ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহের পবিত্রতা এবং বিবাহের উপকারিতা

বিবাহের পবিত্রতা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “বিবাহ ঈমানের অর্ধেক”।


ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহের পবিত্রতা

ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহের পবিত্রতা এবং বিবাহের উপকারিতা
ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহের পবিত্রতা এবং বিবাহের উপকারিতা


বহুসংখ্যক হাদীসের বর্ণনায় বিবাহের দৈহিক ও আত্মিক পবিত্রতার ঘোষনা রয়েছে। উল্লিখিত হাদীস এমন একটি বর্ণনা যা থেকে বিবাহের পবিত্রতা এবং গুরুত্ত্ব সন্দেহাতীতভাবেই প্রমাণিত। 


ইসলামের পবিত্র সংস্কৃতির ফলে মুসলমানদের নিকট বিবাহ সর্বদাই একটি সম্মান ও মর্যাদার বিষয় হিসাবে বিবেচিত। 

অবাধ বস্তুবাদী সংস্কৃতির পরিবর্তে ইসলাম বিবাহ ও তাকওয়ার (আল্লাহ ভক্তি ও আল্লাহ ভীতি এমন ভীতি যা আল্লাহ তায়ালার আদেশ নিষেধের প্রতি আনুগত্য সৃষ্টি করে) মধ্যে প্রগাঢ় গুরুত্ব প্রদান করে। 

বস্তত্মতঃ ইসলাম আমাদেরকে এ শিক্ষাই দেয় যে, বিবাহ তাকওয়ার গুণ ও পরিমাণ বৃদ্ধির অন্যতম শর্ত।

বিবাহ বন্ধনকে দৃঢ়ভাবে তাকওয়া প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যস্থল হিসাবে বিবেচনা করা হয় যেখানে নৈতিক উৎকর্ষতা, আধ্যাত্মিক উন্নতি ও মানবতার পূর্ণতা একটি উচ্চ মাত্রায় অর্জিত হয়। 


প্রাথমিক দিনগুলোতে এটাই ছিল মুসলিম উম্মাহর পরম আশীর্বাদপূর্ণ ও চরম সুখকর অবস্থা, যদিও সময়ের ক্রমবিবর্তনে বৈদেশিক সংস্কৃতি গ্রহণের প্রভাবে বিবাহ বন্ধনের অতিন্দ্রীয় সুমধুর গুণ ও মূল্য চরমভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে।

যে বিবাহ বিচ্ছেদ মুসলিম সমাজে ছিল একটি বিরল ঘটনা, আজ তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া একটি চর্চায় পরিণত হয়েছে। 

মুসলমানগণ ইসলামী সংস্কৃতি তথা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সুন্নতের অনুসরণ যত বেশী ত্যাগ করছে, মুসলিম সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদের মাত্রা তত বেশী বাড়ছে। 

আধুনিকতা, ধর্মীয় শিথিলতা এবং সুন্নত বর্জিত আজকের এই দিনে বহু মুসলিম পরিবার বিচ্ছেদ, বিবাহ বিচ্ছেদ, অতি সাধারণ তুচ্ছ ও বিবাদ, অর্থহীন বিতর্ক, মাতা পিতার নিয়ন্ত্রণহীনতা, অপরাধ প্রবণতা, বৈবাহিক অধিকার ও কর্তব্য পূরণে ব্যর্থতা, দাম্পত্য বিশ্বাসঘাতকতা এবং কষ্ট ও মর্মবেদনার কঠিন বেড়াজালে আষ্টেপৃষ্টে আবদ্ধ।

আরও পড়ুন…

  1. কঠিন অসুখ সারাতে কাঁচা পেঁপে | কাঁচা পেঁপের উপকারিতা
  2. ৫টি জটিল রোগ | জেনে নিন এবং সাবধান হোন আজই
  3. হিটলার ও মুসোলিনির উত্থান এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ


মুসলমানদের গৃহে উদার পশ্চিমা সংস্কৃতি প্রবণতার এ অশুভ অনুপ্রবেশ কোন বিস্ময়ের বিষয় নয়। আসলে মুসলিম পরিবারে একদা যে পবিত্র ও সুখময় পরিবেশ বিরাজিত ছিল তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার স্বাভাবিক অনুগই হলো এ বিষময় পরিণতি। 


পরহেযগারী ও পবিত্রতার জন্য বৈবাহিক বন্ধনের প্রতি প্রাত্যহিক কর্মকান্ডে অতি সামান্যই শ্রদ্ধা আছে যে পশ্চিমা সংস্কৃতির, তার সাথে একীভূত ও আত্মীকৃত হবার ফলেই মুসলমানদের পক্ষে তাদের সুস্থ ও পবিত্র পারিবারিক অবস্থায় ফেরা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

যে অশুভ সংস্কৃতি পশ্চিমা সমাজকে প্রতিনিয়তই আঘাত করে তার অন্তরাত্মাকে কুরে কুরে নির্মূল করছে, দুঃখজনকভাবে তাই আজ মুসলিম সমাজের মধ্যে বহুল পরিমাণে চরম দূর্দশাপূর্ণভাবে অনধিকার প্রবেশ করেছে। 


মুসলিম সমাজের উন্নতি ও অগ্রগতিতে বিবাহের যে তাৎপর্য ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, মুসলমানদের আজ তা জানা একান্ত জরুরী। বিবাহের ইস্পিত ফলাফল সুখ, ভালোবাসা ও পরহেযগারী অর্জন নির্ভর করে সুন্নতের উপদেশাবলী ও সতর্কবাণীর বাস্তবায়নের ওপর। 

