চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান

চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আমাদের আজকের আলোচিত বিষয় । শুধু সাধারণ শিক্ষায় নয়, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চায়ও মুসলমানগণ সমান দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। এ প্রচেষ্টা ও অবদানের উপর ভিত্তি করে মুসলমানগণ একসময়ে সারা বিশ্বে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। 


Advertisements

আধুনিক যুগের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অনেক শাখা মুসলমানদের জ্ঞান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিরই ফসল। এ সকল মুসলিম মনীষীর মধ্যে কয়েকজন সম্পর্কে নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান

চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান
চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান

চিকিৎসা শাস্ত্র

চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান অবিস্মরণীয়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির মূলে রয়েছে মুসলমানদের অবদান। যাঁদের অবদানের কারণে চিকিৎসা শাস্ত্র উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন– 
  • আবু বকর আল রাযি, 
  • আল বিরুনি, 
  • ইবনে সিনা, 
  • ইবনে রুশদ প্রমুখ।

আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে যাকারিয়া আল রাযি

তাঁর নাম মুহাম্মদ উপনাম আবু বকর, পিতার নাম যাকারিয়া। তিনি আল-রাযি নামে পরিচিত। তিনি ৮৬৫ খ্রি. জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও শল্যচিকিৎসাবিদ ছিলেন। 
চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান
আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে যাকারিয়া আল রাযি

দীর্ঘদিন তিনি জুন্দেরশাহপুর ও বাগদাদে সরকারি চিকিৎসালয়ে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তৎকালে তাঁর সুনাম ও সুখ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে পশ্চিম এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপ থেকে অনেক রোগী তাঁর নিকট আসতেন।

শল্যচিকিৎসায় আল রাযি ছিলেন তৎকালের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। তাঁর অস্ত্রোপচার পদ্ধতি ছিল গ্রীকদের থেকেও উন্নত। তিনি মোট দুই শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। তন্মেধ্যে শতাধিক হলো চিকিৎসা বিষয়ক। 

তিনি বসন্ত ও হাম রোগের উপর ‘আল্‌ জুদাইরি ওয়াল হাসবাহ’ নামক একখানি গ্রন্থ রচনা করেন। এর মৌলিকত্ব দেখে চিকিৎসা বিজ্ঞানের লোকেরা খুব আশ্চার্যান্বিত হয়েছিলেন। 

তাঁর আরেকটি গ্রন্থের নাম হলো আল মানসুরি। এটি ১০ খণ্ডে রচিত। এ গ্রন্থ দুটি আল রাযিকে চিকিৎসাশাস্ত্রে অমর করে রেখেছে। তিনি হাম শিশু চিকিৎসা নিউরোসাইকিয়াট্রিক ইত্যাদি চিকিৎসা সম্পর্কে নতুন মতবাদ প্রবর্তন করেন। 

আল মানসুরি গ্রন্থে তিনি এনাটমি, ফিজিওলজি, মেজাজ, ঔষধ, স্বাস্থ্যরক্ষা বিধি, চর্মরোগ ও প্রসাধন দ্রব্য, শল্যচিকিৎসা, বিষ, জ্বর ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করেন। তিনি ৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তিকাল করেন।




আল বিরুনি

বুরহানুল হক আবু রায়হান মুহাম্মদ ইবনে আহমেদ আল বিরুনি সংক্ষেপে আল বিরুনি নামে পরিচিত। ৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে খাওয়ারিযমের নিকটবর্তী আল বিরুন নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। 
চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান
আল বিরুনি

আল বিরুনি ছিলেন মধ্যযুগীয় শ্রেষ্ঠ মুসলিম পণ্ডিত, মহাজ্ঞানী ও নিষ্ঠাবান গবেষক। তিনি অত্যন্ত মৌলিক ও গভীর চিন্তাধারার অধিকারী বড় দার্শনিক ছিলেন। গণিত, জ্যোতিষশাস্ত্র, পদার্থ, রসায়ন ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে তিনি পারদর্শী ছিলেন। 


এ ছাড়া তিনি প্রসিদ্ধ ভূগোলবিদ ঐতিহাসিক পঞ্জিকাবিদ, চিকিৎসাবিজ্ঞানী, ভাষাতত্ত্ববিদ ও ধর্মতত্ত্বের নিরপেক্ষ বিশ্লেষক ছিলেন। স্বাধীন চিন্তা, মুক্ত বুদ্ধি, সাহসিকতা, নির্ভীক সমালোচনা ও সঠিক মতামতের জন্য তিনি যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। 

