গুগলে ওয়েবসাইট র‍্যাঙ্কিং এর ১০টি কৌশল

বর্তমান এই প্রতিযোগিতামূলক অনলাইন দুনিয়ায় সবাই চায় তার ওয়েবসাইটটি সার্চ ইঞ্জিনে শীর্ষে থাকুক। কিন্তু হতাশার কথা হচ্ছে খুব কম সংখ্যক মানুষই তা পেরে থাকে। 

আপনার ওয়েবসাইটে ভালো কনটেন্ট থাকলেই তা বেশি ট্রাফিক পাবে বা গুগলে র‍্যাঙ্ক করবে, এমনটা ভাবা ভুল। একটি ওয়েবসাইটের কনটেন্ট সার্চ ইঞ্জিনে র‍্যাঙ্ক করবে কি না, তা নির্ভর করে সম্পূর্ণরূপে এসইওর ওপরে। 

আর বেশির ভাগ ওয়েবসাইটই এই পরীক্ষাটিতে উত্তীর্ণ হতে পারেন না। ফলে প্রত্যাশিত ভিজিটর না পেয়ে ক্রমাগত হতাশায় ভোগেন।


গুগলে ওয়েবসাইট র‍্যাঙ্কিং এর ১০টি কৌশল

গুগলে ওয়েবসাইট র‍্যাঙ্কিং এর ১০টি কৌশল
গুগলে ওয়েবসাইট র‍্যাঙ্কিং এর ১০টি কৌশল


গুগলে ওয়েবসাইট র‍্যাঙ্কিং করাটা খুব সহজ কোন কাজ না। এর জন্য আপনাকে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যেতে হবে এবং আগ্রহ বজায় রাখতে হবে। 

চলুন, ১০টি টিপস জানি, যা দিয়ে আপনি আপনার ওয়েবসাইটকে গুগলে র‍্যাঙ্কিং এর চেষ্টা করতে পারেন।


১. ভালো ও প্রয়োজনীয় কনটেন্ট আপলোড করা

আপনি আপনার ওয়েবসাইটে হয়তো প্রতিদিনই কিছু না কিছু আপলোড করছেন। কিন্তু আপনাকে  মনে রাখতে হবে, এই কনটেন্টগুলো যেন যা-তা না হয়ে যায়।

অর্থাৎ ভিজিটরের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে অত্যান্ত সুন্দর ও সু-শৃঙ্খল কনটেন্ট আপলোড করা উচিত। সময় বিশেষে ট্রেন্ড অনুসরণ করা উচিত এবং ভিজিটররা কোন জাতীয় কনটেন্ট চায় তার প্রতি ভালো জ্ঞান রাখা জরুরী।

প্রয়োজনীয় বিষয়টি নির্বচন করে আপনার  কনটেন্টগুলোকে খুব সুন্দরভাবে সাজান। যদি আপনার ওয়েবসাইটটি ব্লগ ভিত্তিক হয়ে থাকে, তাহলে আপনার লেখাগুলোকে আরো বেশি তথ্যবহুল করে তুলুন। 

একটা কথা মনে রাখুন, গুগল দীর্ঘ এবং তথ্যবহুল কনটেন্ট পছন্দ করে। আপনার কনটেন্ট যত বেশি তথ্যবহুল থাকবে, একজন ভিচজিটরের আপনার সাইটের প্রতি তত বেশি আগ্রহ বাড়বে। 

ফলে খুব সম্ভাবনা বেড়ে যায় র্যাঙ্কিংয়ের, এর পর উক্ত ভিজিটর এরপর থেকে সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ না করে সরাসরি আপনার ওয়েব এড্রেস নিয়ে আপনার সাইট ভিজিট করার চেষ্টা করবে l


২. আর্টিকেলের জন্য ভালো Title Tag বাছাই করুন: 

ব্লগ জাতীয় ওয়েবসাইট এসইও করার ক্ষেত্রে আর্টিকেলের সবচেয়ে জরুরি অংশ হলো Title বা শিরোনাম। 

