্ধেক নেমে আসে । পাঁচ বছরের মধ্যে মুখ, গলা, খাদ্যনালী আর মূত্রথলির ক্যান্সার এর ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে ।
জরায়ুর ক্যান্সার আর স্ট্রোকের ঝুঁকি একজন অধূমপায়ীর সমান হয়ে যায় । ১০ বছর পর ফুসফুসের ক্যান্সারে মৃত্যু হওয়ার ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে ।
আর 15 বছর পরে আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আর যে ব্যক্তি কখনো ধূমপান করেনি তার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি সমান হয়ে যায় । দারুন ব্যাপার তাইনা!
আশা করি আপনার ধূমপান ছাড়ার মনোবল শক্ত হয়েছে । এখন বলে দিচ্ছি ধূমপান ছাড়ার সাতটি পরামর্শ ।
-
সিগারেটে আর একটাও টান দেওয়া যাবে না । যখন আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন ধূমপান ছাড়বেন, তারপর থেকে আর একটাও সিগারেট ব্যবহার করবেন না ।
গবেষণায় দেখা গেছে, জাস্ট একটা সিগারেট বা শুধু একটা টান নিব এমন চিন্তা থাকলে ধূমপান ছেড়ে দেওয়া খুব দুরূহ হয়ে পড়ে । একটা টান দেওয়ার পরে বেশিরভাগ ধূমপানকারী আবার আগের মতো ধূমপানের ফেরত চলে যায় ।
তাই আপনার শক্ত থাকতে হবে যে একটা সিগারেটও ব্যবহার করা যাবে না । যেসব জিনিস দেখলে আপনার ধূমপান করতে মন চাইবে যেমন, সিগারেট, লাইটার, এ্যাস্ট্রে, সেগুলো সরিয়ে ফেলবেন ।
যেসব জায়গায় আপনি ধূমপান করতেন, পারলে সেখানে যাওয়া আসা এড়িয়ে চলবেন । যেই সময় আপনি সাধারণত ধুমপান করতেন সেই সময় নিজেকে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখবেন ।
যেমন আপনি যদি সন্ধ্যার খাবার পড়ে সিগারেট খান তাহলে হয়তো আপনি খাওয়ার পরে সোজা উঠে বাসন–কোসন ধুতে চলে যাবেন ।
কিছু খাবার ধূমপান এর স্বাদ বাড়িয়ে দেয় এবং আরও আকর্ষণীয় করে তোলে, সেগুলো হলো মাংস, চা–কফি, কোমল পানীয় ইত্যাদি । এগুলো পরিহার করবেন ।
আবার কিছু খাবার ধুমপানের স্বাদকে বিশ্রি বানিয়ে ফেলে । যেমন, ফলমূল, শাকসবজি । তাই এগুলো বেশি বেশি খাবেন ।
-
ধুমপান বন্ধ করলে প্রথম কিছুদিন আপনার খারাপ লাগবে । এই খারাপ লাগা কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনা আগে থেকেই তৈরি করতে হবে ।
শরীরের যে সমস্ত বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো অস্থির লাগা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, ক্লান্ত লাগা, ঘুমের সমস্যা, কোষ্টকাঠীন্য, কোনো কাজে মনোযোগ না দিতে পারা ।
এগুলো দেখা দিলে ঘাবড়ে যাবেন না । জানবেন এগুলো স্বাভাবিক এবং কিছুদিনের মধ্যেই সেরে যাবে । নিজেকে মনে করিয়ে দিবেন এই খারাপ লাগার সময় আপনার শরীরের কত উপকার হচ্ছে ।
একটু বলে আগে বলেছি প্রথম কয়দিনে শরীরে কি কি পরিবর্তন ঘটে ।
-
ধূমপানে ইচ্ছা দমন করার উপায় বের করে রাখতে হবে ।
যখন সিগারেটে একটা নাম দিতে খুব ইচ্ছা করবে, তখন সেটা ঠেকানোর চেষ্টা করবেন । এই তাড়ণা দুই মিনিটের মাথায় সবচেয়ে প্রবল হয় । তাই নিজের মনকে অন্যদিকে নিতে হবে । কিভাবে করতে পারেন ??