বিবাহ সুখদায়ক ও সফল হবে তখনই যখন শুধু ইসলাম নির্দেশিত ও অবলম্বিত পন্থা অনুসরণ করা হয়। 


বিবাহের উপকারিতা

বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন? সহজ সমাধান হচ্ছে বিয়ে করে ফেলুন। শুনতে অদ্ভুত শোনালেও সত্যি যে বিয়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। নারী-পুরুষ উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য বিয়ে করা কল্যাণকর। সুখী দাম্পত্য জীবন মানুষের বিষন্নতা, উদ্বিগ্নতা, বিরক্তি কমিয়ে দেয়। 


আসুন জেনে নেয়া যাক বিয়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো।

১. আয়ু বাড়ে

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে অবিবাহিতদের তুলনায় বিবাহিতরা তুলনামূলক ভাবে বেশি দিন বেঁচে থাকে। বিবাহিতদের বেশিদিন বেঁচে থাকার পেছনে সঠিক কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় নি। তবে ধারণা করা হয়েছে যে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকার কারণে বেশি দিন শরীর সুস্থ থাকে ফলে আয়ু বৃদ্ধি পায়।

২. শরীর সুস্থ্ থাকে

বিবাহিতদের সর্দি, কাশি, ফ্লু, মাইগ্রেন ইত্যাদি অসুখ কম হয়। শুধু তাই নয়; বিবাহিতদের শরীরে ক্যান্সার, হার্টের অসুখ এবং হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে। গবেষকরা ১৭টি দেশের বিবাহিতদের স্বাস্থ্য
অবস্থা, চিকিৎসা নেওয়ার ধরণ ও সুস্থ হওয়ার সময়কালের উপর গবেষণা চালিয়ে এই ফল পেয়েছেন।

বিবাহিতদের সুস্থতার একটি কারণ হতে পারে তাঁরা একে অপরকে খারাপ অভ্যাস যেমন ধূমপান, মদ্যপান ত্যাগ করতে সাহায্য করে এবং ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখে।

৩. মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে

বিবাহিতদের মানসিক অসুস্থতা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। ১৯৯১ সালের আমেরিকার একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে অবিবাহিত বা বিচ্ছেদ হয়েছে এমন মানুষদের চাইতে যারা সুখী দম্পতি তাদের বিষন্নতা বা অন্যান্য মানসিক সমস্যা কম দেখা দেয়। 

বিবাহিত দম্পতিরা বিভিন্ন বিপদে আপদে আলাপ আলোচনা করে সমাধান করে এবং একাকীত্বে ভোগে না। তাই তাদের মানসিক স্বাস্থ্য অবিবাহিতদের তুলনায় ভালো থাকে।

৪. হার্ট ভালো থাকে

ফিনল্যান্ডের তুরকো ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের গবেষকদের হৃদরোগ বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অব প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজি’ প্রকাশ করেছে যে অবিবাহিতদের চেয়ে বিবাহিত ব্যক্তিদের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। এমনকি বিবাহিতদের হার্ট অ্যাটাক হলেও তা অবিবাহিতদের তুলনায় দ্রুত ভালো হয়ে যায়।

৫. অসুস্থতা দ্রুত ভালো হয়ে যায়

গবেষণায় দেখা গেছে যে বিবাহিতরা অসুস্থ হলে বা বড় কোনো অপারেশন হলে অবিবাহিতদের তুলনায় দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। এর পেছনে কারণ হিসেবে ধারণা করা হয়েছে যে বিবাহিত দম্পতিরা একে অপরের অসুস্থতায় সেবা-যত্ন করে এবং সুবিধা অসুবিধার দিকে খেয়াল রাখে। 

তাই বিবাহিতরা যে কোনো অসুস্থতায় অন্যদের তুলনায় দ্রুত সুস্থ হয়। গবেষকদের গবেষণা থেকে নেয়া
জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের কি কি গুণাবলী থাকা আবশ্যক?

যেনে নিন কোরআন থেকে বিবাহের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে পাত্র ও পাত্রী উভয়ের ধার্মিকতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আল্লাহ বলেন, তোমরা মুশরিক মেয়েদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। নিশ্চয়ই একজন ঈমানদার মেয়ে মুশরিক মেয়ের চেয়ে উত্তম। যদিও সে তোমাদেরকে মোহিত করে। তোমরা মুশরিক পুরুষদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। নিশ্চয়ই একজন ঈমানদার পুরুষ মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম। তারা জাহান্নামের দিকে আহবান করে। আর আল্লাহ জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহবান করেন  । – (বাক্বারাহ ২২১)

আপনার প্রিয়জনদের নিকট পৌঁছে দিন ইসলামের শাশ্বত বাণী।হাদীসে আছে তুমি যা জান তা অপরের কাছে পৌছিয়ে দাও ।

Conclusion:

সুতরাং মুসলমানদের উচিৎ তাদের পরিবারে ইসলামী অনুশাসন প্রয়োগ ও চর্চা করা, যাতে করে ঈমানের পূর্ণতার বৃহত্তর উপলদ্ধির জন্য বিবাহবন্ধনের প্রভাব ও ফলাফল পরিলক্ষিত হয়; পবিত্র হাদীসে যেমন বলা হয়েছেঃ “বিবাহ ঈমানের অর্ধেক”।

ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহের পবিত্রতা এবং বিবাহের উপকারিতা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top