
আজকাল বলতে গেলে
পররাজ্য দখল করার নীতি ও রীতি উঠেই গেছে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি
উপনিবেশ বাদীদের চোখ খুলে দিয়েছে। তাই তারা নিজেরাই জাতিসংঘ সনদ-এর মাধ্যমেই
পররাজ্য দখল নীতি পরিহার করেছে।
ডিফেল্স বাজেট এবং জাতীয় দারিদ্র্যতা ।
Default budget and national poverty !
তার বদলে
আর্থ-বাণিজ্যিক-মহাজনী সাম্রাজ্যবাদ আশ্রিত হয়েছে। মার্শাল-পরিকল্পনা অনুযায়ী
দুস্থরাষ্ট্রে ধন দিয়ে, জন দিয়ে, সেবা দিয়ে, ত্রাণ দিয়ে, গণসেবার মাধ্যমে
মিত্র ও বন্ধু রাষ্ট্রে সদাগরীর পণ্য চালানাের এক সৃক্ষ্ম ও অভিনব পন্থা আবিষ্কার,
উদ্ভাবন, নির্মাণ ও চালু করেছে। এ হচ্ছে ছেলের হাতে মােয়া দিয়ে মা-বাবার
মনভােলানাে নীতিরই অনুসৃতি ও অনুকৃতি।
আজকাল
রাজ্য-সাম্রাজ্য বিস্তারের দিন অপগত। আজকাল বিজ্ঞানের প্রসাদপুষ্ট জীবনযাপন পদ্ধতি
মানুষের প্রাণ-মন-মনন প্রভৃতির ধারা বদলে দিয়েছে। ফলে আনুগত্য, দাসত্ব, অধীনতা
প্রভৃতি এ কালের কোনাে ব্যক্তি মানুষেরও রুচিসম্মত জীবনচেতনার অঙ্গ নয়।
তাই গােটা পৃথিবীর
সর্বত্র কুইবেক, উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রভৃতির মতাে গােষ্ঠীগত, গােত্রগত, ভাষাগত,
শাস্ত্রগত, অঞ্চলগত স্বাতন্ত্র্যচেতনা অত্যন্ত প্রবল হয়ে উঠেছে।
ফলে সবাই এখন
বিচ্ছিন্নতার প্রত্যাশী ও প্রবক্তা। স্বায়ত্তশাসন, স্বাধীনতা, স্বাতন্ত্র্য
প্রীতি সর্বত্রই প্রকট রূপ ধারণ করেছে এক কথায় জাত,
জন্ম, বর্ণ, ধর্ম, ভাষা, নিবাস, গােষ্ঠী, গােত্র, অঞ্চল ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের,
রাষ্ট্র সৃষ্টির দাবি উঠেছে পৃথিবীর সর্বত্র।
আফ্রিকা-
ইউরোপ-এশিয়া-অস্ট্রেলিয়া কিংবা পশ্চিম গােলার্ধ এ ক্ষেত্রে প্রায় অভিন্ন
সংকট-সমস্যার ও দাবির সম্মুখীন। সবাইকে
স্বাতন্ত্র্যে স্বাধিকারে, স্বপ্রতিষ্ঠ হওয়ার অধিকার দানই তাে বিবেকসম্মত ন্যায্য
ব্যবস্থা। তা হলে তাে আর ডিফেন্স ব্যবস্থার প্রয়ােজনই থাকে না। ডিফেন্স বাজেটও
প্রয়ােজন হয় না।
আমরা যেমন গৃহস্থ হিসেবে
স্বতন্ত্র ও বিচ্ছিন্ন থেকেও লেনদেনে, পণ্য বিনিময়ে, শ্রমে ও কর্মে পরস্পরের
সহযােগী হয়ে সহযােগিতায় সহাবস্থান করছি, তেমনি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রও
সহযােগিতায় টিকে থাকতে পারবে। এতে বােঝা যায় পৃথিবীতে একটা মানসবিপ্লব ঘটে গেছে।
মানুষ আগের মতাে
