একজন সফল উদ্যোক্তার কি কি গুনাবলি থাকে ? (What are the qualities of a successful entrepreneur?)

ব্যবসায় উদ্যোগের বৈশিষ্ট্য আলােচনা থেকে উদ্যোক্তার গুণাবলি সম্পর্কে বেশ ধারণা লাভ করা যায়। অনেকে মনে করেন উদ্যোক্তাগণ জন্মগতভাবেই উদ্যোক্তা। অর্থাৎ জন্মসূত্রেই তিনি বহু ব্যক্তিগত গুণের অধিকারী হন যা তাকে উদ্যোক্তা হিসেবে খ্যাতি লাভ করতে সহায়তা করে। বর্তমান সময়ে অবশ্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং সুযােগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা যায়।

একজন সফল উদ্যোক্তার কি কি গুনাবলি থাকে ? (What are the qualities of a successful entrepreneur?)

Advertisements

একজন উদ্যোক্তার প্রধান প্রধান গুণসমূহ হলাে

  • আত্মবিশ্বাস
  • স্বাধীনচেতা মনােভাব
  • উদ্যম 
  • সাংগঠনিক ক্ষমতা
  • সাহস
  • অধ্যবসায়
  • সংবেদনশীলতা
  • একাগ্রতা ও নমনীয়তা 
  • সৃজনশীলতা 
  • উদ্ভাবনী শক্তি
  • কঠোর পরিশ্রম করার ক্ষমতা 
  • ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা 
  • নেতৃত্বদানের যােগ্যতা 
  • পুঁজি সংগ্রহের ক্ষমতা 
  •  কৃতিত্ব অর্জনের আকাঙ্ক্ষা 
  • চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মানসিকতা 
  • ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্রহণের মানসিকতা

সফল উদ্যোক্তাগণ দেশে বিরাজমান অর্থনৈতিক সুযােগ-সুবিধাগুলাে চিহ্নিত করে তা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে সক্ষম। শিল্প উন্নয়নের জন্য সরকার প্রদত্ত সুযােগের ব্যবহারে তারা দক্ষতার পরিচয় দেন। তারা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানাের জন্য সীমিত সম্পদের মধ্যে পরিকল্পনা তৈরি করেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য যথােপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।


সফল উদ্যোক্তাগণ বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে বাধাগুলাে আগে থেকে অনুমান করেন এবং সেগুলাে মােকাবেলার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপখাইয়ে চলা এবং অন্যের উপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা সফল উদ্যোক্তার বিশেষ গুণ বলে বিবেচিত হয়।

Advertisements


তারা ব্যবসায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি বিচক্ষণতার সাথে নিরূপণ করেন এবং তা এড়ানাে বা কমানাের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। পরিমিত পরিমাণ ঝুঁকি গ্রহণ সফল উদ্যোক্তার একটি বড় বৈশিষ্ট্য।


প্রয়ােজনবােধে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে চলা এবং লক্ষ্য অর্জনে সমন্বয় সাধন উদ্যোক্তার বড় আরেকটি গুণ। ব্যবসায় থেকে প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জনের অনিশ্চয়তাকেই ব্যবসায়ের ঝুঁকি হিসেবে গণ্য করা হয়।


একজন সফল উদ্যোক্তা পূর্বেই ঝুঁকির সম্ভাব্য কারণ ও মাত্রা অনুমান করেন এবং সেগুলাে মােকাবেলা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। সফল উদ্যোক্তা গতিশীল নেতৃত্ব দানের অধিকারী হয়ে থাকেন। সফল উদ্যোক্তা পুঁজি সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থসংস্থান ও তার যথােপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করেন।


তিনি প্রতিষ্ঠানের বস্তুগত ও জনসম্পদের পূর্ণ ব্যবহার করতে দক্ষতার পরিচয় দেন। ব্যবস্থাপনার কৌশল সম্পর্কে সফল উদ্যোক্তা গভীর জ্ঞান রাখেন। প্রচলিত প্রযুক্তির সাথে নতুন প্রযুক্তির সমন্বয় সাধন করা সম্পর্কে সফল উদ্যোক্তার ধারণা সময়ােপযােগী।


উদ্ভাবনী শক্তির বলে তারা উৎপাদন প্রক্রিয়ার নতুন উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ এবং তা ব্যবহার করেন। তারা শিল্প উদ্যোগের নব নব দিগন্ত উন্মােচন করেন। উদ্যোক্তা চ্যালেঞ্জমূলক কাজ করতে বিশেষ আনন্দ পান।


ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনে নিরলস শ্রম দেন এবং ব্যক্তিগত আরাম-আয়েশ ও ভােগ-বিলাস পরিহার করেন। তিনি নিজের ক্ষমতা ও সিদ্ধান্তের প্রতি এত আস্থাশীল যে, নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য অবিরাম কাজ করেন এবং ফলাফল অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত কাজে নিয়ােজিত থাকেন।

উদ্যোগ ও ব্যবসায় উদ্যোগ (Entrepreneurship and Business Entrepreneurship)