আর্টিকেলের জন্য ভালো Title Tag নির্বাচন করা অন পেজ এসইও’ র অন্তর্ভুক্ত। যদি আপনি আপনার আর্টিকেলের জন্য ভালো Title Tag ব্যবহার করেন, তাহলে সার্চ ইঞ্জিন থেকে ডিজিটর প্রথমেই আপনার ওয়েবসাইটের লিংকে ক্লিক করবে।

আর সার্চ ইঞ্জিন হোক বা সোশ্যাল মিডিয়া, আপনার আর্টিকেলের Title দেখেই পাঠক আকর্ষিত হবে এবং পুরো আর্টিকেল পড়বে। 

সুতরাং এমন Title লিখুন যেটা খুব সহজে বুঝা যায় বা যেটা পরেই পুরো আর্টিকেলের বিষয়টি বুঝা যায়। তাহলে Google Search Result থেকে হোক বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে, আপনার ব্লগের সেই লিংকে সবাই ক্লিক করবে। 

আর একটা কথা মনে রাখুন, যদি Google Search Result এ বেশিভাগ লোক আপনার ব্লগের লিংকে ক্লিক করে, তাহলে আপনার ব্লগের CTR [Click Through Rate] ভালো হয়। যা ওয়েবসাইটকে গুগলে জনপ্রিয় করতে আরো সাহায্য করে।

গুগল সার্চ থেকে আপনার ব্লগে বেশি ক্লিক হওয়া বা CTR ভালো হওয়া মানে আপনার ব্লগের প্রতি গুগলের নজর ভালো হওয়া। 

কারণ, আপনার আর্টিকেল লিংকে বেশিভাগ ক্লিক হওয়া মানে ভিজিটর বা আপনার আর্টিকেলে তথ্য পড়ে ভালো পেয়েছেন এবং এতে গুগল আপনার আর্টিকেলগুলোই আগে দেখাবে।


৩. Tag ব্যবহারে আরো মন্ত্রবান হবেন

কনটেন্ট আপলোডের পূর্বে অবশ্যই আপনার কনটেন্ট রিলেটেড কিছু Tag যুক্ত করুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অনেকে Tag অপশনটি খালি রাখেন। এটা চূড়ান্ত একটি ভুল কাজ। গুগল আপনার কনটেন্টগুলো Tag দেখেই খুঁজে বের করবে। 

আর আপনি যদি কোন Tag ব্যবহার না করেন, সেক্ষেত্রে গুগল সার্চের প্রথম পেজে কখনোই স্থান দখল করতে পারবেন না।

তাই চেষ্টা করুন, আপনি যে বিষয়ের ওপর কনটেন্ট লিখেছেন, তার সাথে সম্পর্কযুক্ত Tag যোগ করে দিতে। অর্থাৎ, সার্চ ইঞ্জিনে কি কি লিখলে আপনার কনটেন্টগুলো চলে আসবে, চেষ্টা করুন সেই জাতীয় Tag তৈরি করতে।


৪. সাইটের লোডিং পাঁচ করুন

ওয়েবসাইট এসইও করার ক্ষেত্রে যেকোন ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি এমন কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেন, যার পেজগুলো লোডিং হতে অনেক বেশি সময় নেয়, তাহলে নিশ্চয়ই আপনি এই ওয়েবসাইটকে পছন্দ করবেন না। 

ঠিক একই ভাবে কোন ভিজিটর তথ্য সংগ্রহের জন্য আপনার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে লোডিং স্পীড যদি কম পায়, তাহলে সে বিরক্ত হয়ে অন্য ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবে। 

তাই চেষ্টা করুন সর্বোচ্চ ৫ সেকেন্দ্রের মধ্যে আপনার ওয়েবসাইটকে লোড করার। এর ফলে আপনার কোন ভিজিটর যিনি আপনার ব্লগে আর্টিকেল পড়তে এসেছেন, তা খুব তাড়াতাড়ি দেখতে বা পড়তে পারেন।

পক্ষান্তরে, পেজ ধীর গতিতে লোড হওয়ার দরুন ভিজিটর যদি আপনার সাইট থেকে চলে যায়, তাহলে তা [Google Search] অন্য সার্চ ইঞ্জিনের কাছে আপনার ব্লগের খারাপ ইমেজ তৈরী করে। 

