এমআরআই (MRI: Magnetic Resonance Imaging)

চৌম্বকীয় অনুরণন প্রতিচ্ছবি বা এমআরআই (MRI: Magnetic Resonance Imaging) হল রঞ্জনবিদ্যায় ব্যবহৃত দেহের শারীরস্থান এবং শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলির ছবি তৈরি করতে চিকিৎসা প্রতিবিম্বন কৌশল।

এমআরআই (MRI: Magnetic Resonance Imaging)

এমআরআই (MRI: Magnetic Resonance Imaging)
এমআরআই (MRI: Magnetic Resonance Imaging)

মানুষের শরীরের প্রায় সত্তরভাগ পানি, যার অর্থ মানুষের শরীরের প্রায় সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গে পানি থাকে। পানির প্রতিটি অণুতে থাকে হাইড্রোজেন এবং হাইড্রোজনের নিউক্লিয়াস হচ্ছে প্রোটন। 


শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র প্রয়োগ করলে প্রোটনগুলো চৌম্বকক্ষেত্রের দিকে সারিবদ্ধ হয়ে যায়, তখন নির্দিষ্ট একটি কম্পনের বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ পাঠানো হলে এই প্রোটনগুলো সেই তরঙ্গ থেকে শক্তি গ্রহণ করে তাদের দিক পরিবর্তন করে এবং এই প্রক্রিয়াটিকে বলে নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স। 

পদার্থবিজ্ঞানের এই চমকপ্রদ ঘটনাটির উপর ভিত্তি করে ম্যাগনেটিক রেজোরেন্স ইমেজিং বা এমআরআই তৈরি করা হয়েছে ।

এমআরআই যন্ত্রটি দেখতে সিটিস্ক্র্যান যন্ত্রের মতো কিন্তু এর কার্যপ্রণালি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সিটিস্ক্যান যন্ত্রে এক্স-রে পাঠিয়ে প্রতিচ্ছবি দেওয়া হয়, এমআরআই যন্ত্রে একজন রোগীকে অনেক শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্রে রেখে তার শরীরে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ দেওয়া হয়। 

শরীরের পানির অণুর ভেতরকার হাইড্রোজনের প্রোটন থেকে ফিরে আসা সংকেতকে কম্পিউটার দিয়ে বিশ্লেষণ করে শরীরের ভেতরকার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রতিবিম্ব তৈরি করা হয়।



সিটিস্ক্যান দিয়ে যা কিছু করা সম্ভব, এমআরআই দিয়েও সেুগলো করা সম্ভব। তবে এমআরআই দিয়ে শরীরের ভেতরকার কোমল টিস্যুর ভেতরকার পার্থক্যগুলো ভালো করে বোঝা সম্ভব। 
সিটিস্ক্যান করতে পাঁচ থেকে দশ মিনিটের বেশি সময়ের দরকার হয় না, সেই তুলনায় এমআরআই করতে একটু বেশি সময় নেয়। সিটিস্ক্যানে এক্স-রে ব্যবহার করা হয় বলে যত কমই হোক তেজস্ক্রিয়তার একটু ঝুঁকি থাকে এমআরআইয়ে সেই ঝুঁকি নেই ।

শরীরে ভেতরে কোনো ধাতব কিছু থাকলে (যেমন: পেস মেকার) এমআরআই করা যায় না, কারণ আর এফ (RF) তরঙ্গ ধাতুকে উত্তপ্ত করে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।


এমআরআই কিভাবে কাজ করে ?

বেশিরভাগ চিকিৎসাগত প্রয়োগে, কলাতে অবস্থিত হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস, যেটি একটি প্রোটন নিয়ে গঠিত, একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সেই নিউক্লিয়াসগুলির ঘনত্ব অনুযায়ী, একটি সংকেত তৈরি করে। সেই সংকেত কিছু প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গিয়ে শরীরের একটি চিত্র গঠন করে। 


যেহেতু প্রোটনগুলি বন্ধনীস্থ অন্যান্য পরমাণুর ক্ষেত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়, নির্দিষ্ট যৌগগুলিতে হাইড্রোজেনের প্রতিক্রিয়া পৃথক করা সম্ভব। কোন পর্যবেক্ষণ করার জন্য, সেই ব্যক্তিকে এমন এক এমআরআই স্ক্যানারের মধ্যে অবস্থান করতে হয়, যেটি প্রতিচ্ছবি নেওয়ার অঞ্চলের আশেপাশে একটি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র গঠন করে। 

