ফল আর্মিওয়ার্ম বা সাধারণ কাটুই পােকা যার বৈজ্ঞানিক নাম Spodoptera frugiperda, পৃথিবীব্যাপি একটি মারাত্বক ক্ষতিকারক এবং বিধ্বংসী পােকা হিসাবে পরিচিত। ফল আর্মিওয়ার্ম পােকাটি মূলত: আমেরিকা মহাদেশের একটি মারাত্বক ক্ষতিকারক পােকা।
কিভাবে বিধ্বংসী পােকা ফল আর্মিওয়ার্মের আক্রমণ মোকাবিলা করবেন ?
২০১৬ সালে ফল আর্মিওয়ার্ম বা সাধারণ কাটুই পােকা প্রথম আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আক্রমণ করে এবং ২০১৭ সালে বেশ কয়েকটি দেশে ব্যাপক ফসলহানি করে, ফলে দূর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়। প্রাপ্ত তথ্যমতে সম্প্রতি ভারতের কর্নাটক এবং তামিলনাড়ু রাজ্যে এ পােকার আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়েছে, যা পাশ্ববর্তী রাজ্যসমূহে ছড়িয়ে পড়ছে।
ফল আর্মিওয়ার্মের ক্ষতির ধরণঃ
- এটি ভুট্টা, তুলা, বাদাম, তামাক, ধান, বিভিন্ন ধরনের ফলসহ প্রায় ৮০টি ফসলে আক্রমণ করে থাকে। তবে ভুট্টা ফসলে এর আক্রমণের হার সর্বাধিক।
- পােকাটি কীড়া অবস্থায় গাছের পাতা ও ফল খেয়ে থাকে।
- কীড়ার প্রাথমিক অবস্থায় এদের খাদ্য চাহিদা অনেক কম থাকে, তবে শেষ ধাপ সমূহে খাদ্য চাহিদা প্রায় ৫০ গুণ বৃদ্ধি পায়।
- সে কারণে কীড়ার ৪-৫ ধাপসমূহ অর্থাৎ কীড়া পূর্ণাঙ্গ হওয়ার আগে রাক্ষুসে হয়ে উঠে এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। এমনকি এক রাত্রের মধ্যে এরা সমস্ত ফসল বিনষ্ট করে ফেলতে পারে।
ফল আর্মিওয়ার্ম পােকার বিস্তার লাভ
- পােকাটি সংগনিরােধ বালাই হিসাবে পরিচিত এবং ডিম ও পুত্তুলি অবস্থায় বিভিন্ন উদ্ভিদজাত উপাদান যেমন: চারা, কলম, কন্দ, চারা সংলগ্ন মাটি ইত্যাদির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করতে পারে।
- পূর্ণাঙ্গ পােকা অনেক দূর পর্যন্ত উড়তে পারে এমনকি ঝড়াে বাতাসের সাথে কয়েক শত কিলােমিটার পর্যন্ত বিস্তার লাভ করতে পারে ।
বর্তমানে করনীয়
- বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এ পােকার আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়নি তবে যেহেতু পার্শ্ববর্তী দেশে এর আক্রমণ শুরু হয়েছে সুতরাং যে কোন সময় পােকাটি এদেশে অনুপ্রবেশ করতে পারে ।
- প্রাথমিক আক্রমণ অবস্থায় পােকাটির অবস্থান সনাক্ত করা না গেলে দেশে ব্যাপক ফসলহানি বিশেষত: সম্ভাবনাময় ভুট্টা ফসলের মারাত্বক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
- সেহেতু পােকাটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা এবং সরাসরি পােকা খাওয়ার লক্ষণ দেখে বা কীড়া সনাক্ত করে এ পােকার আক্রমণ চিহ্নিত করা অত্যন্ত জরুরী।
- সেক্স ফেরােমন ফাঁদ ব্যবহার করে ফল আর্মিওয়ার্ম পােকার আক্রমণ পর্যবেক্ষণ করা যায় ।
- কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উদ্ভিদ সংগনিরােধ উইং কর্তৃক আমদানীকৃত বিভিন্ন উদ্ভিদজাত উপাদানে পােকাটির বিভিন্ন পর্যায়ের উপস্থিতি পরীক্ষা করা এবং উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং কর্তৃক মাঠ পর্যায়ে ফেরােমন ফাঁদের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়ােজন।
- ফল আর্মিওয়ার্মের ফেরােমন ফাদে পােকা পাওয়া গেলে বা লক্ষণ মােতাবেক কোনাে ফসলে বিশেষতঃ ভুট্টায় পােকার আক্রমণ দেখা গেলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বা বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটকে জরুরী ভিত্তিতে অবহিত করতে হবে ।
প্রয়ােজনে নিম্নোক্ত সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা গ্রহন করতে হবে
- আক্রান্ত গাছ হতে ডিম বা দলাবদ্ধ কীড়া চিহ্নিত করে পিষে মেরে ফেলতে হবে বা মাটির নীচে কমপক্ষে একফুট পরিমান গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে।
- প্রাথমিক আক্রমণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে ফল আর্মিওয়ার্মের ফেরােমন ফাঁদ (বিঘা প্রতি ৫টি হারে) জমিতে স্থাপন করতে হবে ।
- এছাড়া প্রাথমিক আক্রমণের সাথে সাথে জৈব বালাইনাশক এসএনপিভি (প্রতি লিটার পানিতে ০.২ গ্রাম হিসাবে মিশিয়ে) ১০ দিন পর পর ২-৩ বার জমিতে প্রয়ােগ করতে হবে ।
- রাসায়নিক কীটনাশক এ পােকা দমনে সেরূপ কার্যকরী নয় বিধায় তা প্রয়ােগ না করাই উত্তম।
- সম্ভব হলে উপকারী পােকা ব্রাকন হেবিটর আক্রান্ত এলাকায় অবমুক্ত করা যেতে পারে (হেক্টর প্রতি ৮০০-১২০০ পােকা)।
Conclusion:
কীটতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় ফেরােমন ফাঁদ ব্যবহার করে সার্বক্ষণিকভাবে ফল আর্মিওয়ার্ম বা সাধারণ কাটুই পােকার আক্রমণ পর্যবেক্ষণ করছে এবং পর্যবেক্ষণের জন্য প্রয়ােজনীয় উপকরণসহ কারিগরি সহযােগিতা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
উপরােক্ত লক্ষণ মােতাবেক কোথাও কোনাে ফসলে বিশেষত: ভুট্টা ফসলে পােকার আক্রমণ দেখা গেলে বিএআরআই এর নিম্মলিখিত টেলিফোন বা ফ্যাক্স নম্বরে যােগাযােগ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরােধ জানানাে যাচ্ছে।
টেলিফোন নং: ০২ ৪৯২৭০১২৪, ৪৯২৭০০০১, পিএবিএক্স: ৪৯২৭০০৪১-৮, ফ্যাক্স: ৮৮-০২ ৪৯২৭০২০১
Last line: কিভাবে বিধ্বংসী পােকা ফল আর্মিওয়ার্মের আক্রমণ মোকাবিলা করবেন ? How to defeat with armyworm ?