কয়েক বছর আগেও রেলগাড়ি টেনে নিয়ে যেত বাষ্পচালিত ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিনের এমনই শক্তি যে, একটা বড় আর লম্বা রেলগাড়িকে সে সহজেই খুব দ্রুত টেনে নিয়ে যেতে পারে। এই ইঞ্জিন তৈরি করে বিখ্যাত হয়ে আছেন জেমস ওয়াট নামে একজন ইঞ্জিনিয়ার।
জেমস ওয়াট (James Watt)
জেমস ওয়াট (James Watt) এর জন্ম হয়েছিল স্কটল্যান্ডে ১৭৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি। বাবা ছিলেন সেই দেশের একজন জাহাজ ব্যবসায়ী।
ছোটবেলায় কাঠ, লোহা আর যন্ত্রপাতি নিয়ে খেলার ছলে জেমস নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন।
শোনা যায় একদিন একটা পানি ভরতি কেতলি চুলায় চাপানো ছিল। পানি ফুটে উঠতেই কেতলির ঢাকনিটা বারবার আলগা হয়ে পড়ে যাচ্ছিল।
এ থেকে ওয়াট বুঝতে পারলেন যে, বাষ্পের একটা মস্ত শক্তি আছে। আর সেই শক্তিকে বড় বড় যন্ত্র বা গাড়ি চালানোর কাজে মানুষ ব্যবহারও করতে পারে।
এই থেকেই নাকি ইঞ্জিন তৈরির কথাটা তাঁর মনে আসে। অবশ্য এই গল্পটা সত্যি কিনা তা বলা যায় না।
কারণ, মোটরগাড়ি আবিষ্কারক হেনরি ফোর্ডের বেলায়ও একই রকম গল্প বলা হয়। সে যাই হোক, এটা ঠিক যে, ছেলেবেলায় জেমস ওয়াট নানারকম যন্ত্রপাতি নিয়ে নাড়াচাড়া করতেন।
Advertisements
ছেলেবেলায় জেমসের স্বাস্থ্য ভালো ছিল না। প্রায়ই একটা ভয়ানক মাথাব্যথায় কষ্ট পেতেন আর স্কুলও কামাই হতো খুব। তাই বেশির ভাগ পড়াশুনোটা বাড়িতেই হতো। খুব পড়তে ভালোবাসতেন জেমস ওয়াট।
অল্প বয়সেই অনেক বড় বড় বই পড়ে ফেলেছিলেন। তবে বাবার ব্যবসায় একবার অনেক লোকসান হয়ে যাওয়ায় তাঁকেও রোজগারের কথা ভাবতে হল।
লন্ডন শহরে এসে কারিগরি কাজ শিখতে শুরু করলেন জেমস। পরে গ্লাসগো শহরে এসে একটা কারিগরির দোকানও খুলে ফেললেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র বিশ বছর।
এইসময় তাঁর সঙ্গে রবিনসন নামে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রের পরিচয় হয়। তাঁরা দু’জনে ক্রমে খুব বন্ধু হয়ে গেলেন।
দুই বন্ধুতে প্রায়ই আলোচনা করেন বাষ্প নিয়ে আর কীভাবে বাষ্পশক্তিকে বেশি করে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে।
১৭৬৪ সালে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে জেমস ওয়াটের নজরে এলো বাষ্পীয় ইঞ্জিনের একটা মডেল। মডেলটা তৈরি করেছিলেন নিউকোমেন নামে একজন ইঞ্জিনিয়ার।
এই মডেলটা দেখার পর থেকে ওটাই হয়ে দাঁড়াল জেমস ওয়াটের ধ্যানজ্ঞান।
দিন-রাত তিনি ভাবতে লাগলেন, কীভাবে ওই মডেলের চাইতেও ভালো একটা ইঞ্জিন বানানো যায়।
নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবার পর ১৭৬৫ সালে জেমস ওয়াট একটা ইঞ্জিন সত্যি সত্যিই তৈরি করে ফেললেন।
তবে ওটার কিছু ত্রুটি ছিল। সেসব ত্রুটি দূর করে আরও ভালো ইঞ্জিন তৈরির চেষ্টা করতে লাগলেন তিনি।
শেষে ১৭৬৮ সালে তৈরি করলেন অনেক ভালো আর শক্তিশালী একটা ইঞ্জিন যাকে মানুষ ইচ্ছে করলে অনেকভাবে কাজে লাগাতে পারে।
জেমস ওয়াট পরে তাঁর ইঞ্জিনের সঙ্গে অনেকরকম যন্ত্রপাতি জুড়ে দেন। হাওয়া ঢোকাবার আর বার করে দেবার যন্ত্র, সিলিন্ডাশ, বাষ্পকে তরল করার যন্ত্র—এসবই ছিল তাঁর ইঞ্জিনে।
ভেবে দেখো, আজ থেকে কত বছর আগে তিনি ইঞ্জিন তৈরি করেছিলেন। এই ইঞ্জিন তৈরি করতে তাঁকে অনেক টাকা ধার করতে হয়েছিল।
এই ইঞ্জিনকে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করেই পরে জেমস স্টিভেনসন তৈরি করেছিলেন রেলগাড়ির ইঞ্জিন।
জেমস ওয়াট শুধু ইঞ্জিনই তৈরি করেননি, আরও নানা রকম যন্ত্রপাতিও তিনি তৈরি করেছিলেন। তবে ইঞ্জিনের জন্যেই তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন।
Source:
- https://www.bbc.co.uk/history/historic_figures/watt_james.shtml
- https://www.egr.msu.edu/~lira/supp/steam/wattbio.html
- https://digital.nls.uk/scientists/biographies/james-watt/index.html
- https://www.universitystory.gla.ac.uk/biography/?id=WH0018&type=P
- https://scienceonstreets.phys.strath.ac.uk/new/James_Watt.html
Advertisements