তিনি আল উসতাদ (মহামান্য শিক্ষক) নামে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ভূগোলের অক্ষরেখার পরিমাপ নির্ণয় করেন। তাঁর লিখিত অনেক গ্রন্থ রয়েছে। তন্মেধ্যে ‘আল–আছারুল বাকিয়্যাহ-আনিল কুরুনিল খালিয়্যাহ’ গ্রন্থটি প্রসিদ্ধ। 

এ গ্রন্থে তিনি বর্ষপঞ্জি, গণিত, ভূগোল, আবহাওয়া বিজ্ঞান ও চিকিৎসাসহ নানা বিষয় বর্ণনা করেন। তিনি প্রথম প্রমাণ করলেন যে, পৃথিবী গোলাকার। পৃথিবীর গোলাকার মানচিত্র তাঁর রচিত। তিনি ১০৪৮ খ্রি.ইন্তিকাল করেন।

ইবনে সিনা

তাঁর পুরো নাম আবু আলি আল হুসাইন ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে সিনা। তিনি বুখারার নিকটবর্তী আফশানা নামক গ্রামে ৯৮০ খ্রি. জন্মগ্রহণ করেন। দশ বছর বয়সে পবিত্র কুরআন হিফজ করেন। 
চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান
ইবনে সিনা
তিনি দার্শনিক, চিকিৎসক, গণিতজ্ঞ, জ্যোতির্বিদ এবং মুসলিম জগতের একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও সর্ববিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। চিকিৎসায় তাঁর অসাধারণ অবদানের জন্য তাঁকে আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র ও চিকিৎসা প্রণালি এবং শল্যচিকিৎসার দিশারি মনে করা হয়। 

তাঁর রচিত অসংখ্য গ্রন্থ রয়েছে। তবে চিকিৎসাশাস্ত্রে ‘আল–কানুন ফিত-তিবব’ একটি অমর গ্রন্থ। ড. ওসলার এ গ্রন্থটিকে চিকিৎসাশাস্ত্রের বাইবেল বলে উল্লেখ করেন। 

চিকিৎসাশাস্ত্রে এর সমপর্যায়ের কোনো গ্রন্থ আজও দেখা যায় না। আধুনিক বিশ্বেও তাঁর গ্রন্থটি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পাঠদান করা হচ্ছে। 

চিকিৎসা সম্বন্ধীয় যাবতীয় তথ্যের আশ্চর্য রকম সমাবেশ থাকার কারণে গ্রন্থটিকে চিকিৎসাশাস্ত্রের বৃহৎসংগ্রহ বলা চলে। তিনি ১০৩৭ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তিকাল করেন।

ইবনে রুশদ

তাঁর পুরো নাম আবু ওয়ালিদ মুহাম্মদ ইবনে আহমাদ ইবনে রুশদ। তিনি স্পেনের করডোভায় জন্মগ্রহণ করেন। মধ্যযুগে মুসলিমদের মধ্যে যাঁরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি তাঁদের একজন। 

চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান
ইবনে রুশদ

এই ক্ষণজন্মা পুরুষ শুধু এক বিষয়েই জ্ঞানী ছিলেন না, তিনি জ্ঞানের সকল শাখায় বিচরণ করেছেন। দর্শন, পদার্থ, রসায়ন, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাশাস্ত্র– এ সকল শাখায় তাঁর সমান বিচরণ ছিল। 


তিনি এরিস্টলের গ্রন্থসমূহ আরবিতে অনুবাদ করার পাশাপাশি নিজেও অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেন। তন্মেধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘আল জামি’। এ গ্রন্থে তিনি জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন ও চিকিৎসার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহ ল্যাটিন ও হিব্রু ভাষায় অনুবাদ করা হয়। 

চিকিৎসাশাস্ত্রে তাঁর লেখা গ্রন্থের নাম হলো কুল্লিয়াত। এটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে চিকিৎসা চিকিৎসা বিজ্ঞানে সমাদৃত হয়েছে।



CONCLUSION:

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান মধ্যযুগের মুসলমানদের চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাছে অনেক ঋণী। মুসলমানদের ঐ অবদান না থাকলে আজকে চিকিৎসা বিজ্ঞান এতদূর আসতে পারত না। আমরাও চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে গভীর অধ্যয়ন করে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে সহজতর করে তুলব।

Last Line: চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান
Advertisements

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top