কোনাে কারণে প্রথম বার ব্যর্থ হলে উদ্যেক্তা ব্যর্থতার কারণ খুঁজে দ্বিতীয় বার নতুন উদ্দ্যোমে কাজ শুরু করেন। কাজে সাফল্য অর্জন করতেই হবে, তীব্র এই আকাঙ্ক্ষা তাদের চরিত্রের একটি উল্লেখযােগ্য দিক। প্রকৃত উদ্যোক্তারা নিজেদের ভুল অকপটে স্বীকার করে ভুল সুধরে নেন এবং ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন।


নিজের অভিজ্ঞতা ও অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং নিজের কর্মক্ষেত্রে সেই শিক্ষার প্রয়ােগ উদ্যোক্তার একটি বিশেষ গুণ। সফল উদ্যোক্তা তাদের কাজের সাফল্যে পরিতৃপ্তি ও অসীম আনন্দ পান।


আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যবসায় উদ্যোগের গুরুত্ব (Importance of Business Entrepreneurship in Socio-Economic Development)

বাংলাদেশ একটি উন্নয়শীল দেশ। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১০ অনুযায়ী আমাদের মােট জাতীয় উৎপাদনের প্রায় ৫০ ভাগ আসে সেবা খাত থেকে, প্রায় ২০ ভাগ আসে কৃষি খাত থেকে আর বাকি ৩০ ভাগ আসে শিল্প খাত থেকে।


যে কোনাে দেশের উন্নয়নে শিল্পখাত মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে শিল্পখাতসহ সকল খাতেরই উন্নয়ন সম্ভব। ব্যবসায় উদ্যোগ নিম্নোক্তভাবে আমাদের দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে :


সম্পদের সঠিক ব্যবহার : Proper use of resources

ব্যবসায় উদ্যোগ আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানব সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার বরাবরই নিশ্চিত করে আসছে। তাছাড়া নতুন নতুন শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে বিনিয়ােগ বৃদ্ধিসহ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব।


জাতীয় উৎপাদন ও আয় বৃদ্ধি ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়। ফলে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত জাতীয় আয় বৃদ্ধির লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়।


নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি : Creating new jobs

সরকারের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমেও দেশে শিল্প কারখানা স্থাপন, পরিচালনা ও সম্প্রসারণ হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে নিত্যনতুন কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি হয় যা বেকার সমস্যা দূর করতে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা রাখে।


দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি : Creation of skilled human resources

বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। আমাদের এই বিশাল জনসংখ্যাই আমাদের সম্পদ হতে পারে। কারণ ব্যবসায় উদ্যোক্তা দেশের অদক্ষ জনগােষ্ঠীকে উৎপাদনশীল কাজে নিয়ােজিত করে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করতে পারে।


পরনির্ভরশীলতা দূরীকরণ : Elimination of dependency

ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা আমাদের পরনির্ভরশীলতা অনেকাংশে হ্রাস করতে পারি। ব্যবসায় উদ্যোগের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা একদিন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারব।



ব্যবসায় উদ্যোগ গড়ে উঠার অনুকূল পরিবেশ (Favorable Environment for Developing Business Entrepreneurship)

আমরা যদি উন্নত বিশ্বের দিকে লক্ষ করি তাহলে দেখতে পাই যে, তাদের অগ্রগতি এবং সফলতার একটি প্রধান কারণ হলাে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ, সঠিক উদ্যোগ ও সম্প্রসারণের অনুকূল পরিবেশ।


আমাদের দেশে মেধা, মনন ও দক্ষতার খুব বেশি ঘাটতি নেই। শুধুমাত্র অনুকূল পরিবেশের অভাবে আমাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। ব্যবসায় উদ্যোগ গড়ে উঠার জন্য নিম্নোক্ত অনুকূল পরিবেশ থাকা উচিত :


উন্নত অবকাঠামােগত উপাদান : Advanced infrastructural elements

ব্যবসায় পরিচালনার জন্য আনুষঙ্গিক কিছু সুযােগ সুবিধা, যেমন বিদ্যুৎ সংযোগ, গ্যাস লাইন ও যাতায়াত ব্যবস্থা সুন্দর হওয়া দরকার। ব্যবসায়ের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য এই সকল উপাদান থাকা অতীব বাঞ্ছনীয়।


সরকারি পৃষ্ঠাপােষকতা : Government patronage

সরকারি পৃষ্ঠপােষকতার মাধ্যমে দেশের ব্যবসায় উদ্যোগের আরও সম্প্রসারণ ও সমৃদ্ধি সম্ভব। সরকারি বিভিন্ন সিদ্ধান্ত যেমন কর মওকুফ, স্বল্প বা বিনা সুদে মূলধন সরবরাহ ইত্যাদি ব্যবসায় উদ্যোগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে।


Conclusion:

একজন সফল উদ্যেক্তার থাকে হাজারো গুণাবলি, তার থাকে নিজস্ব ব্যক্তিত্ব এবং ব্যক্তিত্ববোধ। তিনি তার গুনাবলি এবং ব্যক্তিত্ববোধ দিয়ে নিজের অধ্যবসায় এবং উন্নতি সাধন করে চলেন।

Last line: একজন সফল উদ্যোক্তার কি কি গুনাবলি থাকে ? (What are the qualities of a successful entrepreneur?)

Advertisements

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top