এখন দেখা যাচ্ছে, বয়স ৩০ বছর পেরােনাের আগেই চুল পড়ার প্রবণতা। অন্তত ৩০ শতাংশ মানুষ এই সমস্যায় ভােগেন। ৩০ বছর বয়সের পর এই হার দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। চুল পড়া একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে নির্দিষ্ট ধারায় চুল পড়ার ধরনটি বংশগতির সঙ্গে সম্পর্কিত। কিছু ক্ষেত্রে ভুক্তভােগী নিজেও এর জন্য দায়ী।
চুল কেন পড়ে ? (Why hair loss)
Advertisements

টাক পড়ার কারণ (Causes of baldness)
চুল পড়ার নানা রকম কারণ সম্পর্কে জানালেন ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের ডার্মাটোলজি এবং ভেনােরােলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট অধ্যাপক হাসিবুর রহমান।
- চুল পড়ার বিষয়টি সাধারণত আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ধরনের সঙ্গে জড়িত। রাত জাগা, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকা এবং হতাশাজনক জীবন যাপন করা চুল পড়ার অন্যতম কারণ ।
- চুলে বিভিন্ন ধরনের কাটছাঁট করার কারণেও চুল পড়ে। চুলে জেল দেওয়া, আয়রন করা, রং করা, কোঁকড়া ইত্যাদি করলে চুল পড়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
- পুষ্টি আরেকটি বিষয়। বাইরের খাবারে প্রচুর চর্বি ও চিনি থাকে। তরুণ-কিশােরেরা বাইরের খাবারের প্রতি বেশি আগ্রহী। হওয়ার কারণে চুল পড়ার গল্পও শােনা যাচ্ছে বেশি।
- ওজন কমাতে ডায়েট করার দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই, যা চুল পড়ার অনেক কারণের মধ্যে একটি। শরীরে পুষ্টির অসম্পূর্ণতা দেখা দেয়। বিশেষ করে আমিষের ঘাটতি চুলের গঠনে সহায়তা করে আমিষ, চর্বি, শর্করা ও পানি। চুলের প্রায় ৯০ শতাংশ হচ্ছে আমিষ। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডালজাতীয় খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়ায় চুল পড়ার কারণ।
- ধূমপান চুল পড়ার হার বাড়িয়ে দেয়।
- ঘন ঘন শ্যাম্পু করলে চুল পড়ে। চুলের গঠনে আমিষ থাকে, যা শ্যাম্পুর ক্ষারের সংস্পর্শে এলে ভেঙে যায়। এতে চুল গােড়া থেকে ঠিক থাকলেও সামনের অংশ ভেঙে যায়।
- হরমােন ও থাইরয়েডের সমস্যার কারণে চুল পড়ে। থাইরয়েডের চিকিৎসার জন্য যে ওষুধ দেওয়া হয়, সেটার কারণেও চুল পড়ে।
- চুল পড়ার আরেকটি কারণ তাপমাত্রা। পরিবেশের ভিন্ন তাপমাত্রার কারণে মাথার ত্বক গরম হয়ে যায়। এ কারণেও অধিক হারে চুল পড়ে।
- বাসাবাড়ির পানির ট্যাংকে বেশি মাত্রায় ক্লোরিন বা ব্লিচিং পাউডার থাকে। এটাও চুল পড়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।
- স্যাভােরিক অ্যাক্সিমা, সােরিয়াসিস ইত্যাদি রােগে চুল পড়ে যায়।
- খুশকির কারণেও চুল পড়ে যায়।
চুল পড়া ঠেকাতে যা করনীয় (What to do to prevent hair loss)
যেকোনাে সমস্যার শুরুতেই সেটার সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। কী কারণে চুল পড়ছে, তা শুরুতে জেনে সেই অনুযায়ী যত্ন নিতে হবে। চুল পড়া রােধের প্রথম শর্ত হচ্ছে শরীরের ভেতর ও বাইরে উভয় দিক থেকে যত্ন নেওয়া, এমনটাই জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি। |
- চুল পড়া বন্ধে পেঁয়াজের রস দারুণ কাজ করে। চুল পড়া বন্ধের পাশাপাশি নতুন চুলও গজাবে। গােসলের এক ঘণ্টা আগে পেঁয়াজের রস চুলের গােড়ায় ঘষে ঘষে লাগান। এরপর ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- চুলের গােড়ায় আমলকীর তেল ঘষে ঘষে লাগান। আধা ঘণ্টা রাখুন, তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আধা কাপ মেথি সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে বেটে চুলে লাগান । ১ ঘণ্টা পর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- ডিমের কুসুম ভালাে করে ফেটিয়ে নিন। চুলের গােড়ায় গােড়ায় তা লাগান। এরপর ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নারকেলের তেল সামান্য গরম করে চুলের গােড়ায় মালিশ করুন। ১ ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। ঘরােয়া প্যাকগুলাে সপ্তাহে ২-৩ দিন নিয়ম মেনে চর্চা করলে চুল পড়া কমবে।
চুল পড়া কমাতে জীবনযাপনে পরিবর্তন (Lifestyle changes to reduce hair loss)
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হাসিবুর রহমান বলেন, জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা খুব দরকার। এর জন্য রাত না জাগা, খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করা, মানসিক দুশ্চিন্তা, হতাশা কমানাে, যতটা সম্ভব আনন্দে এবং প্রাণবন্ত থাকার চেষ্টা করা ইত্যাদি কাজ করতে হবে নিয়মিত।
আমিষযুক্ত খাবার মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ও ডালজাতীয় খাবার খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। তেল চুলে রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করে। তেল চুলকে গােড়া থেকে মজবুত করে। চুল পড়াও কমায়।
Advertisements
খুশকি শুরুতেই নিয়ন্ত্রণ করা খুব জরুরি। খুশকি কেন হচ্ছে জানার চেষ্টা করতে হবে। যারা নিয়মিত বাইরে যান বা ধুলাবালুতে চলাফেরা করেন, তাঁদের নিয়মিত চুল পরিষ্কার রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে এক দিন পরপর কম ক্ষারযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন হাসিবুর রহমান।
যাঁদের থাইরয়েড সমস্যা, ডায়াবেটিস, রক্তে আয়রন এবং ভিটামিন ডির পরিমাণ কমবেশি আছে, চিকিৎসকের মতামত অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট হিসেবে বায়ােটিন, ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি ও ডি এবং জিংক নেবেন।
এটি তিন থেকে চার মাসের মধ্যে অনেক সমস্যার সমাধান দেয়। না হলে ডার্মারােলার অল মাইক্রোনিউক্লিন থেরাপি, পিআরপি (প্লেটিলেজ রিচ প্লাজমা) থেরাপি নিতে পারেন বলে জানালেন তিনি।
Conclusion:
আলোচিত বিষয় ছাড়া পরিবারের কারও মাথায় খুশকি থাকলে তার ব্যবহৃত তােয়ালে বা চিরুনি অন্য কারও ব্যবহার করা উচিত নয়।
কারণ, একবার খুশকি সেরে গেলে এবং মাথার তালু ছত্রাকমুক্ত হলে আবার চুল গজাবে। এ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শে খুশকি প্রতিরােধী ওষুধ ও অ্যান্টিফাঙ্গাল শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
Last Line: চুল কেন পড়ে (Why hair loss)
Advertisements