কোকিল । Asian koel (Eudynamys scolopacea)

কোকিল
 কোকিল । Asian koel  (Eudynamys scolopacea)

তাল-লয়-ছন্দে ডাকতে পারে পুরুষ কোকিলই- মেয়েটি তা পারে না। উৎসাহী শিশু-কিশােরেরা বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম ও শহরে কোকিল দেখতে পারে, কান পেতে শুনতে পারে ওদের মধুর ডাক। ঢাকা শহরেও অনেক কোকিল আছে। কোকিল সুন্দর পাখি। রাতদুপুরেও শােনা যেতে পারে ওদের ডাকাডাকি। রাতদুপুরে ডাকে কেন? ডাকার তিনটি কারণের ভেতর একটা হচ্ছে ভয় পাওয়া।

 কোকিল । Asian koel  (Eudynamys scolopacea)

শঙ্খচিলটির কোনাে দোষ ছিল না। ও বসেছিল শিমুল গাছের মাথায়। আচমকা চৈতি-পাগলা হাওয়া এল, সে হাওয়ার দাপটে ওকে উড়তেই হল। পাখা মেলতেই ও পড়ে গেল বেকায়দায়।বাতাস চাইল ওকে ইচ্ছেমতন ঠেলে ঠেলে নিয়ে যেতে। শঙ্খচিল পাক খেয়ে, ঘূর্ণি হাওয়ার পাক কাটিয়ে গিয়ে বসার ইচ্ছা ওর পাশের চালতা গাছে।

Advertisements

কিন্তু চালতা গাছটায় বসার আগেই ‘পিক পিক’ ভয়ার্ত ডাক ছেড়ে ছিটকে উঠল একটি মেয়ে কোকিল। বাগানের ভেতর দিয়ে দ্রুত উড়ে গিয়ে বসল একটি জামরুল গাছে।

পুরুষ কোকিলটাও কোখেকে উড়ে এল ওই ‘পিক পিক’ ডাক ছেড়েই, বসল বউয়ের পাশে। মেয়েপাখিটি জামরুলের ডালে বসেই একটা ডিম ছেড়ে দিল- মাটিতে পড়েই টপাস করে ভেঙে গেল ওটা।

একজোড়া বেজি কাছাকাছিই ছিল- ছুটে এল। ভাঙা ডিমের কুসুম চাটতে চাটতে ওরা ওপরের দিকে তাকাল- যদি পাখিটা আরাে ডিম ছাড়ে।


আর মেয়ে কোকিলটি তখন অসহায় চোখে দেখছে নিজের ডিমের করুণ পরিণতি। পুরুষটি যেন ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। মেয়ে কোকিলের কি মন মানে তাতে?

Advertisements

সে তাে ডিম এভাবে ছাড়তে চায়নি। সে তাে ডিম পাড়ার জন্য গােপনে গিয়ে বসেছিল কুকোর (Crow pheasant) বাসায়। দু’দিন আগে যে বাসাটি তছনছ হয়েছিল প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ে, বাসার ওপরের দিকটা গিয়েছিল একেবারেই  আলগা হয়ে।

না হলে ওই বাসায় চুরি করে ডিম পাড়ার সুযােগটা আসত না- কুকোর বাসায় বসে কোকিলের ডিম পাড়ার সাহস যেমন হত না, তেমনি বসতেও পারত না।

স্বামী-বউ মিলে আজ কত না ফন্দি-ফিকির করে, কুকো দম্পতিকে দূরে সরিয়ে দিতে পেরেছিল। ওই সুযােগে মেয়ে কোকিল ওই বাসায় বসেও গিয়েছিল, আর একটু সময় পেলে একটা ডিম অন্তত ছাড়তে পারত।

কিন্তু যত নষ্টের মূল ওই শঙ্খচিলটা। ও ব্যাটা আসাতেই না ঘাবড়ে গেছে মেয়ে কোকিল। ক্ষিপ্ত কোকিলা এবার ছো মারার ভঙ্গিতে নেমে পড়ল বেজি দু’টির মাথার ওপরে।

তারপর ধেয়ে গেল চিলটির দিকে। পুরুষ কোকিলও তাই করল। বেচারা শঙ্খচিল! সে বুঝতেই পারছে না- কী দোষ তার! এই হচ্ছে কোকিল। যে বাসা করে না, কৌশলে বুদ্ধি খাটিয়ে ডিম পাড়ে কাক, ছাতারে ও হাঁড়িচাচা সহ অন্যান্য পাখির বাসায়। এই তিনিটি পাখির বাসাই প্রথম নির্বাচন। তারপরের পছন্দ হচ্ছে, কসাই ও বুলবুলির বাসা। কোনােটাই না পেলে তখন খোজে অন্য পাখির বাসা।

কুকোর বাসায় ডিম পাড়াটা ব্যতিক্রমী ঘটনা। কসাইয়ের বাসায় কোকিলকে ডিম দিতে আমি ১৯ বার দেখেছি। সর্বশেষ দেখেছিলাম ১৯৯৬-এর এপ্রিলে জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটি ক্যাম্পাসে।

ওই বাসা ও কোকিলের বাচ্চাকে আমরা পরপর কিছুদিন পর্যবেক্ষণও করেছিলাম। কোকিলরা প্রথমে বাসা নির্বাচন করে, একাধিক বাসা।

কোকিলের পরিচিতি । Introduction of Cuckoo/ Asian Koel

পুরুষটি ‘কুউউ কুউউ’ ডাক ছেড়ে বাসার মালিককে ক্ষেপিয়ে তােলে। ওরাও ভালাে করেই জানে কোকিলের মতলব। ধাওয়া করে। ওই সুযােগে মেয়ে কোকিল ওই বাসায় গিয়ে ডিম পাড়ে। কোকিলেরা ডিম পাড়ে ৪-৬টা। এক বাসায় দু’টির বেশি ডিম পাড়ে না।

অবশ্যই ওই বাসার দু’টি ডিম ফেলে দেয় আগে। ওরা অংকটা ভালােই জানে। এই যে ৪ থেকে ৬টা ডিম, মেয়ে কোকিল তা একাধিক বাসায় ৪৮-৫০ ঘন্টার ভেতরে ছাড়ে। সময় পার হয়ে গেলে, অর্থাৎ ডিম কোনাে বাসায় ছাড়তে না পারলে, ডিম ছেড়ে দেয় গাছের ডালে বসে- যা মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়।

Advertisements

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top