আর, ধীর গতির ওয়েবসাইট হওয়ার জন্য সার্চ ইঞ্জিন আপনার ওয়েবসাইটকে প্রথম পেজ হতে পিছনে সরাতে থাকে এবং ওই সকল ওয়েবসাইটকে সামনে নিয়ে আসে যাদের লোডিং স্পীড তুলনামূলক দ্রুত।


৫. ব্লগ পোস্টের লিংক কাস্টমাইজ করুন

আপনার ওয়েবসাইট নতুন কোন বিষয় নিয়ে আর্টিকেল লেখার শুরুতে আগে ভেবে নিন লিংক কেমন হবে। অনেকেই লিংকের এই বিষয়টিকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয় না। ফলে কাঙ্খিত ফলাফল থেকে বঞ্চিত হয়। 

আপনার ব্লগ পোস্টের লিংক কেমন হবে, তা আপনি খুব সহজেই নির্বাচন করতে পারেন। আপনি ব্লগস্পট ব্যবহার করেন অথবা ওয়ার্ডপ্রেস, আপনি এই দুটি প্লাটফর্ম থেকেই আর্টিকেলের URL address সেট করে নিতে পারবেন।

ব্লগ আর্টিকেলের URL address এ সবসময় রিলেটেড keyword ব্যবহার করুন। এছাড়া সব সময় চেষ্টা করুন URL address টিকে ছোট রাখার। 

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, আপনার লেখা আর্টিকেল যদি এমন যে, “SEO কি এবং ব্লগে এর ব্যবহার কিভাবে করবো করবো?  তাহলে আপনি আর্টিকেলের URL address সেট করুন এভাবে: “Seo-মানে কি” অথবা “এসইএ-কি-এবং-এর ব্যবস্থা

এভাবে ছোট ও পরিষ্কার URL address এবং তাতে keyword ব্যবহার করলে Google সহজে বুঝতে পারে যে আপনি কিসের ওপরে আর্টিকেল লিখেছেন। এতে আপনার লেখা আর্টিকেল Google সার্চে ভালো ভাবে Rank করার সুযোগ থাকে।


৬. পরিমাণে Internal linking করুন

ইন্টারনাল লিংকিং অন পেজ এসইও এর অন্তর্ভুক্ত। অনেকেই হয়তো Internal linking এর বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি জানেন না। Internal linking আপনার ব্লগের একটি পোস্টের মধ্যে অন্য একটি পোস্টের লিংক উল্লেখ করা। 

যেমন আমি যদি লিখি ব্যাকলিংক কি ?, তা পড়ে আসুন এখান থেকে। তাহলে এটা একটি Internal linking  । 

একটি ভালো Internal linking এর concept আপনার ব্লগের আর্টিকেল Google সার্চে র‌্যাঙ্ক করতে অনেক সহায়তা করে। পাশাপাশি আপনার ওয়েবসাইটের অন্যান্য পেজগুলোর ভিজিটরের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।


৭. ALT Tag ব্যবহার করুন: 

রিলেটেড ট্যাগ অপশনের মধ্যেই ALT Tag ট্যাগও অনেক ব্লগারের কাছেই অবহেলিত একটি অপশন। অথচ এই অপশনগুলো দেয়াই হয়ে থাকে আপনার কনটেন্টকে এসইও উপযোগী তৈরি করতে। 

আপনি যখন আপনার ওয়েবসাইটে কোন আর্টিকেল লেখেন, তখন নিশ্চয়ই তার সাথে বেশ কিছু ইমেজ বা ছবি ব্যবহার করেন।

যখন ব্লগে ছবি আপলোড করবেন তখন “AIt tag” নামে একটি অপশন পাবেন। সেটির যথাযথ ব্যবহার করুন। All tag অপশনে এই ছবিটি কি কি কিওয়ার্ড লিখে সার্চ করলে পাওয়া যাবে, তা সংক্ষেপে লিখুন।

ALT Tag থাকলে Google এবং অন্য সার্চ ইঞ্জিন বুঝতে পারে যে আপনার আপলোড করা ছবিটি কিসের সাথে সম্পর্কিত। তাই ALT Tag অবশ্যই ব্যবহার করবেন এবং ALT Tag এ keyword এর ব্যবহার রাখবেন।


