এবারে তোমাদের এক মস্তবড় প্রকৃতিবিজ্ঞানীর কথা বলব। জাতিতে তিনি ইংরেজ, নাম চার্লস ডারউইন।
চার্লস ডারউইন
চার্লস ডারউইন
চার্লস ডারউইন এর জন্ম হয়েছিল ইংল্যান্ডের শ্রিউজবেরি অঞ্চলে ১৮০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি।
ছেলেবেলায় ফড়িং আর প্রজাপতি ছাড়াও নানা রকমের পোকামাকড় ধরে বেড়াতেন ডারউইন। আর জমাতেন নানা রঙের পাথর। ওতেই তাঁর আনন্দ তখন।
তবে ছেলেবেলাতেই রসায়নেও তাঁর খুব আগ্রহ ছিল। কয়েক বছর শ্রিউজবেরির স্কুলে পড়ার পর ডারউইন চলে গেলেন এডিনবরায়।
আর বাবা চেয়েছিলেন ছেলে ডাক্তারি শিখে চিকিৎসক হোক। কিন্তু ডারউইনের তা মোটেই ইচ্ছে নয়। এবার তিনি গেলেন কেমব্রিজে।
এখানে তাঁর পড়ার বিষয় ছিল ধর্ম। তাঁর এ বিষয়টাও তেমন ভালো লাগত না। তিনি প্রাণিবিদ্যা আর উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে পড়া শুরু করলেন। সেই সঙ্গে চলল তাঁর পোকামাকড় সংগ্রহ করার বাতিক।
ঠিক সেই সময় একটা ঘটনা ঘটল যাতে ডারউইনের জীবনের মোড় ঘুরে গেল।
‘বিগ্ল’ জাহাজে প্রকৃতিবিদের চাকরি
১৮৩১ সালে তাঁর বন্ধু কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেনস্লোস, তাঁকে একটা চকরির সুযোগ করে দিলেন। সেটা হল ‘বিগ্ল’ নামে একটা জাহাজে প্রকৃতিবিদের চাকরি।
ওই জাহাজে ডারউইনের কাজ হবে গবেষণার জন্যে নানা জাতির পোকামাকড় আর উদ্ভিদ সংগ্রহ করা। কাজটা ডারউইনের একেবারে মনের মতো।
তাই প্রায় বিনা মাইনের হলেও চাকরিটা তিনি নিয়ে নিলেন। দক্ষিণ আমেরিকা আর প্রশান্ত মহাসাগরে প্রায় পাঁচ বছর ধরে ‘বিগল’ জাহাজে হাজার হাজার পোকামাকড় আর উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করলেন ডারউইন।
আরও পড়ুন… বিবর্তন বাদ থিউরী
এই সমুদ্রযাত্রার সময় তিনি এমন প্রাণীর হাড় সংগ্রহ করেছিলেন যেসব প্রাণী পৃথিবী থেকে আগেই লুপ্ত হয়ে গেছে।
এক-একটা দ্বীপ থেকে এক-এক রকমের প্রাণীর নমুনা জোগাড় হলে তাদের চেহারার মিল বা অমিল দেখে তাঁর কৌতূহল বেড়ে গেল। এখনকার প্রাণী আর লুপ্ত প্রাণী নিয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু হল তাঁর।
এই সমুদ্রযাত্রার সময় পালাপাগাস নামে এক দ্বীপে ডারউইন অনেক সময় কাটিয়েছিলেন।
দেশে ফেরার পরে এই ভ্রমণের কথা আর এই ভ্রমণের সময় যা তিনি দেখেছেন, শিখেছেন সেই কথা একটি বইয়ে লিখে ফেললেন।
এই সময় থেকেই তাঁর মনে জীবজগতের ইতিহাস নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছিল। প্রাণীর স্বভাব ও চেহারা কেন বদলে যায়। যুগে যুগে, আর কীভাবেই বা বদলে যায়, তাঁর মনে কেবল সেই চিন্তাই ঘুরপাক খেত ।
আরও পড়ুন… পৃথিবীতে জীবনের উৎপত্তি
চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব
আদিম প্রাণী থেকে আজকের প্রাণীর এই পরিবর্তনকেই বলা হয় প্রাণীর বিবর্তন।
