জর্জ স্টিভেনসন (George Stevenson): রেল ইঞ্জিন আর রেলগাড়ির আবিষ্কারের ফলে আমাদের যে কত উপকার হয়েছে সে কথা বলে শেষ করা যায় না।
এখন অবশ্য ডিজেল ইঞ্জিন আর ইলেকট্রিক ইঞ্জিনই দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু একসময় কয়লার ইঞ্জিনই সারা পৃথিবীতে চলত।
এই কয়লার রেলইঞ্জিন তৈরি আর রেললাইনের উপর দিয়ে প্রথম রেলগাড়ি চালানোর কৃতিত্বটি স্কটিশ বিজ্ঞানী জর্জ স্টিভেনসন (George Stevenson) । এখন তাঁর কথাই বলব।
Advertisements
জর্জ স্টিভেনসন (George Stevenson)
 |
জর্জ স্টিভেনসন |
১৭৮১ সালে জর্জ স্টিভেনসনের জন্ম হয় এক অতি দরিদ্র পরিবারে। এতই দরিদ্র ছিলেন তাঁরা যে, টাকার অভাবে লেখাপড়াও শিখতে পারেননি।
বাবা সামান্য কাজ করতেন একটা কয়লার খনিতে। তাঁর সঙ্গেই মাঝে মাঝে খনিতে যেতেন জর্জ। আর তার ফলে খনির কাজ অল্প বয়সেই বেশ খানিকটা শিখে গিয়েছিলেন।
শেষে একসময় জর্জের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে বাবার কাজটা জর্জই পেয়ে গেলেন। তাঁর তখন বয়েস দশ কি এগারো মাত্র।
খনিতে একটা ইঞ্জিন ছিল। বাষ্পচালিত সেই ইঞ্জিন দিয়ে কয়লার বালতি খনি থেকে মাটির উপরে টেনে তোলা হতো। এই ইঞ্জিনটি জর্জের মনোযোগ আকর্ষণ করল।
আগে থেকেই বাষ্পচালিত ইঞ্জিন নিয়ে তাঁর অনেক কৌতূহল ছিল। তিনি জানতেন যে ১৭৯৬ সালে জেমস ওয়াট একটা বাষ্পচালিত ইঞ্জিন তৈরি করেছিলেন।
সেই ইঞ্জিনকে নানা কাজে লাগানোও হচ্ছিল। তবে জেমস ওয়াটের ইঞ্জিন চলতে পারত না, আর তার শক্তিও কম ছিল।
জর্জ স্টিভেনসন ভাবতেন কীভাবে এই ইঞ্জিনকে আরও শক্তিশালী করা যায়, আর তাকে এক জায়গা থেকে অন্য আর এক জায়গায় চালিয়ে নেয়া যায়।
কিন্তু ইঞ্জিন নিয়ে কৌতূহল থাকলেও জর্জ যে তখন খনির শ্রমিক। তাঁর বয়েসও খুব কম, আর লেখাপড়াও তিনি জানতেন না।
কিন্তু তাই বলে হাল ছেড়ে দেয়ার পাত্র নন তিনি। এক নৈশ বিদ্যালয়ে নিয়মিত গিয়ে পড়াশুনো শিখতে লাগলেন। কঠোর পরিশ্রম করতে হতো তাঁকে।
সারাদিন খনির কাজ, আর রাতে লেখাপড়া। এভাবে কয়েক বছর কেটে যাবার পরে শুধু সাধারণ লেখাপড়াই নয়, বিজ্ঞানের অনেক কিছুই জর্জ স্টিভেনসন শিখে ফেললেন, শিখে ফেললেন জেমস ওয়াটের বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের খুঁটিনাটি।
Advertisements
যখন তাঁর বয়েস তেত্রিশ বছর তখন, ১৮১৪ সালে জর্জ স্টিভেনসন তৈরি করলেন একটা ছোটমতো ইঞ্জিনগাড়ি—যা ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটার বেগে আর একটা ওয়াগনকে টেনে টেনে নিয়ে যেতে পারে।
এরপর যে কয়লাখনিতে তিনি কাজ করতেন সেখানে রেললাইন পেতে তার উপর দিয়ে ওই ওয়াগন সমেত ইঞ্জিনগাড়ি চালিয়ে দেখালেন সবাইকে।
অবাক হয়ে লোকে শুধু দেখলই না, এইরকম ইঞ্জিনগাড়ি আরও তৈরি করে দেয়ার জন্যে চারদিক থেকে অনুরোধ আসতে লাগল।
এরপর ইংল্যান্ডের রাজা স্বয়ং তাঁকে বললেন স্টকটন আর ডার্লিংটনের মধ্যে ৫৮ কিলোমিটার পথে রেললাইন বসাতে হবে।
কয়েক বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে স্টিভেনসন এই কাজ সম্পূর্ণ করলেন। এবার কিন্তু একটা ছোটখাটো যাত্রীগাড়িই ওই রেললাইনের উপর দিয়ে চালালেন তিনি।
গাড়ির গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার। ১৮২৫ সালে এই ঘটনাটা ঘটে বহু লোকের চোখের সামনে।
আর তারপর পৃথিবীর নানা জায়গা থেকে জর্জ স্টিভেনসনের ডাক আসতে লাগল রেলইঞ্জিন আর রেলপথ তৈরি করার জন্যে।
স্থলপথে মানুষ আর মালপত্র দ্রুত এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় পাঠানোর কাজটা রেলগাড়ির সাহায্যে চলছে সারা পৃথিবী জুড়ে।
এর জন্যে আমরা সবাই জর্জ স্টিভেনসনকে চিরদিন মনে রাখব। তিনিই এই কাজটি সম্ভব করেছেন।
১৮৪৮ সালে স্টিভেনসনের মৃত্যু হয়।
Source
জর্জ স্টিভেনসন (George Stevenson)
Advertisements