অর্থে-বিত্তে বিদ্যায়-দেহে কিংবা জনবলে হীন হলেও মনােবলে আত্মসত্তার মূল্য ও
মর্যাদা বােধে ঋদ্ধ ও পুষ্ট হয়েছে। তাই সে স্বাতন্ত্র্যে ও স্বাধীনতায়
স্বাধিকারে স্বপ্রতিষ্ঠ হতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
তারই ফলে বিশ্বের বহু বহু রাষ্ট্রে চলছে গৃহযুদ্ধের আকারে গৌষ্ঠীক,
গৌত্রিক, ভাষিক, বার্ণিক, শাস্ত্রিক, আঞ্চলিক দ্রোহ, সংগ্রাম, আন্দোলন,
গেরিলাযুদ্ধ। গােপনে মদদ জোগাচ্ছে পৃথিবীর কোনাে কোনাে বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্র স্বার্থবশে।
পৃথিবীর সেভেন গ্র্যাট রাষ্ট্রের ছয়টিই তাে অস্ত্র বিক্রেতা।
তৃতীয় বিশ্বের প্রায় সব রাষ্ট্রই দরিদ্র এবং বিজ্ঞানে ও বাণিজ্যে আনাড়ি।
তারা নিজেরাও জানে যুদ্ধ করে জয়ী হবার শক্তি-সামর্থ্য নেই, আর্থিক, দৈহিক কিংবা
সামরিক শক্তি তাদের নেই।
তবু তারা মুরুব্বী শক্তিগুলাের হুকুমে ও পরামর্শে প্রতিবছর অস্ত্র কেনে।
সে- অস্ত্র কাজে লাগে না। তার কিছুটা মাত্র প্রজাশাসনে, প্রজার দ্রোহ দমনে কিংবা
রাষ্ট্র’ অভ্যন্তরে দ্বিদলীয় বা ত্রিদলীয় দ্বন্দে, সংঘর্ষে ও সংঘাতে কাজে লাগে
মাত্র।
অর্থাৎ শত্রুর সঙ্গে লড়াইয়ের প্রয়ােজনে নয়, রাষ্ট্রের সীমা ও স্বাধীনতা
রক্ষার গরজে নয়, কারণ সে-শক্তি তাদের নেই- এমন কি প্রজার দ্রোহ দমনের লক্ষ্যেও
নয়- ঋণ-দান-অনুদান-ত্রাণদাতা মুরুব্বী রাষ্ট্রের মুখ্য ব্যবসায়ীপণ্য অস্ত্র
ক্রয় প্রায় বাধ্যতামূলক বলেই তৃতীয় বিশ্বের দুস্থ দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোে ঋণের
টাকা দিয়ে অস্ত্র ক্রয় করে প্রতি বছর।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুকৌশলে দ্বন্দ-সংঘর্ষ জিইয়ে রেখে অনুগত
রাষ্ট্রগুলােকে অ অস্ত্র ক্রয়ে উত্তেজনা-উদ্দীপনা জোগায়। ফলে বাজেটের এক
তৃতীয়াংশ বৃথা ব্যয় হয় অস্ত্র ক্রয়ে প্রতি বছর ।
এ জন্যে তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলাে উন্নয়ন খাতে ব্যয় করতে পারে না
অর্থ। পুঁজির অভাবে রাষ্ট্রের আর্থিক বৃদ্ধি আসেই না- দারিদ্রতা থাকে বরং
নিত্যসঙ্গী, বাড়তে থাকে ঋণ, চক্রবৃদ্ধির হারে পরিশােধ করতে হয় বার্ষিক সুদ। আসল
ঋণ ও সুদই কেবল বাড়ে।
ফলে, রাষ্ট্রের দারিদ্রতাও বাড়ে। এমনি গরিব এক রাষ্ট্র বাঙলাদেশও। আমরা
কেন অস্ত্র ক্রয় করি? কারাে সঙ্গে যুদ্ধ করার মতাে আর্থিক সঙ্গতি কি আমাদের আছে?
