এন্ডোস্কোপি কেন করা হয় এ বিষয়ে জানতে হলে আমাদের প্রথমে এন্ডোস্কোপি সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন।
এন্ডোস্কোপি আসলে কি?
এন্ডোস্কোপি এক ধরনের পরীক্ষা যার দ্বারা কোন প্রকার কাটা ছেড়া করা ছাড়াই শরীরের অভ্যন্তরের পরিষ্কার ছবি দেখা সম্ভব। ১৮৫৫ সালে এটি সর্বপ্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে শরীরের উপর প্রয়োগ করা হয়। কোন প্রকার কাটাছেঁড়া, রক্তপাত ছাড়াই সম্ভব হওয়ার কারণে এন্ডোস্কোপি এখন চিকিৎসক মহলে বহুল সমাদৃত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। এন্ডোস্কোপি কয়েক প্রকারের কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে যেমন: রোগ নির্ণয়ের কাজে, চিকিৎসা করার কাজে এমনকি ক্যান্সার সন্দেহে শরিরের অভ্যন্তরের টিস্যু নিয়ে বায়োপসি করার কাজে। এন্ডোস্কোপি একটি সহজ পরীক্ষামূলক পদ্ধতি যা করা হয় এন্ডোস্কোপ নামক একটি যন্ত্রের সাহায্যে এর একটি নমনীয় নল বিদ্যমান যেটি কোন ছিদ্র দিয়ে শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করানো হয়।
এন্ডোস্কোপি কেন করা হয়?
এন্ডোস্কোপি মূলত রোগ নির্ণয়ের কাজেই বেশী ব্যাবহৃত হয়।
যেমন: গলা, বুক জ্বালাপোড়া, পেট ব্যাথা, বমি, বমির সাথে রক্ত আসা এসব রোগের কারণ উদঘাটন করতে এন্ডোস্কোপি করা হয়। পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্র, খাদ্যনালীর আলসার, গ্যাস্ট্রোইনটেরাইটিস নামক রোগ নির্ণয় করতেও এন্ডোস্কোপির প্রয়োজন। শুধূ পাকস্থলীরই নয় মূত্রনালী, রেকটাম, পায়ুপথএর রোগ নির্ণয় করতেও এন্ডোস্কোপি একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। তবে একেকজায়গায় একেকনামে এন্ডোস্কোপি করা হয় যেমন: ক্ষুদ্রান্ত্রের এন্ডোস্কোপিকে বলা হয় এন্টেরোস্কপি, বৃহদন্ত্র এর এন্ডোস্কোপিকে বলা হয়z কলোনস্কপি তেমনভাবে স্বাসনালির ক্ষেত্রে রাইনোস্কপি, ব্রঙ্কোস্কপি, কানের ক্ষেত্রে অটোস্কপি, মুত্রনালির ক্ষেত্রে সিস্টোস্কপি, জননতন্ত্রের ক্ষেত্রে কল্পস্কোপি।
সরাসরি রোগ নির্ণয় ছাড়াও এন্ডোস্কোপির সাহায্যে শরিরের অভ্যন্তরের কোষ কেটে নিয়ে বায়োপসি করার কাজে পাঠানো হয়। যার দ্বারা ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
শুধূ রোগ নির্ণয়েই নয় অপারেশন এর কাজেও এন্ডোস্কোপির বহুল ব্যবহার রয়েছে। পেটে, জননতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যায় ছোট ছিদ্র করে তার মধ্য দিয়ে এন্ডোস্কোপ এর নল ঢুকিয়ে খুব অল্প রক্তপাতের মাধ্যমে অপারেশন সম্পন্ন করা হয়। আবার শরীরের অভ্যন্তরের রক্তপাত বন্ধেও এন্ডোস্কোপ এর সাহায্যে ইলেকট্রোকটারি চিকিৎসা করা হয়।
ক্যাপসুল এন্ডোস্কোপি কি?
ক্যাপসুল এন্ডোস্কোপি হলো এন্ডোস্কোপির একটি আধুনিক প্রযুক্তি। এতে মাইক্রো সাইজ এর একটি ওয়্যারলেস ক্যামেরা, ক্যাপসুল এর মধ্যে দিয়ে রোগীকে খেতে দেওয়া হয় এবং এর সাহায্যে দেহের অভ্যন্তরে অনেক সূক্ষ্ম নালীর ও পরিষ্কার ছবি পাওয়া সম্ভব। এই পদ্ধতিটি ১৯৯০ সালের মাঝামাঝির দিকে শুরু হয়।
এন্ডোস্কোপি কিভাবে করা হয়?
এন্ডোস্কোপি করার পূর্ব প্রস্তুতি:
যদি খাদ্যনালীর এন্ডোস্কোপি করা হয় তাহলে ডক্টর এর নির্দেশ অনুযায়ী ৬ ঘণ্টা আগে থেকে শক্ত খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এবং পরীক্ষা করার আগ পর্যন্ত শুধূ পানি পান করার অনুমতি দেওয়া হয় রোগীকে। যাতে এন্ডোস্কোপি করে খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর অভ্যন্তরের পরিষ্কার ছবি দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়া বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ এর এন্ডোস্কোপি করার জন্য ডক্টর এর পরামর্শ মত ল্যাক্সেটিভ জাতীয় ওষুধ খেতে হয়। তবে পরীক্ষার খুব বেশি আগে থেকে হসপিটাল এ অবস্থান করার প্রয়োজন নেই। মাত্র ৩০ মিনিট থেকে ১ঘণ্টার মধ্যে এন্ডোস্কোপি সম্পন্ন হয়ে যায়।
এন্ডোস্কোপি করার প্রক্রিয়া:
এন্ডোস্কোপি একটি সহজ পরীক্ষামূলক ব্যাবস্থা। এন্ডোস্কোপ নামক একটি যন্ত্রের নমনীয় নল এর মাথায় ক্যামেরা লাগানো থাকে যা মুখের মধ্য দিয়ে পাকস্থলী বা ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করানো হয়। প্রবেশ করানোর পূর্বে নলে এক ধরণের ব্যাথানাশক ও পিচ্ছিলকারক জেল জাতীয় পদার্থ লাগানো হয়। মুখের মধ্যে একটা মাউথ গ্যাগ লাগানো হয় যাতে দাত দিয়ে নলের কোন ক্ষতি না হয়। এরপর খুব সন্তর্পনে নল পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে আশেপাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা ক্যামেরার সাহায্যে।
এন্ডোস্কোপি করার ফলে কি কোন ধরণের সমস্যা হয়?
না, কোন ধরনের সমস্যা হয় না। এটি খুব ই নিরাপদ পদ্ধতি। এন্ডোস্কোপি করার পর পরেই আপনি বাড়ী চলে যেতে পারবেন। হসপিটালে অবস্থান করার মতো কোন সমস্যা হবে না। তবে সামান্য অস্বস্থি ভাব ও বমি বমি ভাব হতে পারে।