৮. ফ্রি অথবা প্রিনিয়াম গ্লাগিন ব্যবহার করুন

বর্তমানে অনেক প্লাগিন আছে, যেগুলো আপনার কনটেন্ট এসইও ফ্রেন্ডলি কি না তা দেখিয়ে দেবে। এ ধরনের গ্লাগিনগুলো ফ্রি অথবা প্রিনিয়াম দুটি ক্যাটাগরিতেই পাওয়া যায়। এদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি প্লাগিন হচ্ছে ইয়োস্ট এসইও (Yoast Seo) |

Yoast Seo এর মাধ্যমে আপনি এসইও ফ্রেন্ডলি টাইটেল নির্বাচন করতে পারবেন। পাশাপাশি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার কনটেন্ট শেয়ার করলে তার কি ডিসক্রিপশন (বর্ণনা) প্রদর্শন করবে, তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। 

মোটামুটি এ সুবিধাগুলো আপনি Yoast Seo এর ফ্রি ভার্সনেই পাবেন। এর থেকে বেশি ও কার্যকরী সুবিধা পেতে আপনাকে প্রিমিয়াম ভার্সনে আপগ্রেড করতে হবে।


৯. অন্যের ওয়েবসাইটে গেস্ট হিসেবে লিখুন এবং ব্যাকলিংক নিন: 

এটা এখন সর্বজন স্বীকৃত যে, ওয়েবসাইট এসইও করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে যে বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে ব্যাকলিংক। 

গুগল তার সার্চে টপে নিয়ে আসার জন্য ওই সকল ওয়েবসাইটকে খোঁজে, যার ব্যাকলিংক তুলনামূলক বেশি। তাই আপনাকে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য প্রচুর পরিমাণে ব্যাকলিংক বিল্ড করতে হবে।

এ জন্য আপনি পরিচিত অন্য কারো ওয়েবসাইটে গেস্ট ব্লগার বা অতিথী লেখক হিসেবে লিখতে পারেন। এর ফলে আপনি সুযোগ পাবেন, আপনার ওয়েবসাইটের লিংকগুলো তাদের ওয়েবসাইটে শেয়ার করার। 

এভাবে আপনি যত বেশি ব্যাকলিংক বিল্ড করতে পারবেন, আপনার ওয়েবসাইটের DA [Domain

Authority] তত বেশি বাড়িয়ে নিতে পারবেন। ফলে আপনার ব্লগ গুগল সার্চে শীর্ষ  result এ দেখানোর সুযোগ থাকবে।


১০. নিজেকে আপডেট রাখা

সর্বশেষ পরামর্শ হচ্ছে নিজেকে নিয়মিত আপডেট রাখতে হবে। হতে পারে আপনি এসইও সম্পর্কে অনেক আগে থেকেই জানেন। 

তবে আপনি যদি সেই ২০১২ কিংবা ২০১৪ সালের এসইও পদ্ধতিগুলো জেনে বসে থাকেন এবং সেগুলোই এখনও প্রয়োগ করেন, তাহলে এখন আপনি কোনভাবেই সেই আগের পদ্ধতিগুলো দিয়ে ওয়েবসাইট র‌্যাঙ্ক করাতে পারবেন না। 

Conclusion:

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন পদ্ধতি প্রতিনিয়তই আপডেট হচ্ছে। আর তার সাথে সাথে ক্রমাগত বদলে যাচ্ছে এসইও করার পূর্বের টেকনিকগুলো। 

তাই ভালো ফলাফল পেতে বর্তমান সময় ও প্রযুক্তির সাথে নিজেকে আপডেট করে নিতে হবে। বর্তমান সময়ে পুরোনো ধ্যান-ধারণা কখনোই আপনাকে একটি ওয়েবসাইট র‌্যাঙ্ক করাতে সফল করবে না।

আজকের আর্টিকেলটি ছিল…

গুগলে ওয়েবসাইট র‍্যাঙ্কিং এর ১০টি কৌশল

Website Ranking Method in Google, 

Top 10 Strategies for Website Ranking in Google

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top