উদ্যোগ ও ব্যবসায় উদ্যোগ (Entrepreneurship and Business Entrepreneurship)

সকল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবসায় উদ্যোগ ও উদ্যোক্তার অবদান খুবই গুত্বপূর্ণ। আজকের উন্নত দেশগুলাের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়লের ভিত্তি হচ্ছে উদ্যোক্তাদের সক্রিয় ভূমিকা। দেশে প্রাপ্ত সকল সম্পদ ও মানবসম্পদ ব্যবহার করে এবং নিজেদের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে তারা অবদান রেখে চলেছে । বাংলাদেশের মতাে বিশাল জনসংখ্যার দেশে অর্থনৈতিক উলয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও ব্যবসায় উদ্যোগ ও উদ্যোক্তার প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য। এ প্রতিবেদনে আমরা ব্যবসায় উদ্যোগের বিভিন্ন দিক, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ব্যবসায় উদ্যোগের গুরুত্ব এবং উদ্যোগ উন্নয়ন পথে বাধা দূরীকরণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

উদ্যোগ ও ব্যবসায় উদ্যোগ

(Entrepreneurship and Business Entrepreneurship)

Entrepreneurship Entrepreneur

তােমাদের বিদ্যালয়/কলেজে ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস প্রতিবছর কোনাে না কোনাে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করা হয়। এবারের বিজয় দিবস আগত। তােমাদের মধ্য থেকে একজন প্রস্তাব দিল যে, এবার বিজয় দিবসে একটি নাটক মঞ্চস্থ করা যেতে পারে।


সে আরও বলল, নাটক আয়ােজনে সবরকম সহযােগিতা সে করবে। নাটক আয়ােজন একটি কষ্টসাধ্য ও সৃজনশীল কাজ। এ ক্ষেত্রে নাটক নির্বাচন, অভিনেতা ও অভিনেত্রী নির্বাচন, স্থান ও সময় নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয়ে আলােচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলাে।


এই যে তােমাদের ভিতর থেকে একজন শিক্ষার্থী নাটক আয়ােজনে এগিয়ে এলাে, এটি এক ধরনের উদ্যোগ। সাধারণ অর্থে যে কোনাে কাজের কর্মপ্রচেষ্টাই উদ্যোগ। অতএব উদ্যোগ যে কোনাে বিষয়েই হতে পারে।


আরও একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। কোনাে সহৃদয় ব্যক্তি এলাকার ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার সুযােগ সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করতে এগিয়ে আসেন। তিনি নিজের সঞ্চিত অর্থ ও অন্যদের নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহ করে বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন।


এটি তার দৃঢ় মনােবল ও উদ্যোগ গ্রহণের ফসল। এভাবে সকল প্রকার জনহিতকর কাজ যেমন, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল ও খেলাধুলার ক্লাব প্রতিষ্ঠা করাও উদ্যোগের ফসল। যে কোনাে ব্যবসাও কোনাে একজন ব্যক্তি বা কয়েকজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল।


একটি ব্যবসায় স্থাপনের ধারণা চিহ্নিতকরণ থেকে শুরু করে ব্যবসায়টি স্থাপন ও সফলভাবে পরিচালনাই ব্যাবসায় উদ্যোগ। বিশদভাবে বলতে গেলে, ব্যবসায় উদ্যোগ বলতে বোঝায় লাভবান হওয়ার আশায় লােকসানের ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় মনোবল নিয়ে এগিয়ে যাওয়া ও সফলতার সহিত ব্যবসায় পরিচালনা করা।


একজন উদ্যোক্তার কাহিনী : The story of an entrepreneur

জনাব আমিনুল ইসলাম শৈশবকাল থেকেই ভাবতেন নতুন কিছু করার। স্থানীয় কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করে তিনি তার পারিবারিক কাপড়ের ব্যবসায় নিজের মনােনিবেশ করেন। কিন্তু এ ব্যবসায়ে তিনি সন্তুষ্ট থাকতে পারলেন না।


