গ্যালিলিও গ্যালিলেই | একজন অদম্য জ্যোতির্বিদ, পদার্থবিদ

গ্যালিলিও এক মস্তবড় বিজ্ঞানী। তাঁর পুরো নাম গ্যালিলিও গ্যালিলেই (Galileo Galilei)। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৫৬৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ইতালির পিসা শহরে। ছেলেবেলা থেকেই তাঁর ছিল বিজ্ঞানের প্রতি গভীর ভালোবাসা। 


গ্যালিলিও গ্যালিলেই (Galileo Galilei)

গ্যালিলিও গ্যালিলেই (Galileo Galilei)
গ্যালিলিও গ্যালিলেই (Galileo Galilei)

জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত প্রভৃতি বিষয়ে ডুবে থাকতেন গ্যালিলিও গ্যালিলেই (Galileo Galilei)। পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে পড়তে শুরু করলেও কিছুদিনের মধ্যেই ওই বিষয়টি ছেড়ে গণিত চর্চা করতে লাগলেন। 

তারপর মাত্র পঁচিশ বছর বয়সেই পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতশাস্ত্রের অধ্যাপক হন। এসময় তিনি এমন একটা কাণ্ড করে বসলেন যা বিজ্ঞানের জগতে একটা বিরাট আলোড়ন তুলল।

Advertisements

প্রাচীন গ্রিসের পণ্ডিত অ্যারিস্টটল বলেছিলেন যে, কোনো একটা উঁচু জায়গা থেকে যদি ভারী আর হালকা দুই রকম দুটো বস্তু নিচে ফেলা যায়, তা হলে যেটার ওজন বেশি সেটাই আগে মাটিতে পড়বে। 


এটাই সবার কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়েছিল, আর সেকালের সমস্ত বইয়ে এই কথাই লেখা থাকত। সমস্ত ধর্মীয় পুস্তকেও এ কথাটাকেই সত্যি বলে প্রচার করা হতো। 

গ্যালিলিওর মনে হয়েছিল যে এটা মোটেই ঠিক নয়। নিজে আগে পরীক্ষা করে যখন বুঝলেন অ্যারিস্টটলের কথা ভুল তখন তিনি সমস্ত মানুষের কাছে সত্যি কথাটা বলতে চাইলেন।

এ নিয়ে একটা গল্প আছে। তিনি নাকি প্রচার করে দেন পিসার হেলানো মিনার থেকে দুটো ভিন্ন ওজনের বল নিচে ফেলে তিনি সবার সামনে প্রমাণ করে দেবেন যে ওই বল দুটো একই সময়ে মাটিতে পড়বে। 


নির্দিষ্ট দিনে গ্যালিলিও পিসার মিনারের সাত তলার রেলিঙের কাছে গিয়ে হাজির হলেন, সঙ্গে দুটো লোহার বল। একটার ওজন বেশি আর অন্যটার ওজন কম। 

সেদিন কাতারে কাতারে লোক এই দৃশ্য দেখার জন্য সেখানে হাজির হয়েছিল। গ্যালিলিও একই সঙ্গে দুটো বল উপর থেকে নিচে ফেললেন। দেখা গেল বল দুটো একই সঙ্গে মাটিতে পড়ল।

গ্যালিলিওর আর একটা বড় আবিষ্কারের কথাও আমাদের জেনে রাখতে হবে। তাঁরও আগে কোপারনিকাস নামে এক বিজ্ঞানী বলেছিলেন যে, পৃথিবী নয়, সূর্যই সৌরজগতের কেন্দ্র। 


আগে মানুষ বিশ্বাস করত পৃথিবীই সব জ্যোতিষ্কের কেন্দ্র, আর সূর্যই পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। গ্যালিলিও প্রমাণ করে দিয়েছিলেন, কোপারনিকাসই ঠিক কথা বলেছিলেন। সূর্যকে কেন্দ্র করেই পৃথিবী ঘুরছে।

গ্যালিলিও কতকগুলো বৈজ্ঞানিক যন্ত্র তৈরি করেছিলেন। তিনি খুব শক্তিশালী একটি দূরবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করে তাই দিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনেক মূল্যবান তথ্য আবিষ্কার করেছিলেন। 


বৃহস্পতির যে চারটি উপগ্রহ আছে, শনির যে একটি বলয় আছে— এসব তিনিই প্রথম সবাইকে জানান।

গ্যালিলিও এমন অনেক কথাই বলেছিলেন যা সেকালের ধর্মযাজকরা মেনে নিতে পারেননি। গ্যালিলিওর আবিষ্কার তাঁদের কাছে ধর্মবিরোধী বলে মনে হয়েছিল। 


তাঁর লেখা বইগুলোকে পরবর্তী যুগের বিজ্ঞানীরা খুব শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন বটে, কিন্তু যাজকরা তাঁকে তিরস্কার করতে লাগলেন।

Advertisements

সেকালে যাজকদের ক্ষমতা আর প্রতিপত্তি ছিল খুবই বেশি। তাঁরা গ্যালিলিওকে বললেন তিনি যেন তাঁর সব আবিষ্কার মিথ্যে বলে মেনে নেন। 


কিন্তু যাকে তিনি সত্যি বলে জানেন তাকে মিথ্যে বলবেন কীভাবে? গ্যালিলিওকে বন্দি করা হয়। কিছুদিন পরে কারাগারেই তিনি অন্ধ হয়ে যান। শেষে খুব কষ্ট ভোগ করতে করতে ১৬৪২ সালে মারা যান তিনি।

Advertisements

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top