প্রথমে,রোগীর জন্য স্পন্দনশীল চৌম্বক ক্ষেত্র থেকে যথাযথ অনুরণন কম্পাঙ্কে সাময়িকভাবে শক্তি প্রয়োগ করা হয়। এক্স এবং ওয়াই নতিমাত্রার কুণ্ডলীগুলি দিয়ে স্ক্যান করলে রোগী নিজের শরীরের একটি নির্বাচিত অঞ্চলে একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের বল অনুভব করে, এই ক্ষেত্রের মান ততটাই থাকে যতটা প্রয়োজন ঐ অঞ্চলের শক্তি শোষণের জন্য। 

উত্তেজিত পরমাণুগুলি একটি রেডিও কম্পাঙ্ক (আরএফ) সংকেত নির্গত করে, সেই সঙ্কেত একটি গ্রহণ কুণ্ডলী গ্রহণ করে পরিমাপ করে। সেই সঙ্কেত কিছু প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গেলে স্থানগত তথ্য নিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হত্তয়া যায়। 
নতিমাত্রা কুণ্ডলী ব্যবহার করে স্থানীয় চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তনের কারণে আরএফ স্তর এবং পর্যায়ের পরিবর্তনগুলি দেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একটি চলন্ত রেখা স্ক্যান করার সময়, উত্তেজনা এবং প্রতিক্রিয়া চলাকালীন, এই কুণ্ডলীগুলির মধ্যে দ্রুত দশান্তর ঘটে। 

এই সময় চৌম্বকীয় আকার পরিবর্তন বৈশিষ্ট্যের ফলে কুণ্ডলীগুলি সামান্য সরে গিয়ে এমআরআই স্ক্যানের বৈশিষ্ট্যযুক্ত পুনরাবৃত্ত শব্দের সৃষ্টি করে। উত্তেজিত পরমাণুগুলি যে হারে সাম্য অবস্থায় ফিরে আসে, বিভিন্ন কলাগুলির মধ্যে বৈপরীত্য সেই হার দ্বারা নির্ধারিত হয়। 

প্রতিচ্ছবিটি পরিষ্কার করার জন্য সেই ব্যক্তিকে বাইরের থেকে আলাদা করে বৈপরীত্য বিকারক দেওয়া যেতে পারে

এমআরআই স্ক্যানারের প্রধান উপাদানগুলি হল প্রধান চুম্বক, শিম কুণ্ডলী, নতি পদ্ধতি এবং আরএফ প্রণালী। এর মধ্যে প্রধান চুম্বক নমুনার মেরুকরণ করে, শিম কুণ্ডলী দ্বারা মূল চৌম্বক ক্ষেত্রের সমসত্ত্বতার পরিবর্তন সংশোধন করা হয়, স্ক্যান করার অঞ্চলটির স্থানীয়করণ করতে নতি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় এবং আরএফ প্রণালী নমুনাকে উদ্দীপ্ত করে এবং উদ্ভূত এনএমআর সংকেতকে শনাক্ত করে। 



পুরো প্রণালীটি এক বা একাধিক কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

Conclusion:

১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর দশকে এর বিকাশ থেকে শুরু করে, এমআরআই একটি বহুমুখী প্রতিচ্ছবিকরণ প্রযুক্তি হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। যদিও এমআরআই সর্বাধিক সুস্পষ্টভাবে রোগ নির্ণয় এবং জৈবচিকিৎসার গবেষণায় ব্যবহৃত হয়, এটি অজৈব বস্তুর প্রতিচ্ছবি তৈরি করতেও ব্যবহৃত হতে পারে। 

এমআরআই স্ক্যানগুলি বিস্তারিত স্থানিক চিত্র ছাড়াও, বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক এবং ভৌত তথ্য তৈরি করতে সক্ষম। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এমআরআই-এর চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে এর ব্যয় কার্যকারিতা এবং অযৌক্তিক রোগ নির্ণয় সম্পর্কে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে ।

এমআরআই (MRI: Magnetic Resonance Imaging)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top