যা প্রয়ােগ করা যাবে না, যা প্রয়ােজনে লাগবে না, তা আমরা ক্রয় করব কেন?
রাষ্ট্রের অধিবাসী বিরােধী দলের শাসনপাত্রদের মারার জন্যে, হানার জন্যে ভারী
অন্ত্রের দরকার আছে কি?
আর প্রতিবেশী কোনাে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রয়ােজনে যুদ্ধ করার মতাে লক্ষ
লক্ষ সৈন্য পােষা, ভারী ভারী অস্ত্র, জল-স্থল বায়ুযান ক্রয় কি তৃতীয় বিশ্বের
কোনাে রাষ্ট্রের আছে? শােনা যায় এমন যে অঢেল তেলওয়ালা
সৌদি সরকার মুরুব্বীর হুকুম ও পরামর্শ তামিল করতে গিয়ে আর্থিকভাবে নাকি আক্ষরিক
অর্থেই পথে বসেছে।
সত্য-মিথ্যা যাচাই করার সাধ্য অবশ্য আমাদের নেই। আমরা জানি সােভিয়েত
রাশিয়ার বিলুপ্তির পর থেকে মার্কিন রাষ্ট্র এখন জগদিন্দ্র জগদীশ্বর। তার হুকুমের
হুংকারে হুমকির ও হামলার আওতায় এসে গেছে গােটা পৃথিবী অন্তত তৃতীয় বিশ্বের
রাষ্ট্রগুলো।
এ অবস্থায় ও এমনি অবস্থানে তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলাের উচিত আত্মকল্যাণ
বাঞ্ছায় জাতিসংঘের শান্তি বাহিনীর আশ্রিত হওয়া, নিজেদের কোনাে সামরিক বাহিনী
রাখা নয়। তা হলে তথাকথিত এ কেজো ‘ডিফেন্স বাজেট নামে প্রায় এক তৃতীয়াংশ সম্পদ
বছর বছর বিনষ্টি থেকে রক্ষা পাবে।
অর্থ জনগণের আর্থিক কল্যাণে কিংবা শিক্ষা-স্বাস্থ্য-চিকিৎসা ও অর্থোপার্জন
ব্যবস্থায় ব্যয় হতে পারবে।
তৃতীয় বিশ্বের সরকারগুলাে কি এ সৎপরামর্শ শুনবে বা শুনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের
শক্তি বা অধিকার রাখে? অস্ত্র-জলযান-স্থলযান-বায়ুযান যাদের প্রধান পণ্য, আয়ের
মুখ্য উৎস সেসব পরাশক্তি ভিটোপ্রয়ােগের অধিকারীশক্তি বিশ্বের রাষ্ট্রগুলাের
অভিভাবকত্বের, তত্ত্বাবধানের, নজরদারির ও তদারকির স্বেচ্ছাবৃত অধিকারী।
Conclusion:
সে রাষ্ট্রগুলাে এবং তাদের গােপন অ্যাজেন্টরূপী অস্ত্র ব্যাপারী
রাষ্ট্রগুলো কি পৃথিবীকে রক্তপাতমুক্ত যুদ্ধশূন্য রাখবে? তা যে তাদের পক্ষে
আত্মহননের শামিল! অথচ মানবিকতার, মানবতার, মনুষ্যত্বের, বিশ্বশান্তির, আমজনতার
দাবি হচ্ছে অস্ত্রমুক্ত রক্তঝরা প্রাণহরা যুদ্ধমুক্ত পৃথিবী।
Last line: ডিফেল্স বাজেট কি এবং জাতীয় দারিদ্র্যতার সাথে সম্পর্ক কী । What is Default budget and What relationship with national poverty