তিনি তার বাড়ির কাছে মহাসড়ক সংলগ্ন বাজারে প্রতিদিন যেতেন। একদিন তিনি উপলব্ধি করলেন যে, বাজারটি মহাসড়কের পাশে হওয়ায় এখানে প্রায়ই যানবাহনগুলাে ছােট-খাটো মেরামতের জন্য যাত্রা বিরতি করে। আমিনুল মেরামতের চাহিদা অনুধাবণ করতে পেরে নিজের জমানাে অর্থ আর কিছু অর্থ ধার করে মূলধন গঠন করে একটি ওয়ার্কশপ স্থাপন করেন।


কিন্তু যানবাহন মেরামত করার দক্ষতা তার না থাকায় স্থানীয় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে এ বিষয়ে তিন মাসের প্রশিক্ষণ নেন। প্রথম দিকে ব্যবসায় থেকে তেমন আয় হয়নি। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম, দক্ষ সেবা ও সততার জন্য ধীরে ধীরে তার ব্যবসায়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে এবং আয়ও বাড়তে থাকে।

ব্যর্থতার কারণ খোঁজা কেন জরুরী ? আমি উদ্যেক্তা হতে চাই (১ম পর্ব) Be an entrepreneur!

এ ব্যবসায় থেকে লাভবান হয়ে এখন তিনি এ ব্যবসায়ের সাথেই একটি পেট্রোল পাম্প স্থাপনের চিন্তা ভাবনা করছেন। জনাব আমিনুল ইসলাম তার ইচ্ছা পূরণের জন্য ঝুঁকি নিয়েছেন এবং দৃঢ় মনােবল নিয়ে পরিশ্রম করেছেন। এই কর্ম প্রচেষ্টাই তার ব্যবসায় উদ্যোগ


উদ্যোক্তা কাকে বলে ? What is an entrepreneur?


ব্যবসায় উদ্যোগ (Entrepreneurship) এবং ব্যবসায় উদ্যোক্তা (Entrepreneur) শব্দ দুটি একটি অন্যটির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যিনি ব্যবসায় উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনিই ব্যবসায় উদ্যোক্তা।


দৃঢ় মনােবল, কঠোর অধ্যবসায় ও কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে ধীরে ধীরে তারা বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন।


উদ্যোগ ও ব্যবসায় উদ্যোগের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Entrepreneurship and Business Entrepreneurship):

উদ্যোগ যে কোনাে বিষয়ের ব্যাপারেই হতে পারে কিন্তু লাভের আশায় ঝুঁকি নিয়ে অর্থ ও শ্রম বিনিয়ােগ করাই হলাে ব্যবসায় উদ্যোগ।


উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মনে কর তুমি বাঁশ ও বেত দিয়ে সুন্দর সুন্দর জিনিস তৈরি করতে পার। এখন নতুন এক ধরনের বেতের চেয়ার দেখে সেটা বানানাের চেষ্টা করলে। এটি তােমার উদ্যোগ।


এখন তুমি যদি অর্থ সংগ্রহ করে বাঁশ ও বেতের সামগ্রী তৈরির দোকান স্থাপন করে সফলভাবে ব্যবসায় পরিচালনা কর, তখন এটি হবে ব্যবসায় উদ্যোগ। ব্যবসায় উদ্যোগের প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন কিন্তু অন্যান্য উদ্যোগের উদ্দেশ্য জনকল্যাণ।


ব্যবসায় উদ্যোগের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Business Entrepreneurship)

Conclusion: 

আজকের উন্নত দেশগুলাের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়লের ভিত্তি হচ্ছে উদ্যোক্তাদের সক্রিয় ভূমিকা। দেশে প্রাপ্ত সকল সম্পদ ও মানবসম্পদ ব্যবহার করে এবং নিজেদের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে তারা অবদান রেখে চলেছে । বাংলাদেশের মতাে বিশাল জনসংখ্যার দেশে অর্থনৈতিক উলয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও ব্যবসায় উদ্যোগ ও উদ্যোক্তার প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য।

Last line: উদ্যোগ ও ব্যবসায় উদ্যোগ (Entrepreneurship and Business Entrepreneurship)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top