১৮৫৯ সালে যখন তাঁর বয়স পঞ্চাশ বছর, তখন ডারউইন তাঁর আবিষ্কারের কথা ‘জীবের উৎপত্তি‘ নামে একটি বইয়ে লিখে বিখ্যাত হয়ে গেলেন।
তিনি বললেন যে, জগতের সমস্ত প্রাণী বা উদ্ভিদ অনেক অনেক বছর ধরে একটা জায়গায় থাকলে, সেই জায়গার উপযোগী কতকগুলো বৈশিষ্ট্য তাদের স্বভাবে আর চেহারায় এসে যায়। আর তাদের বংশধরদের মধ্যেও ওইসব বৈশিষ্ট্য এসে যায়।
তিনি আরও বললেন যে, জীবজগতে সবসময়ই একটা বেঁচে থাকার লড়াই চলছে। সেই লড়াইয়ে জেতে তারাই যাদের যোগ্যতা বা ক্ষমতা আছে।
আর যারা প্রকৃতির অবস্থার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে না, তারা আস্তে আস্তে লুপ্ত যায়। নতুন অবস্থার সঙ্গে চলতে পারেনি বলেই ডাইনোসররা খুব শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও একসময় লুপ্ত হয়ে গেছে।
ডারউইনের এই আবিষ্কারের নাম বিবর্তনবাদ। তাঁর কথা সবাই যে সঙ্গে সঙ্গে মেনে নিয়েছিল তা নয়। বরং অনেকে এর ভুল বার করার চেষ্টাও করেছে। তবে পরে প্রায় সবাই ডারউইনের মতকে স্বীকার করে নেয়।
খন তাঁর এই মতকে বিজ্ঞানীরা কিছুটা পালটে নিয়েছেন বটে, তবে তাতে তাঁর মত মিথ্যে হয়ে যায়নি।
উপসংহার
১৮৮২ সালে ৭৩ বছর বয়সে এই বিশ্ববিখ্যাত প্রকৃতিবিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়।
অতবড় পণ্ডিত আর বিজ্ঞানী হলেও তিনি খুবই সাধাসিধে স্বভাবের মানুষ ছিলেন। সহজেই সকলকে আপন করে নিতে পারতেন।
চার্লস ডারউইন এর সংক্ষিপ্ত তথ্য
জন্ম | ১২ ফেব্রুয়ারি ১৮০৯ মাউন্ট হাউজ, শ্রুসবেরি, শ্রপশায়ার, ইংল্যান্ড |
---|---|
মৃত্যু | ১৯ এপ্রিল ১৮৮২ (বয়স ৭৩) ডাউন হাউজ, ডাউনি, কেন্ট, ইংল্যান্ড |
বাসস্থান | ইংল্যান্ড |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ নাগরিক |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ |
কর্মক্ষেত্র | প্রকৃতিবিদ |
প্রতিষ্ঠান | রয়েল জিওগ্রাফিকাল সোসাইটি |
প্রাক্তন ছাত্র | ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজ |
শিক্ষায়তনিক উপদেষ্টাবৃন্দ | জন স্টিভেন্স হেনশ্লো
অ্যাডাম সেজউইক |
পরিচিতির কারণ | বিগলের সমুদ্রযাত্রা প্রজাতির উৎপত্তি সম্পর্কে প্রাকৃতিক নির্বাচন |
যাদের দ্বারা প্রভাবান্বিত | চার্লস লায়েল জোসেফ ডাল্টন হুকার |
যাদেরকে প্রভাবিত করেছেন |
থমাস হেনরি হাক্সলি জর্জ জন রোমানেস আর্নস্ট মায়ার |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার |
রয়েল মেডেল (১৮৫৩) ওলাস্টন মেডেল (১৮৫৯) কপলে পদক (১৮৬৪) |
বি. দ্রঃ
তিনি ছিলেন ইরাসমাস ডারউইন ও জোসিয়াহ ওয়েজউডের নাতি, এবং তিনি তার কাজিন এমা ওয়েজউডকে বিবাহ করেছিলেন। |
বিবর্তনবাদের উপর বিভিন্ন বই অরিজিনাল কিনুন Amazon থেকে । হোম ডেলিভারি নিন বাড়িতে বসে ।
Source