তিনটা উপায় বলছি…
-
১) একজন বন্ধু নির্ধারণ করে রাখবেন, যাকে ধূমপানের ইচ্ছা হলে কল দিবেন । সে আপনাকে ধূমপান না করার জন্য উৎসাহ দিবে বা আপনার প্রিয় কোন বিষয়ে গল্প শুরু করবে ।
-
২) যে কারণে আপনি ধূমপান ছাড়তে চান সেটার কথা চিন্তা করেন । যদি সেটা হয় আপনার ছোট মেয়ের জন্য, তাহলে সাথে তার একটা ছবি রাখতে পারেন এবং সেটা দেখতে পারেন ।
যদি কিছু দিনের মধ্যে বাচ্চা নেয়ার পরিকল্পনা করে থাকে নিজেকে মনে করিয়ে দিন এই ধূমপানের কারণে আপনার বাচ্চার শরীর ত্রুটি নিয়ে জন্মাতে পারে ।
-
3) বাইরে থেকে একটু হেঁটে আসতে পারেন, তবে হাটতে গেলে যদি আবার থেকে দোকান থেকে সিগারেট কিনে খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে এই পদ্ধতি বাদ দিয়ে অন্য গুলো চেষ্টা করতে হবে ।
-
4) ধূমপায়ী বন্ধুদের চাইতে ধুমপান করেনা বা ধুমপান ছেড়েছে, এমন বন্ধুদের সাথে বেশি সময় কাটাবেন । কেউ আপনাকে ধূমপান করতে বললে তাকে কিভাবে না করবেন সেটা চিন্তা করে রাখবেন । বলতে পারেন আমি ধুমপান ছেড়ে দিয়েছি, বা ধন্যবাদ । আমি ধুমপান করি না ।
আর এমন বন্ধু যদি থাকে যারা ধুমপান ছাড়তে সফল হয়েছে তাদের কাছ থেকে শুনতে পারেন যে তারা কি কি উপায় অবলম্বন করেছিল ।
-
৫) নিয়মিত ব্যায়াম করবেন । প্রতিদিন 5 মিনিট করে ব্যায়াম করলেও তা ধুমপানের ইচ্ছা কমাতে সাহায্য করতে পারে ।
-
6) কিছু ওষুধ, নিকোটিন প্যাচ্স, ইনহেলার, স্প্রে, আপনাকে সাহায্য করতে পারে । এগুলো ধূমপানের তাড়ণা কমাবে ।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যেটা আপনার জন্য ভালো হয়, সেটা শুরু করতে পারেন ।
-
৭) ছেড়ে দেয়ার পরে আবার ধূমপান করলে নিরাশ হবেন না । আপনি একা নন সিংহভাগ ধুমপায়ী প্রথম চেষ্টায় ধূমপান ছাড়তে ব্যর্থ হন । যারা ধূমপান ছেড়েছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগই সফল হয়েছেন কয়েকবার চেষ্টা করার পরে ।
তাই আপনি ছাড়া প্রক্রিয়া শুরু করার পরে কোন কারণে যদি একবার ধূমপান করেও ফেলেন নিরাশ হবেন না । কোন পরিস্থিতিতে আপনি আর নিজেকে আটকাতে পারেননি, সেটা যাচাই করবেন । যাতে একই ভুল আর না হয় ।
Conclusion:
আমার পরামর্শ কাজে না আসলে আপনার পছন্দের একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন । তবে ধূমপান বন্ধ না করে হাল ছাড়বেন না । আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি । শীঘ্রই পরের প্রতিবেদনে কথা হবে । আশা করছি আপনি আমাদের ধূমপান ছাড়ার সহজ উপায় । The easiest way to quit smoking প্রতিবেদনটি পড়ে ধুমপান ত্যাগ করতে পারবেন। ধন্যবাদ ।